জ্ঞানভাপী মসজিদের ওজুখানায় শিবলিঙ্গ থাকার দাবিতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মসজিদ কমিটির অবস্থান জানতে চেয়েছে। বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে, কারণ হিন্দু পক্ষ দাবি করেছে যে ওজুখানায় একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে, যা তারা পূজা করার অধিকার চায়।
সুপ্রিম কোর্টের ২০২৩ সালের রায়
২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট ভারতের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (ASI)-কে জ্ঞানভাপী মসজিদের মূল অংশে, কিন্তু ওজুখানাকে বাদ দিয়ে, সমীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছিল। এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বিতর্কিত জায়গার ইতিহাস এবং ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা।
তবে হিন্দু পুণ্যার্থীরা এবার নতুনভাবে আবেদন জানিয়ে দাবি করেছে যে ওজুখানায় শিবলিঙ্গ থাকার বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত মসজিদ কমিটির বক্তব্য জানতে চেয়েছে।
মসজিদ কমিটির প্রতিক্রিয়া
মসজিদ কমিটি এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে এবং জানিয়েছে যে:
- ওজুখানা ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম প্রার্থনার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- শিবলিঙ্গের দাবি একটি মিথ্যা প্রচার, যা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরির উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
- ASI-এর মাধ্যমে সমীক্ষা চালানো হলে এর উদ্দেশ্য হবে মসজিদের ধর্মীয় পরিচিতি প্রশ্নবিদ্ধ করা, যা প্লেসেস অফ ওয়ারশিপ অ্যাক্ট, ১৯৯১-এর বিরোধী।
কেন বিতর্ক উত্থাপিত?
জ্ঞানভাপী মসজিদ, যা কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের নিকটে অবস্থিত, দীর্ঘদিন ধরেই একটি ধর্মীয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। হিন্দু পক্ষের দাবি, মসজিদের স্থাপনাটি একসময় মন্দির ছিল এবং মসজিদের নির্মাণের সময় মন্দির ভেঙে তা গড়ে তোলা হয়েছিল।
আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ
বর্তমানে আদালত মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য চেয়েছে এবং এর ভিত্তিতে ওজুখানায় ASI সমীক্ষা চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্লেসেস অফ ওয়ারশিপ অ্যাক্ট, ১৯৯১-এর প্রাসঙ্গিকতা
এই আইন অনুসারে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যেসব উপাসনাস্থলের ধর্মীয় চরিত্র যা ছিল, তা অপরিবর্তিত থাকবে। যদিও অযোধ্যা মামলার রায়ে এই আইন থেকে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ককে ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
সমাজে প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্ক পুনরায় সামনে আসায় ভারাণসী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলোচনা এবং উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
- হিন্দু পক্ষের মতে, এটি ঐতিহাসিক ভুল সংশোধনের চেষ্টা।
- মুসলিম সমাজ এবং মসজিদ কমিটি এই দাবিকে সম্প্রীতির পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে।
জ্ঞানভাপী মসজিদ ঘিরে নতুন এই আবেদনের প্রভাব শুধু আদালতের রায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে সকলের নজর থাকবে।