মোবাইল ফোনে ডুবে থাকা এক নীরব বিপদ


বৃহস্পতিবার,২৪/১০/২০২৪
189

বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আসক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে? আজকাল ডিজিটাল আসক্তি বা ইন্টারনেট আসক্তি বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে উঠেছে। আশ্চর্যের বিষয়, এই আসক্তির শিকার হওয়া অধিকাংশ মানুষই জানেন না যে তাঁরা সমস্যার মধ্যে আছেন। অনেকে এটাকে কোনও সমস্যা বলে মনেই করেন না।

নয়াদিল্লির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস সিং জানান, “তাঁর রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মোবাইল ফোনের আসক্তির কারণে মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শিশু, যুবক, এমনকি বৃদ্ধদের মধ্যেও এই আসক্তি দেখা যাচ্ছে।”

মোবাইল আসক্তির প্রভাব: শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি

ফোন আসক্তি শুধুমাত্র আমাদের মস্তিষ্ক এবং চোখের ওপর প্রভাব ফেলে না, বরং এটি আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘক্ষণ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ বাড়ে।
মানুষ বাস্তব জীবনে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে, বার্তা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটায়, যা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে। পারিবারিক বা সামাজিক মিলনক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের আধিপত্যে সম্পর্কের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হচ্ছে।

মোবাইল আসক্তির পিছনের কারণ:

  1. সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো এখন প্রায় সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপডেট দেখতে, রিলস বা ভিডিও ক্লিপ দেখার অভ্যাস এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে।
  2. অনলাইন গেমের আসক্তি: অনেকেই অনলাইন গেমে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েন যে সময়ের হিসেবও ভুলে যান।
  3. কাজ এবং পড়াশোনায় ফোনের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান যুগে কাজ এবং শিক্ষার জন্য ফোন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা আসক্তির পথকে সুগম করছে।

ফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়:

ডাঃ আশিস সিং মোবাইল ফোনের আসক্তি এড়ানোর কিছু সহজ উপায় বাতলে দেন:

  1. রুটিন সেট করা: ফোন ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা। খাওয়ার সময়, ঘুমানোর সময় এবং প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ফোন এড়িয়ে চলা।
  2. ডিজিটাল ডিটক্স: সপ্তাহে একদিন ফোন ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত করা এবং সেই সময় প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো বা বই পড়া।
  3. বিজ্ঞপ্তি বন্ধ করা: অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে ফোকাস বাড়ানো।
  4. স্বাস্থ্যকর ক্রিয়াকলাপে মনোযোগ: যোগব্যায়াম, ধ্যান, গান শোনা বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো এই আসক্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি

প্রযুক্তির ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণে রেখে, এর থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং সুষম ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া ডিজিটাল আসক্তি থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। প্রযুক্তি আমাদের জীবনের একটি অংশ হওয়া উচিত, কিন্তু আমরা যেন প্রযুক্তির দাসে পরিণত না হই, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট