বাংলাদেশে বানবাসি মানুষের চরম দুর্ভোগ


রবিবার,১৯/০৭/২০২০
3102

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: প্রবল বৃষ্টি ও উজানের ঢলে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে এলাকাবাসী। মানুষ ও পশু এক জায়গায় শুধু আশ্রয়ই নেয়নি, তাদের অনেকেই আধপেটা খেয়ে খাদ্যসংকট মোকাবিলা করে হচ্ছে। বানভাসি এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এদিকে পালস্না দিয়ে বাড়ছে বন্যাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও। দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালীর প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগে প্রায় তিন হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, উপদ্রম্নত এলাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৯৮ জন মানুষ। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ১৫৭১ জন, শ্বাসনালীর প্রদাহে ৩৮৪, চর্মরোগে ১৩২, চোখের প্রদাহে ৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে সাত শতাধিক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বন্যার্ত এলাকায়। হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পস্নাবিত এলাকায় ৩৫৭ জন রোগাক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন পাঁচজন। দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে। শেরপুর: শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানির বৃদ্ধি পেয়ে সদর উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার কামারেরচর, চরপক্ষিমারী ও বলাইয়েরচর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। চরমোচারিয়া ও চরশেরপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামেও পানি ঢুকেছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শেরপুরজামালপুর আঞ্চলিক সড়কের পোড়ার দোকান ও শিমুলতলীতে দুটি কজওয়েতে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

ফলে শেরপুরের সঙ্গে যমুনা সারকারখানাসহ উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শেরপুরজামালপুর সড়কের কজওয়ের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাটের আবাদ ও আমন ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে সবজির আবাদ। চরপক্ষিমারীর কুলুরচর ব্যাপারি পাড়া ও নতুন চরের তিন শতাধিক পরিবার জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে ও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ইউনিয়নে আট মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাবনা : পাবনার যমুনা ও পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর নগরবাড়ি মথুরা পয়েন্টে পানি ৬৬ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পদ্মার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার মাত্র ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দী ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি। পাশাপাশি বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ৫৬টি কাঁচাপাকা সড়ক। সাগরকান্দী ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ওই ইউনিয়নের তালিমনগর, গোবিন্দপুর, মাদিয়ারকান্দি, পিরেনতলা, শ্যামসুন্দরপুর, চরখলিলপুর, চরশ্রীপুর এবং হুগলাডাঙ্গিসহ ৮১০টি গ্রামের প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সেই সঙ্গে বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে ইউনিয়নের তালিমনগর শাহ মাহতাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, তালিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রিয়াজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, শ্যামসুন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হুগলাডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি। ফরিদপুর: গত ১২ ঘণ্টায় ফরিদপুরের পদ্মার পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলা সদর থেকে চরভ্রদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার যাওয়ার সড়টির কয়েক স্থানে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়াও ওই সড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ভারি যানচলাচল। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলার ৩০টি ইউনিয়নে ২০ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। তাদের জন্য ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ। এ ছাড়াও জেলা সদর থেকে চরভ্রদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার প্রধান সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে সড়ক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও ওই সড়কে বেশ কিছু স্থান পানিতে নিমজ্জিত। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বর্তমানে পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৯.৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার ওপর। এর ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে মধুমতির নদীর আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। সদরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার পূরবী গোলদার জানান, সরকারিভাবে ২৯ মেট্রিকটন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। রাজারহাট : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীর করাল গ্রাস থেকে রক্ষার দাবিতে বিদ্যানন্দ সেবা ফাউন্ডেনের উদ্যোগে তিস্তা পাড়ের মানুষ ও ওই ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মানববন্ধন করেছে। শুক্রবার বিকালে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরহাট নামক স্থানে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ফাউন্ডেশনের সভাপতি এরশাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামসহ বক্তারা সর্বগ্রাসী তিস্তা নদী থেকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র যেন মুছে না যায়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শুক্রবার সরেজমিন গেলে নদীর তীরবর্তী মানুষরা অভিযোগ করেন, প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়সারাভাবে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদী রক্ষার অহেতুক চেষ্টা করেন। এতে তারাই লাভবান হন। প্রকল্প নিয়ে এসে নদীতে বালুভর্তি কিছু ব্যাগ দিয়েই প্রকল্পে লুটপাট করেন। অন্যদিকে নদীরক্ষা তো দূরের কথা, ভাঙন আরও তীব্রতর হয়ে উঠে। স্থায়ী পদ্ধতিতে কেউ নদীশাসন করে না। ফলে বছরের প্রতিটি মূহূর্তে নদীর তীরবর্তী মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

মান্দা (নওগাঁ) : নওগাঁর মান্দায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা এবং গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে মান্দার আত্রাই নদীর মূলবাঁধ এবং বেড়িবাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট সাতটি স্থান ভেঙে যায়। বন্যার পানিতে মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ এবং বিষ্ণপুর ইউপির প্রায় কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও মান্দা উপজেলার শতশত পুকুর ডুবে গেছে। এতে পুকুর থেকে প্রচুর মাছ বেরিয়ে গেছে। ফলে মাছচাষিদের কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। আত্রাই নদীর কোথাও কোথাও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন উপজেলায় নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৪০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা শুরু হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় তুলনায় ত্রাণ খুবই অপ্রতুল বলে জানা গেছে। বর্তমানে অসহায় পরিবারগুলো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার কারণে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

   

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট