কভিড-১৯ : বাংলাদেশে মোকাবেলার প্রথম ধাপেই বিশৃঙ্খলার ছাপ


বৃহস্পতিবার,২৫/০৬/২০২০
808

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: কভিড১৯ মোকাবেলার প্রথম ধাপ হিসেবে পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা বলছে, স্বল্প সময়ে বেশিসংখ্যক নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল মহামারী আকার ধারণ করা এ সংক্রমণ মোকাবেলা সম্ভব। সে অনুযায়ী বিশ্বের অন্য দেশগুলো এরই মধ্যে পরীক্ষা বৃদ্ধি করে কভিড১৯ মোকাবেলার প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই সামান্য। মোকাবেলার প্রথম ধাপে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ফলে কভিড১৯এর পাশাপাশি ননকভিড রোগীরাও চিকিৎসাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে আগামী সেপ্টেম্বরঅক্টোবর নাগাদ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে নভেল করোনাভাইরাস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রথম কভিড১৯ রোগীর খোঁজ মেলে গত ৮ মার্চ। সে বিবেচনায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন রয়েছে ১৫তম সপ্তাহে।

এ পর্যন্ত দেশে নভেল করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৪৪টি। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নমুনা পরীক্ষা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। পাকিস্তানেও এ সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কভিড১৯ মোকাবেলায় অধিকসংখ্যক পরীক্ষা করানোর বিকল্প নেই। কারণ বেশি বেশি পরীক্ষা করানোর মাধ্যমেই কেবল কভিড ও ননকভিড রোগী শনাক্ত করা সম্ভব। এতে কভিড আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ননকভিড রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম নিশ্চিত করা যাবে। চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশাসক ডা. নিরুপম দাস বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড মোকাবেলায় মৌলিক বিষয়টিই হচ্ছে টেস্টের সুব্যবস্থা করা। কিন্তু এখনো আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী টেস্ট করাতে পারছি না। তাছাড়া টেস্টিং প্রক্রিয়াটাও এখনো নিরাপদ করা যায়নি। কারণ যেসব হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ জটলা। গাদাগাদি করে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে চাইছেন।

এতে করে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইসিইউ বেড বৃদ্ধির তাগিদও দেন এ চিকিৎসক। ডা. নিরুপম দাস বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে কভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। কারণ কভিডের আসল রূপ দেখা যাবে আগামী সেপ্টেম্বরঅক্টোবরে, যখন ঠাণ্ডা পড়বে। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম হওয়ার এবং ফল প্রকাশের বিলম্বের কারণ হিসেবে লোকবল সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীরের ভাষ্যমতে, নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার কাজটি করে থাকেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। কিন্তু এ পদে লোকবলের তীব্র সংকট রয়েছে। জেলা শহর থেকেও টেকনোলজিস্ট ঢাকায় আনা হয়েছে।

তার পরও এ সংকট মেটানো সম্ভব হয়নি। ডব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স এবং পাঁচজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্রটি পুরো উল্টো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে ৩০ হাজার চিকিৎসক কাজ করছেন। ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী, এক্ষেত্রে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজারটি। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদই আছে ৭ হাজার ৯২০টি। এর মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাবরেটরি) মোট ২ হাজার ১৮২টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ৪১৭ জন, শূন্য পদ রয়েছে ৭৬৫টি। দেশের ৬৬টি ল্যাবে কভিড১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, নতুন করে আরো একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে কভিড১৯ পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল (প্রা.)। ফলে এখন থেকে ৬৭টি পরীক্ষাগারে কভিড১৯ পরীক্ষা করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদমাহবুব বলেন, আমাদের সামর্থ্যে ঘাটতি রয়েছে। তার পরও যদি আমরা আগে থেকে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারতাম, তাহলে হয়তো কভিড মোকাবেলায় ভালো ভূমিকা রাখা যেত। এখন আমাদের দ্রুত কভিড পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিবডি টেস্টিং করতে হবে। এ পরীক্ষাটি ভাইরাসের বিপরীতে মানুষের রক্ত বা সিরামে জন্মানো অ্যান্টিবডি শনাক্তের মাধ্যমে করা উচিত। এ পরীক্ষায় যাদের পজিটিভ ফলাফল আসবে, তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে আর বাকিরা থাকবে পর্যবেক্ষণে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এরই মধ্যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে।  তিনি আরো বলেন, কভিড১৯ আক্রান্তদের সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে রাখতে হবে।

কারণ কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন করতে পারলে ৮০ ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন। এর বাইরে ১৫ ভাগ রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। আর বাকি ৫ ভাগ রোগীর ভেন্টিলেটর সাপোর্টের প্রয়োজন হবে। ননভেন্টিলেটর রোগীকে মেডিটেশনের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা যাবে। আমাদের আরো একটা জিনিস নিশ্চিত করতে হবে, সেটা হচ্ছে বর্তমানে কিন্তু ননকভিড রোগীরাও চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাই বলব, যাদের টেস্ট করার সক্ষমতা আছে, তাদের অনুমতি দিয়ে দিতে হবে। এতে করে অন্তত ননকভিড রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট