গল্প || ভালোবাসার পরশ ছোঁয়া || চতুর্থ পর্ব || – লেখক: এন.কে.মণ্ডল


রবিবার,০৯/০২/২০২০
1040

রিনা এটা সুন্দর ড্রেস পরে আসলো। কি সুন্দর ড্রেস। ঝকঝকে পরিষ্কার একদম। যেন সুন্দরী রাজকন্যা। যে দেখবে। তাঁর তো মাথা খারাপ হবেই রিনার প্রেমে। তবে কি এখন রিনা আমায় কিছু বলতে চাই। না অন্যকিছু। ব্যাপারটা একেবারেই বুঝতে পারছি না। ঠোঁটে গুলাপি রঙের লিপ্সটিক। চোখে এক হিংস্র খিদে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। হালকা পেট বেরিয়ে আছে। কোমর দেখা যাচ্ছে। শাড়িটা জর্জেট গুলাপি রঙের। হাতে গুলাপি চুড়ি। সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে এটা আমারই কিনে দেওয়া চুড়ি। সেই বক্সিগঞ্জের মেলায় কিনে দিয়েছিলাম। বেশ মানাচ্ছে ওকে। এমন সময় রিনা বলে উঠলো, এই মিস্টার আপনি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছো না কি। ওহ না মানে হ্যাঁ। কি?। সত্যিকরে বলোতো কি ভাবছো। বলব। মারবে না। তোমাকে দেখে আজ আমার মনে হল স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা নয়, বাস্তবে দেখা রাজকন্যা। আর তোমায় মনে হল, তুমি আমাকে নিয়ে উত্তেজিত কিছু ভাবছো। যা তোমার মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা আক্রশ আসিতেছে। কি আমাকে কি তুমি অন্য মেয়েদের মতো বোকা পেয়েছ। দাঁড়াও তোমার হচ্ছে। এই বলে রিনা নাহিদ কে খাটে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এবং ওর বুকে চড়ে বসে। এই এই কি করছো। যে কেউ চলে আসতে পারে।

সে আসে আসুক। তোমার একদিন কি আমার একদিন। দুজনেই হাত পাখরা পাখরি করে। রিনা বলে আমাকে অন্য মেয়েদের মত করে দেখা। আরে আমি কি বলেছি। তোমার মন যা বলেছে, সেটাই বলেছি। এতে আমার দোষ কি বল। আমি ওসব জানি না। আমায় যেমন বলেছ তেমন সহ্য কর। কি করবে তুমি। না কিছু করব না। তুমি যা বলেছ, সেটাই করব। চু….মু……খাব। তুমি কিন্তু জোর করছো রিনা। করব একশোবার করব। তুমি ঠেকাতে পারবে। না আমি এসব চাই না। সুজন সেদিন ঠিকই বলেছিলো আমাকে। কি বলেছিল। বলেছিল যে, নাহিদ তোকে কখনো কিছু দিতে পারবে না। বরং আমার কাছে সব পাবি। হ্যাঁ তুমি ওর কাছেই থেকো। আমার দরকার নেই। আমি এখন এসব চাই না। আমাদের পড়াশোনা ও বড় হওয়ার কথা। আমি গেলাম। তুমি ভালো থেকো। নাহিদ শোনো। না আমি কোনো কথা শুনতে চাই না তোমার। নাহিদ হুড়মুড় করে নেমে আসলো নিচ তলায়। এবং রমজান মাতব্বর কে সালাম জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। রিনা অবাক ও রাগান্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো দোতলায়। সে কখনো ভাবে নি। এটা ঘটে যাবে। তবে রিনারও গরম কম। বলে প্রেম করলে অনেক কিছুই তো করতে হয়। তাতে কোনো দোষ নেই। প্রেম হল সুন্দর ও সৌন্দয্যের প্রতিক। এতে কোনো দোষ আছে বলে আমি মনে করি না। ও একটু বেশিই সৎ প্রকৃতির লোক। অতো সৎ ভালো না। প্রেমিকা কে একটু তৃপ্তি না দিতে পারলে কিসের প্রেম। বা প্রেম করেই বা কি লাভ। কে বোঝাবে ওকে। কিন্তু এ কথা ঠিক যে, ছেলেটা লোভী নয়। যথেষ্ট ভদ্র। কিন্তু আমার কাছে একটু অন্যরকম হওয়ার দরকার আছে। না নেই। সে কি মনে করে তা আমি জানি না। আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে নেমে এলো নিচের রুমে।

১০

কি রে নিয়াজদ্দি আজ মাতব্বরের সভা আছে না পার্টি অফিসে। হ্যাঁ ফজলু ভাই। তুমি যাবে না কি। চল গেলে কিছু শোনা যাবে। তবে যাই বলিস না কেন নিয়াজ। তোর কিন্তু সেক্রেটারি পদটা মোটেই এখন ঠিক হচ্ছে না। কেন ফজলু ভাই। আরে মিঞা তুমি প্রায় দশ থেকে পনেরো বছর থেকে পার্টিতে আছো। হ্যাঁ, তা আছি। কিন্তু দেখো একই পদ আছে তোমার। না সভাপতি হতে পারছো না পার্থী। সে দলের ব্যাপার। কিন্তু রমজান সবই পারে নিয়াজ। শুনেছি পার্থী পাচ্ছে না। তো রমজান কে বলে দ্যাখ না। কি বলে। কি বলব। আরে গাধা পার্থী হিসাবে আমরা তোকে কিন্তু খারাপ ভাবছি না। না হলে দল করে লাভ কি। তোর কত পিছে এসে সাগির মিঞা মেম্বার হয়েছিল। এবার তাঁকে দাঁড়াতে দেবে না শুনছি। দ্যাখ বলে কি বলছে। কিছুক্ষণ পরে সমস্ত দলের সদস্য ও কর্মী উপস্থিত হয়েছে। এখন রমজান মাতব্বরের অপেক্ষায় রয়েছে। নেতা কখন আসবে তাঁরও ঠিক নেই।

আহম্মদ বলে কই রে নিয়াজ, অন্তত চা বিস্কুট তো দে। আরে মাতব্বর আসুক। সে ব্যাটা কখন আসবে ঠিক আছে না কি। এক এক করে দলের সবাই বলল, তাই তো সে আসার আগে চা না হয় খাওয়া যাক। কি হে সব ঠিক বলছি তো। কয়েকজন বলে উঠলো হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হোক। নিয়াজ আচ্ছা মুস্কিলে পড়েছে। পার্টি সেক্রেটারি হয়ে চা করবে। কিন্তু মাতব্বর মশাই তাকে পার্টির এল সি এসের মতো খাঁটায়। আরে মাতব্বর মশাই আসছে। এসেই পড়লো। কি রে নিয়াজদ্দি ওদের চা দিস নি কেন। এই তো যাচ্ছি। তো বলো তোমরা কেমন আছো। ভালো আছি মোড়ল মশাই। সবাই একযোগে বলে উঠলো। তো কি ভাবলে, কাকে পার্থী করা যায়। রহিম ও নাদের কি একটা চুক্তি করলো ফিসফিস করে। তারপর বলে উঠলো আমাদের মনোনীত পার্থী হচ্ছে বকুল মাস্টার। কি হে তোমরা কি বলো। হ্যাঁ লোকটা খারাপ নয় অবশ্য। মাস্টার বলে কথা। সে কি রাজনীতি করবে। সে না হয় দেখা যাবে। মাতব্বর বলে উঠে, না হয় অবশেষে করিমকেই দাঁড় করাব। কি আছে। তাহলে আগামীকাল রহিম আর নাদের ভাই তোমরা বকুলের কাছে যাও। এবার যেভাবে হোক জিততে হবেই।

আরেকবার সাদেক গুণ্ডা দিয়ে জিতেছিল এবার আর হচ্ছে না। ফজলু তখন বলে উঠলো, সে তো আপনার জন্যই হয়েছিলো।ঝামেলার দরকার নেই বলে। তাতে আবার আপনার বন্ধু বলে কথা। সাবধানে কথা বলিস ফজলু। বেশি বড়ো বড়ো কথা বলছিস। তুই রাজনীতির কি বুঝিস রে। আজকাল একে ওকে ভুল বুঝাচ্ছিস শুনতে পাচ্ছি। শোন বেশি মাতব্বরি করবি তো ঠ্যাং কেটে রেখে দেব। কোনো বাপ বাচাঁতে পারবে না। ফাজিল কোথাকার। এখানে তোকে কে ডেকেছিলো। ফাজিল কোথাকার। ফজলু গজগজ করতে করতে চলে গেল। মাতব্বর বলে উঠে আমাদের নতুন ভাবে কমিটি গড়তে হবে। ভোটে জেতার জন্য সেসব কিছু করতে পারে। না হলে অঞ্চল সভাপতির কাছে মান থাকবে না। তাহলে আগামীকাল কাল রহিম আর নাদের ভাই তোমরা বকুল মাস্টারের বাড়ি ঘুরে আসো। আমি চলি রে নিয়াজ। আমার বুথে কিছু কাজ আছে।

১১

ফজলু শেখ করিম অর্থাৎ নাহিদদের বাড়িতে যায়। কি করিম ভাই বাড়িতে আছো নাকি। হ্যাঁ আছি রে। আয়। কি ব্যাপার রে বলতো। সবাই বাড়ির ভালো আছে তো। হ্যাঁ বড়ভাই তা আছে একরকম। এই নাহিদের মা শুনছ। হ্যাঁ বলো। দু কাপ চা দাও না। দিচ্ছি। আরে কি ব্যাপার ফজলু দেওরা যে। কি ব্যাপার। না এমনি, এই বড়ভায়ের সঙ্গে গল্প করতে চলে আসলাম। ওহ তো তোরা গল্প কর। আমি চা নিয়ে আসি। হ্যাঁ ভাবি নিয়ে আসো, তোমার হাতের চায়ের টেস্ট কি ভোলা যায়। নে নে হয়েছে, আর প্রশংসা করতে হবে না আমার। অনেক হয়েছে।

হ্যাঁ বলতো কি বলতে এসেছিস। বলছি বড়ভাই তুমি নির্বাচনে পার্থী হয়ে যাও। কি যে বলিস। আমার দ্বারা এসব হবে না। কেন হবে না। আরে রাজনীতি করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তোমার পাশে তো গ্রামের মানুষ আছেই। তা থাকলেও বা কি। রাজনীতি করার জন্য অনেক মানুষ আছে। আমি মানুষ ভালো পরামর্শ দিই, এতেই যথেষ্ট। রমজানের পার্টি তো বকুল মাস্টার কে পার্থী করবে সিন্ধান্ত নিয়েছে। তাই বুঝি। একদিক দিয়ে ভালো।মাস্টার মানুষ আইন কানুন সবই জানা আছে। বড়ভাই তুমিও তো কম না। বেশি শিক্ষিত না হলেও তোমার জ্ঞানের পরিচিতি সবার জানা। তুই সরে যা ধিনি। তোরে পাগলা কুকুরে কি কামড়িয়েছে। না ভাই আমায় পাগলা কুকুরে কামড়ায় নি। আমি ওই ব্যাটা রমজান কে আমি ছাড়ব না। সালা আমাকে অপমান করে, মানুষের মাঝে। বড়লোক বলে ওদের সবাই মান্নি করে। আর না। এবার ভালো ব্যাক্তিকেই বেছে পার্থী দেব। দরকার হলে আমার ত্রিশ বিঘা জমি আছে বিক্রি করেও সালাকে হারাতে চাই। আরে তোর কি সত্যিই পাগলা কুকুরে কামড়ালো। শোন ভাই তোমাকে দাঁড়াতে হবেই। আমি ভালো কয়েকজন কে ডেকে কমিটি করে নিজেই দল করব। ওদের লুটেপুটে খেতে আর দেব না। এবার ঠিক কথা বলেছিস। যে ভালো ব্যাক্তিদের নিয়ে কমিটি করার কথা। তো দ্যাখ হয় কি না। তাহলে আমি রাজনীতিতে নামতে রাজি আছি। আর তাছাড়া এ বুথে সাদেকের মতো লোকের জেতার ক্ষমতা আর নেই। ঠিক আছে আমার বাড়িতেই সভা ডাকার ব্যাবস্থা করি। ঠিক আছে। আমি চলি ভাই। আরে চা খাবি না। না আজ থাক। সময় নেই। পরে এসে খাব। নাহিদ এসে বলে, আব্বু তুমি নির্বাচনে পার্থী হয়ে যাও। গ্রামের ভালো মানুষের পাশে দাঁড়াও। সঠিক নেতা কাকে বলে দেখিয়ে দাও। সে তো করা যায়।

কিন্তু আমাদের তো সম্পত্তি নেই আব্বু। টাকা নেই। ওদের সঙ্গে লড়তে গেলে প্রচুর অর্থো প্রয়োজন। যুবক ছেলে দরকার। কিন্তু বাবা তোমায় অঞ্চলের মানুষ খুব পছন্দ করে। নাহিদের মা রঙ্গিলা এসে বলে, আরে দেওরা কোথায় গেলো। ও চলে গেছে। সে কি।চা খাবে বলল। তাঁর বদল তুমি খেয়ে নাও। নাহিদ তুই নে। আমার আছে। ঠিক আছে দাও। নাহিদের মা ভিতরে চলে গেল। নাহিস চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, আচ্ছা আব্বু তুমি কি সাদেক কে ওই জমি বেঁচার কথা বলেছ নাকি। অসম্ভব। আমি ওই জমি কখনোই বেঁচব না। আমার মাত্র দশ বিঘা জমি যাতে তোর ভবিষ্যৎ ভালোভাবে কেটে যায়। আর ওই দুই বিঘা আমার আব্বার জমি। আমি মরে গেলেও বেঁচব না। আব্বার আশির্বাদ আছে ওতে। সাদেক না কি দাগ সোজা করার জন্য কিনতে চাই। হ্যাঁ শুনেছি। সে জোর করেও কিনতে চাই। জোর করলেই হল। দেশে আইন আদালত নেই। ঠিক বিচার আছে। আর তাছাড়া আমার ওসব নিয়ে চিন্তা নেই। আমার জমি আমি না দিলে ওদের কিছু করার নেই। কয়েকদিন আগে নিয়ামত এসেছিল জমির ব্যাপারে কথা বলতে। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি। ঠিক আছে তোকে ওসব ভাবতে হবে না। যা পড়তে বসগা। যাচ্ছি। তবে ফজলুর কথাটা ভেবে দেখো আব্বু।

চলবে …..

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট