গল্প || ভালোবাসার পরশ ছোয়াঁ || দ্বিতীয় পর্ব || – লেখক: এন.কে.মণ্ডল


বুধবার,০৫/০২/২০২০
1372

সেদিন সোমবার টেস্ট পরিক্ষার ফল ঘোষণা করবে উচ্চমাধ্যমিকের। উচ্চমাধ্যমিকে স্কুল থেকে টেস্ট পরিক্ষাতে পাস করলেই বোর্ডে পাঠাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ।তাই সেদিন দুজনেই গেছে পরিক্ষার রেজাল্ট জানতে। রিনা ও নাহিদ দুজনেই ভালো স্টুডেন্ট। কাজেই ভালো রেজাল্ট করবে। সে বিশ্বাস আছে তাদের। সমস্ত ছাত্র ছাত্রী অপেক্ষায় আছে নোটিশের জন্য। যে প্রধান শিক্ষক কখন রেজাল্ট আউট করবে। শেষমেশ এগারোটা চল্লিশ মিনিটে নোটিশ বোর্ডে পিয়ন রেজাল্ট মেরে গেলো। সবাই ছুটে গেলো রেজাল্ট দেখার জন্য। অনেক ভিড় এখন। ভিড় কমে গেলে দেখবে। আধঘন্টার মধ্যে ভিড় কমে গেলো। রিনা ও নাহিদ রেজাল্ট দেখতে গেলো। দুজনেই পাশ করেছে। ভালো নম্বরে।কিন্তু রিনার অনেক নম্বর কমে গেছে। সে এবার পড়া কম করে দিয়েছে। যাইহোক নাহিদ বকা দিলো কয়েকবার। মন দিয়ে পড়তে বলল নাহিদ রিনা কে। বাড়ি গিয়েও কয়েকটা ঝাড়ি খেলো। রমজান মাতব্বরের কাছে। ভেবেছিলাম তুই গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবি।কিন্তু এমন রেজাল্ট করলে আমার মান সন্মান থাকবে। আগামী তিন মাস ভালো করে পড়বে। আর আগামীকাল থেকে ফজল মিয়া কে বলে দেব। ওর কাছে পড়তে যাবে। ফজল মিয়া মাস্টার হিসাবে না কি ভালো। রিনা বলে আমি ওর কাছে পড়তে যাব না আব্বা। ও অন্যরকম লোক। চোখ খারাপ। ফজল মিয়ার কাছেই যেতে হবে তোমাকে। রিনা যেতে চাইছে না আরেকটি কারণে। রাত্রে পড়ায়।

তাছাড়া বদমাস সুজন ওখানে পড়ে। কি না কি করে বসবে কে জানে। তাই তার ভয় লাগছে।কিন্তু বাবা কে বলার মত শাহস নেই রিনার। তাই পরেরদিন ফজল সাহেবের বাড়িতে পড়তে যাচ্ছে। সঁন্ধাবেলা। শীতের সময়।অন্ধকার। হাতে টর্চ আছে অবশ্য। অনেকটা যেতে হবে। প্রায় হাফ কিলোমিটার হবে। জায়গায় জায়গায় ছোট ছোট বন। আবার খানিকটা ফাঁকা আছে। আবার কোথাও বসতি। গ্রামে যা হয় আর কি। প্রতিদিন প্রাইভেট করে সুজনের সঙ্গে। এখন সুজন খুব খুশি। কারণ, রিনা কে পটাতে খুভ ভালো হবে। একদিন তো বলেই ফেলল। আচ্ছা রিনা ধরে নেব আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই। তুই কি আমায় বিয়ে করবি। হ্যাঁ আমি রাজি। যদি তুই আমায় অফুরন্ত ভালোবাসা দিতে পারিস। পারবি। হ্যাঁ পারব। সত্যি। ঠিক আছে, তাহলে আমার জন্য কি করতে পারবি। কি করতে হবে বলে দেখ একবার। আমি যদি বলি, আজ এইখানে আমার দেহের জ্বালা মেটাতে হবে। পারবি তো। সুজন মনে মনে বলে, আর কতদিন। প্রতিদিন যা গরম গরম কথা বলি। না প্রেম করে থাকে। আমি সুন্দর মেয়েদের চিনি। কিসের জন্য প্রেম করে ওরা। কি রে কি ভাবছিস। পারবি না আমার সঙ্গে আজ একঘন্টা সময় দিতে। পারব না কেন,আমি তো ওই পথের পথিক। তুই জানিস না, নাহিদ এসব তোকে কখনো দেবে না। শোন তোকে আমার চেনা হয়ে গেছে।তুই কেমন ছেলে। তোর মত ছেলেরা নোংরা কথা ছাড়া কিছুই ভাবে না। তুই একটি কথা ভালো বলেছিস। নাহিদ আমাকে এসব দেবে না। আমি জানি সে কতটা মহান। তাই আমি তাকেই ভালোবাসি।

আর আমি তোর মত বন্ধু চাই না। আর আগামীকাল থেকে প্রাইভেট আসছি না। ঠিক আছে আসিস না। আজ তো আমায় খুশি করে যা। এই বলে রিনা কে চেপে ধরে রাস্তার ধারে। ঘাসের উপর পড়ে যায়। ঘাসের ওপর গড়াগড়ি করতে থাকে। দুজনেই গড়াগড়ি খায়। রিনা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু তা বিফলে যেতে থাকে। কয়েকবার স্তনে, মুখে হাত রাখতে যাচ্ছিলো। পোশাক ছিঁড়ে দেয় কিছুটা। সে সময় দেবদূতের মত পৌঁছে যায় নাহিদ। নাহিদ সুজনের কলার ধরে পিটুনি দিতে থাকে। নাকে মেরেছে। গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। সুজন আর পেরে ওঠে না। সে দৌড় দেয়। রিনা প্রচণ্ড কাঁদতে থাকে। কি হল আমার। নাহিদ আমি তোমায় মুখ দেখাতে পারব না। কি ভুলভাল বকছো বাড়ি চল। আজ আমি তোমাদের বাড়িতে দিয়ে আসি। এখন রাস্তায় কেউ একটা নেই তেমন।এই বলে রিনা কে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়িতে রমজান মাতব্বর ছিল না। না থাকায় কেউ জানতে পারে নি। শুধুমাত্র মা জানতে পারলো। মা অনেক শান্তনা দেয়। নাহিদ রিনার ঘরে ঘন্টাখানেক থাকবে। বোঝাবে। রিনা ড্রেস পরে আসলো ঘরে। দরজাটা মেরে দিয়েছে। যা হয়েছে ভুলে যাও রিনা। মনে কর তোমার কিছুই হয় নি। আমি তো আছি। আমি তোমাকে কখনো ভুল বুঝিনি। আজও বুঝি না। তুমি কোনো রকম পাগলামি করবে না। চাচি মা, চাচি মা। কি হল বাবা। ভাত আছে। আছে বাবা। নিয়ে আসুন। আমি খাইয়ে দিয়ে যাব।

এখানে রিনার মা বুঝতে পারে রিনার সঙ্গে নাহিদের সম্পর্ক আছে। কিছু না বলে খাবার আনতে যায়,আর মনে করে নাহিদ ছেলেটা ভালো। যদি ওরা সম্পর্ক করে তো ভালোই হবে।কিন্তু আরেকদিকে সর্বনাস হবে, রিনার বাবা যদি জানতে পারে তবে আস্ত রাখবে না ওদের। খাবার এনে বলে। এই নাও বাবা। খাবে কি দেখ। আচ্ছা বাবা একটা কথা বলব। কি কথা চাচি। না মানে তোমরা কি দুজন দুজনে ভালোবাসো। কিছুক্ষণ থ মেরে যায়। তারপর রিনার মা বলে বাবা আমার দিক থেকে অসুবিধে নেই। তোমার চাচা কে ও ভাইয়া কে সামলিয়ে চলিও। না হলে আবার বিপদ আছে। না চাচি কিছু হবে না। আমাদের দোয়া করবেন। নাহিদ অল্প করে ভাত মেখে। মুখে তুলে দিলো রিনার। কয়েকবার খাইয়ে দেওয়ার পর। রিনা নিজে হাতে খেলো। নাহিদ রিনার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে বাড়ি এলো। নাহিদ সারারাত্রি ঘুমোতে পারে না। এপাস ওপাস করে।রাত্রি যে আর কাটে না। সে মনে মনে ঠিক করে, যে সুজন কে সুযোগে পেলে ছাড়বে না। তাঁর অন্তরে আঘাত করেছে। একদিন না একদিন প্রতিশোধ নেবেই।

(৬)

রমজানের প্রিয় বন্ধু সাদেক আলি। সবাই সাদেক বলেই ডাকে। সেও রমজানের মত কুচুটে কিন্তু শিক্ষিত। সমাজের আরেক মাতব্বর। ছেলেরা শিক্ষিত। কেউ ডাক্তার, আবার কেউ মাস্টার। ছোট ছেলে আসিক আলি। সে কিছুদিন হয়েছে মাস্টারি পেয়েছে। গ্রামের স্কুলেই পেয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভালো মাইনেও পাচ্ছে। বিবাহের জন্য পাত্রী খুঁজে চলেছে। পাড়ার নিয়ামত বলে উঠে, পাত্রী তো আমাদের ঘরেই আছে চাচা। নিয়ামত হচ্ছে সাদেক আলীর কাজের লোক। সাদেকের সমবয়স্ক। ছোট থেকে একই সঙ্গে বড় হয়েছে। বন্ধুর মতো। কে রে নিয়ামত। আরে চাচা আমাদের রমজানের ছোট মেয়ে। তাই তো। একেবারে ভুলেই মেরে দিয়েছি। মেয়েটি ভালো, সুদর্শনা। পড়াশোনাতেও অনেক ভালো। ঠিক আছে রমজানের মেয়ের সঙ্গেই আসিকের বিয়ে হবে। রমজান কে আগামীকালকেই বলব। আচ্ছা নিয়ামত করিমের জমিটার কি হল রে। জমিটা কি বেঁচতে রাজি হয়েছে। না চাচা। করিম লোক আলাদা জানো তো। কিভাবে মাতব্বরি করে। মাতব্বর না হয়েই সমাজ কে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। তাঁর দিকেই নাকি লোক যাচ্ছে এখন। কয়েকজন ওর সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছে। জানিস নিয়ামত, লোকটা ভালো। কিন্তু এভাবে মানুষ কে ভালো বুদ্ধি দিলে আমার রাজত্ব চলবে না রে কিছুদিন পর। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
কয়েকদিন পর রমজানের সঙ্গে দেখা হল সাদেক আলির। কি ব্যাপার মিয়া।

এবার তোমার বুথে তো পার্থী থাকছে না বলে। হিম্মত আছে কার আমার বিরুদ্ধে লড়তে। সে তো বটে। আমার বুথে ভয় আছে কিছুটা। ওই ব্যাটা করিম কে নিয়ে তো। হ্যাঁ রমজান ভাই। আজ সে কথা থাক। মেয়ের বিয়ে টিয়ে দেবে না নাকি। দিতে তো হবেই।বড় হয়েছে। তো বলছিলাম আমার আসিক মাস্টারি তো পেলো।তো বলছিলাম বিহায় হয়ে গেলে হত না। কথাটা কিন্তু মন্দ না সাদেক । ভালোই হবে। এখন সে কথা থাক। পরে আলোচনা করব। দেখো ছেলের বাবা হয়ে বলছি।। ভেবে দেখতে বলছি। ঠিক আছে, সাদেক তোমার ছেলের সঙ্গেই বিয়ে হবে। এই কথা দিলাম। মাঠে বসেই। আগামীকাল তোমার বাড়িতে যাব সাদেক। আমাদের একজায়গায় বসতে হবে। দলগত না হলেও গ্রামের প্রধান হিসাবেই আলোচনায় বসব। তুমি এখন যাও। সাদেক মাতব্বর শিক্ষিত, কিন্তু কুচুটেও বটে। রমজানের মাতব্বরের অনেক জমিজমা। প্রায় দুইশো বিঘা। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বিশাল সম্পতির মালিক। রমজান শিক্ষিত না হলেও দুই বুথের কর্ণধার। সমাজ তাঁর হাতের মুঠোয়। রমজান বাড়িতে রাত্রে বিছানায় শুয়ে গিন্নীকে বলে,জানো রিনার মা। আজ বিকেলে বাগানে সাদেকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তা কি হল। না।এমন কিছু হয়নি। রিনার বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছিল। কি কথা গো।

ওই পাড়ার সাদেক মাতব্বরের ছোট ছেলের সঙ্গে রিনার বিয়ের কথা। প্রস্তাবটা অবশ্য সাদেকেরই। বলি এখন ওসব কথা বাদ দাও। বাদ দেব কেন,বিয়ে দিতে হবে না। দিতে হবে। ভালো ছেলে দেখতে হবে, পাঁচ জায়গায় খোঁজ করতে হবে। আর তাছাড়া রিনার মতামতের ব্যাপার আছে।তাই না। তা আছে বটে। মাতব্বর বলে উঠে, গ্রামে বিয়ে দিতে হবে। একটা মেয়ে আমার। তা দাও না,আমাদের ভালোই হবে। গ্রামে করিমের ছেলেটাকেই দেখছি ভালো। হ্যাঁ ও রিনার বন্ধু,আমারও পছন্দ। কিন্তু ব্যাটা করিম জ্ঞান দেয় সমাজে। এর জন্যই আমার ভালো লাগে না। আমি মাতব্বর মানুষ, ওর জ্ঞানে মানুষ চললে আমার কি হবে। সন্মান থাকবে। দেখা যাক। তাই বলে তো মেয়েকে সাদেকের বাড়ি দিচ্ছি না। ও শালা আমার জমিজমা হাতানোর জন্যই এই প্রস্তাব রেখেছে। সেরকম হলে করিমের ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দেব। বলি ওগো একটা কথা বলব। বলো কি বলবে। বলছি ওদের মধ্য একটা সম্পর্ক আছে। ওরা দুজন দুজনে ভালোবাসে। সে কি আমি তো জানতাম না। আমি জানি। তাহলে তো অসুবিধে রইল না। ঠিক আছে ঘুমাও তো। রমজান ঘঃ ঘঃ করে ঘুমাতে লাগলো। রমজান রাজনৈতিক কুচুটে কিন্তু ছেলে মেয়েদের নিয়ে কুচুটে করেন না। ভালোবাসার মর্যাদা দিতে জানে। কারণ রিনার মায়ের সঙ্গে প্রেম করেই বিয়ে হয়েছিলো তাঁর। সে এক বিরাট কাহিনী আছে।

চলবে …..

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট