প্রাচীন মঙ্গলপাড়ার কোলে বাড়ির রাসযাত্রা উৎসব


সোমবার,১১/১১/২০১৯
714

পশ্চিম মেদিনীপুর :-মঙ্গলপাড়া গ্রামের কোলে বাড়িতে সামান্য পরিমাণ জমির আয় থেকেই রঘুনাথ জিউ, দামোদর জিউ এবং অষ্টধাতুর গোপালের মূর্তি দিয়েই রাসযাত্রার সূচনা হয়েছিল । তারপর এখন রাসপূর্ণিমা তিথিতে প্রথা মেনে মণ্ডপে পরিবারের প্রধান কুলদেবতা বিষ্ণু বিগ্রহকে অধিষ্ঠিত করা হয়। চন্দ্রকোনা রোডের মঙ্গলপাড়ার কোলে পরিবারের প্রথা মেনে রাসপূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে তিন দিন ব্যাপী চলে রাস উৎসব। এই কটা দিন উৎসবমুখর থাকে গোটা গ্রাম ।

পরিবারের প্রবীণ সদস্য পাঁচুগোপাল কোলে, সুকুমার কোলেরা জানান, আজ থেকে প্রায় ১৩০ বছর আগে রাস যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণপ্রসাদ কোলে। একসময় পরিবারের আদি দেবতা রঘুনাথ ছিল। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সে হাত থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছিল। কৃষ্ণপ্রসাদ বাবু কাশীতে গিয়ে নতুন করে সেই মূর্তি গড়ে এনেছিলেন। সঙ্গে পরিবারের আদি কুলদেবতা বিষ্ণু এবং অষ্টধাতুর গোপাল দিয়ে তিনি রাসযাত্রা পর্ব শুরু করেছিলেন।

পরে কৃষ্ণপ্রসাদ বাবুর ভাইপো রামব্রম্ভ কোলে পারিবারিক জমির সামান্য আয় থেকে বেশ কিছু বছর টাকা বাঁচিয়ে তিনদিন ধরে রাস পালন করত। বাংলা ১৩৪০ বঙ্গাব্দ নাগাদ উক্ত সম্পত্তির খাজনা বাকি পড়ায়, রামব্রম্ভর পরবর্তী বংশধর উমাশঙ্কর কোলে উদার মনোভাবাপন্ন মানসিকতা নিয়ে বেশ কিছু বছর নিজস্ব জমির ধানের আয় থেকে রাসযাত্রা, পূজা ও অনুষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছিল। পরিবারের দুই সদস্য নিমাই কোলে, সুশীল কোলে বলেন “শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ ও শ্রী শ্রী দামোদর জিউ কুলদেবতা ঠাকুরগণের রাসযাত্রা পর্বের জন্য ২৫ বিঘা দেবত্তর সম্পত্তি ছিল। ওই সম্পত্তির ভাগচাষী ধরানো ছিল। সম্পত্তির আয় থেকে রাস প্রতিষ্ঠা, তিন দিন ব্যাপী যাত্রা এবং ব্রাহ্মণ ভোজনাদি সমস্ত কিছুই সম্পন্ন হতো।”

১৩৭৫ সাল পর্যন্ত রাসপ্রতিষ্ঠা, কীর্তন গান, রামায়ণ, পড়শি ভোজন ইত্যাদি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই চলত। ১৩৭৬ সাল থেকে ১৩৯২ সাল পর্যন্ত ভাগচাষীরা জমির ধান দিতে অসমর্থ হলে, রাস প্রতিষ্ঠা প্রায় ১৬ বছর বন্ধ হয়ে যায় ‌। পরে পরিবারের পরিসর বৃদ্ধি পেলে মঙ্গলপাড়ার কোলে পরিবারের সদস্যরাই নিজেদের যৌথ উদ্যোগে পুনরায় রাস প্রতিষ্ঠা শুরু করল। তবে জৌলুস তেমন ছিল না।

২০১২ সালে পরিবারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হল ‘শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা ট্রাস্টি বোর্ড’। সেই থেকে আবারও আড়ম্ভরপূর্ণ ভাবে তিন দিন ধরেই রাস প্রতিষ্ঠা, কীর্তন গান, মেলা, পড়শি ভোজন সহকারেই দামোদর জিউ ও রঘুনাথ জিউ প্রতিষ্ঠা পেয়ে থাকেন ঐ পরিবারে।

ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে অশোক কোলে, অভি কোলেরা বলেন “একসময় পরিবারের এতটাই দূরাবস্থা গেছে যে, রাস প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন পূর্বপুরুষেরা। আমরা নতুন করে রাসকে পরিবারের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে সত্যিই গর্বিত। আমাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই, এই সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে হলেও আজ পরিবার ছেড়ে এলাকার মানুষদের মধ্যে ওই তিন দিন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাস প্রতিষ্ঠা ও মেলা হয়ে থাকে। সঙ্গে চলে নানা উৎসব অনুষ্ঠান। সর্বোপরি রাসযাত্রাকে কেন্দ্র করে ওই তিন দিন মেতে থাকেন গোটা মঙ্গলপাড়া তথা এলাকাবাসী ।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট