ভারতের ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট টেস্ট: বাংলাদেশী মেডিকেলে পড়া ৭২ শতাংশই ফেল


সোমবার,০৪/১১/২০১৯
934

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: বিদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করা ভারতীয় নাগরিকদের দেশে প্র্যাকটিসের লাইসেন্স পেতে ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশনে (এফএমজিই) পাস করার শর্ত রয়েছে। এজন্য দেশটির জাতীয় পরীক্ষা বোর্ডের (এনবিই) অধীনে নেয়া এ পরীক্ষায় প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজারের বেশি ভারতীয় অংশ নেয়। বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, এফএমজিই টেস্টে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা এবং এদের ৭২ শতাংশই এ পরীক্ষায় ফেল করেছে। তিন থেকে চার বছর পর পর বিদেশ থেকে মেডিকেল ডিগ্রি নিয়ে আসা এফএমজিই পরীক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনবিই। সম্প্রতি ২০১৫ থেকে ২০১৮—এই চার বছরের পারফরম্যান্স রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বোর্ডটি। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬১ হাজার ৭০৮ জন ভারতীয় এফএমজিইতে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬৫ জনই বাংলাদেশী মেডিকেল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ৩৪৩ জন। সে হিসাবে পাসের হার মাত্র ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।  এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. আরমান হোসেন বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে গুণগত মানের ডিগ্রি নিয়ে থাকলে তো ফেল করার কথা না। দেশে অনেক মেডিকেল কলেজ আছে। এখন দেখতে হবে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে তারা পড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে বেশকিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে সবসময়ই নিয়ম ও আইন না মানার অভিযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের যেসব নাগরিক বিদেশ থেকে পড়ে আসে, আমরাও তাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকি। সেখানে দেখা যায়, যারা ভালোভাবে পড়াশুনা করে আসছেন, তারা কোয়ালিফাই হচ্ছেন। আর যারা নিম্নমানের প্রতিষ্ঠানে পড়ে আসছেন, তারা অকৃতকার্য হচ্ছেন।’ দেশ ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পারফরম্যান্স তালিকায় দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশী ৪০টি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়েছেন ভারতীয়রা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিগ্রি দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি)। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪১৪ জন এফএমজিইতে অংশ নেয়।

এর মধ্যে পাসের হার মাত্র ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ ইউএসটিসি থেকে ডিগ্রি নেয়া ৮২ শতাংশই নিজ দেশে গিয়ে ডাক্তারি পেশার সনদ পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএসটিসির উপাচার্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগে ইউএসটিসির ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হেলথ সায়েন্সের অধীনে মেডিকেল ডিগ্রি দেয়া হতো। এখন সেটি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন।’ যোগাযোগ করা হলে ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হেলথ সায়েন্সের অধ্যক্ষ ডা. এহতেশামুল হক বলেন, ‘আসলে এমবিবিএস ডিগ্রির যে সিলেবাস তার সঙ্গে এফএমজিইর মিল নেই। এমবিবিএস শেষ করে এ টেস্টের প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। যারা ভালো প্রস্তুতি নেন, তারা কোয়ালিফাই হবে। আর যারা প্রস্তুতি না নিয়ে টেস্টে অংশ নেন, তারা ভালো করতে পারবেন না—এটাই স্বাভাবিক। তবে এটার সঙ্গে আমাদের দেয়া ডিগ্রির মানের সম্পর্ক নেই।’ প্রতিবেদনে উল্লেখিত চার বছরে এফএমজিইতে অংশ নেয়া অন্যদের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশ মেডিকেলের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন সাতজন।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডিগ্রিধারী ১১ জনের মধ্যে তিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১৮ জনের মধ্যে আট, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের ৫২ জনের মধ্যে সাত, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ৮৮ জনের মধ্যে ৩৩, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ২১ জনের মধ্যে এক, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ৩২ জনের মধ্যে ১৪, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ১৯ জনের মধ্যে আট, তাইরুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের ৪৩ জনের মধ্যে ১৪, শাহাবউদ্দীন মেডিকেল কলেজের পাঁচজনের মধ্যে দুই এবং ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ৫৪ জনের মধ্যে ১৮ এফএমজিইতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।  এফএমজিই বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল বোর্ড অব এক্সামিনেশনের আগের পারফরম্যান্স প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ২০১৫ সালে। ২০১২ থেকে ২০১৪—তিন বছরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশ করা ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে তখন সর্বমোট ৬২৬ জন এমএফজিইতে অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেন মাত্র ১৯৩ জন।

সে হিসাবে ওই প্রতিবেদনে পাসের হার ছিল মাত্র ৩০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।  দুটি প্রতিবেদনের তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের মেডিকেল ডিগ্রি নেয়ার হার বাড়ছে। তবে ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থীদের এফএমজিইতে পাসের হার কমছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে আসা ভারতীয়দের অধিকাংশও এফএমজিই পরীক্ষায় ফেল করছে। এনইবি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮—এই চার বছরে মরিশাস থেকে পড়ে আসাদের ৫২ শতাংশ, চীনের মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ে আসাদের ১১ শতাংশ, রাশিয়ার ডিগ্রিধারীদের ১২ দশমিক ৬৯, নেপালি প্রতিষ্ঠানের সনদধারীদের ১৭ শতাংশ এবং ইউক্রেন থেকে পড়ে আসাদের মাত্র ১৫ শতাংশ এফএমজিই পরীক্ষায় পাস করেছে।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট