খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ পিংলায় বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু হল ১১ জনের। গুরুতর আহত হয়েছেন ৬ জন। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, ১০ নয়, এই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। বাজি কারখানার মালিক বিস্ফোরণের পর থেকেই পলাতক ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার রাতে আচমকাই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা গ্রাম। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে কারখানাটির আর কোনও অস্তিত্বই নেই। ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ছড়িয়ে রয়েছে কারোও হাত কারো পা, কারোর নিথর শরীর। কারখানা সংলগ্ন কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ ঘিরে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি এই বেআইনি বাজি কারখানার মালিকের নাম রঞ্জন মাইতি। নামে বাজি কারখানা হলেও , এই বাড়ির মধ্যে দরজা বন্ধ করে বোমা বাধাও চলত। বোমা বাঁধতে গিয়েই হয়তো এই দুর্ঘটনা। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, এই রঞ্জন মাইতি তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। সেই কারণে পুলিশের কাছে এই বেআইনি কারখানা নিয়ে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় পুলিশ এখন রঞ্জন মাইতিকে ধরার জন্য যে তৎপরতা দেখাল তা আগে দেখালে এবং কারখানা বন্ধ করে দিলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের মন্তব্য, এককালে তৃণমূল করলেও এখন আর দলের সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নয় রঞ্জন মাইতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখান থেকে বোমা তৈরি করে তা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হতো। রঞ্জন মাইতির কাছ থেকে রাম মাইতি এই বাড়ি নিয়ে বেআইনি কারখানা চালাত। এই বিস্ফোরণে রাম মাইতি ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এই কারখানার বেআইনি কাজকর্ম যে চলতে তা ভালভাবেই জানতেন রঞ্জন। ৭ নম্বর জলচকের কাছ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আপাতত গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে কিছু পাওয়া য়ায় কি না তার জন্যও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এলাকায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। ভিড় সামাল দিচ্ছে পুলিশ। বিস্ফোরণ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে পৌছে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে। পিংলা বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া রাহুল সিনহা (বিজেপি রাজ্য সভাপতি) – এঘটনা খাগড়াগড় কাণ্ডেরই অন্যতম সংস্করণ। খাগড়াগড়ে যেভাবে তৃণমূল নেতাদের সহায়তায় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বোমা তৈরির কাজ চালাত এখানে বহিরাগত শ্রমিকদের নিয়ে তৃণমূলের নেতারা বাজি কারখানার নামে বোমা তৈরির কাজ করত। খাগড়াগড় কাণ্ডে আমাদের চাপে পড়ে এনআইএ তদন্তে সায় দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আমরা চাইব এবার নিজে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এনআইএ তদন্তের দাবি জানাবেন। সুজন চক্রবর্তী (সিপিআইএম নেতা) – পিংলায় যে বিস্ফোরণে ১১ জনের প্রাণ গেল এর দায় তো স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনেরই। পুলিশ তো জানতই ওখানে বোমা তৈরি হয়। একবার তো অভিযান চালিয়ে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে বিস্ফোরণও হয়েছিল। এর মানে হচ্ছে পুলিশ তো দুষ্কৃতীদের আসকারা দিচ্ছে বেআইনি এধরণের কাজের জন্য। এই কাজে তৃণমূল কর্মী যুক্ত বলেই রাজ্য প্রশাসনও চুপ। আব্দুল মান্নান (কংগ্রেস নেতা) – এতো শুধু পিংলার ঘটনা নয়, বীরভূম, বাঁকুড়া সর্বত্র এই অসামাজিক কাজকর্ম চলছে। প্রকাশ্যেই বোমা তৈরির কারখানা হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গ। যাদের প্রাণ গেল, তাদের পরিবারের জন্য, আমাদের জন্য সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু কিছু করার নেই।
বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরীর কারখানা পিংলায়
বৃহস্পতিবার,০৭/০৫/২০১৫
754