কৌশিক গাঙ্গুলির পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘বিসর্জন’ এর সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’


শুক্রবার,১১/০১/২০১৯
1362

সুনন্দা হালদার---

বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে উজ্জ্বল তারা, আমার প্রিয় পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলির পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘বিসর্জন’ এর সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’, ‘পদ্মা’র বহতা জীবনের কিছু সময়ের খণ্ডচিত্র । ‘বিসর্জন’ এ এক লড়াকু নারী পদ্মা দাস থেকে পদ্মা হালদার, তারপর তার অকাল বৈধব্য, তারপর পরিচয় গোপন করা নাসের আলির সঙ্গে তার সম্পর্ক ( হয়তো অবৈধ সমাজের চোখে ) । আমি লিখেছিলাম ‘ভাসান’ ।

ভাসান সাজিয়ে নদীতে
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ ওঠে ।
সুখ ভাসিয়ে দুঃখে,
প্রাণ জাগে না কাঠামোয় ।
সাদা থানে মুখ গুঁজে
মন শুধু গন্ধ খোঁজে,
পাতা পোড়া, তামাক পোড়া
ঘর পোড়া, মানুষ পোড়া গন্ধ ।
জ্যোৎস্না মাখা চোখে বিসর্জন বোধনে ।
কান্না ওড়া ঝড়ে, শরীর ডোবে দাফনে ।

নদী বেয়ে ‘বিজয়া’য় পদ্মা হালদার শাঁখা সিঁদুরে পদ্মা মণ্ডল, স্বামী গণেশ মণ্ডল তার কর্তব্যপরায়ণতা, প্রেম নয়। ভালোবাসার টানে ভালোবাসা ফেরে মনের মানুষের কাছে । অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার জন্য ওপার বাংলা থেকে পদ্মা আসে এ’পার বাংলায়, অনিবার্যভাবে দেখা হয় নাসের আলির সঙ্গে । বিসর্জনের পর বিজয়ায় দেবী কঙ্কালসার হয় নদীতে কিন্তু ছ’বছর পর নাসের পদ্মাকে দ্যাখে একই রকম আগুন ধরানো রূপে । এরপর কাহিনী গড়িয়ে চলে সময়ের সূতোয় পদ্মার জন্য নাসেরের টুকরো টুকরো ভালো চাওয়া জুড়ে ।

গণেশ মণ্ডল তা’তে মুখে উদারতা দেখালেও পুরোনো ক্ষততে হাত বুলিয়ে ঈর্ষান্বিত হয় । পথের প্রায় শেষে পৌঁছে কোনো একদিন আত্মহত্যার জবানী লিখে নিখোঁজ হয়ে পুরুষালী অহংকারে পৌঁছোয় ও’পার বাংলায়, তার ভিটেতে । আসলে পদ্মার দিকে ছুঁড়ে দেয় নাসেরের সঙ্গে ঘর বাঁধার চ্যালেঞ্জ, নাসেরের অনুনয় সত্ত্বেও, তার সন্তানের মা হয়েও স্বাধীনচেতা নারী ফেরে ও’পার বাংলায় তবে কাঁটাতারের বেড়ার ও’পারে পদ্মাকে চমকে দিয়ে সামনে আসে গণেশ মণ্ডল, তার পরাধীনতা; দু’চোখে তার জয়, আকাশ ঘুরিয়ে দাঁড়ায় পাখিকে দাঁড়ে ফিরিয়ে আনার তৃপ্তি । একটা প্রশ্ন রয়েই গেল…পদ্মাকে কেন বাঁধা হল পুরুষতন্ত্রের পাথুরে বাঁধে, কালবেলায় তার মুক্তি কোথায় ?

আজকের অস্থির সমাজপটে, ছবিটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুর পরিবেশনের জন্য, আপামর জনকে চিকিৎসকের সততার, অব্যবসায়িক মনোভাবের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রিয় পরিচালককে অকুণ্ঠ অভিনন্দন । ও’পার বাংলার শিল্পী জয়া আহসানকে আন্তরিক অভিনন্দন পদ্মা চরিত্রে এমন পরিণত অভিনয়ের জন্য । ভালোলাগার অনুভূতির দাবীদার শিল্পী আবীর চট্টোপাধ্যায়, লামা হালদার ।সবশেষে বলি, পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলিকে ছাপিয়ে অভিনেতা কৌশিক গাঙ্গুলি দর্শকের অনেক কাছে পৌঁছেছেন, বাংলা সংস্কৃতির চালচিত্রে এ’ আমাদের অনেকখানি পাওয়া।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট