কালিয়াগঞ্জে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে কষ্টি পাথরের লক্ষী নারায়নের পুজো


বুধবার,২৪/১০/২০১৮
712

বাংলা এক্সপ্রেস---

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে কষ্টি পাথরের লক্ষী নারায়নের পুজো হয়ে আসছে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে। ২১ বছর আগে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ৭ নম্বর ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম ভাণ্ডার গ্রামের একটি জমিতে চাষ করছিলেন কৃষি লেবার নরেশ বর্মণ। গোকুল চন্দ্র বর্মণের জমিতে চাষ করার সময় নরেশ বাবুর লাঙ্গলের ফলায় আটকে যায় একটি পাথর। সঙ্গে সঙ্গে সে কোদাল দিয়ে পাথরটিকে তোলে। পাথরটি জল দিয়ে পরিস্কার করলে দেখা যায় কাল পাথরে খোঁদায় করা লক্ষী নারায়নের মূর্তি। মূর্তি পাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই সেই গ্রাম থেকে এমনকি দুর দূরান্ত থেকে কয়েকশ লোক হাজির হয়ে যায় ঐ মাঠে।এরপর পশ্চিম ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দারা ঐ কাল পাথরের মূর্তিটিকে তাঁদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জ থানা, জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা ছুটে আসে। মূর্তিটির পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় সেটি কষ্টি পাথরের মূর্তি। মূর্তিটি লম্বায় প্রায় দের ফিট চওড়ায় এক ফিট। প্রশাসনের তরফ থেকে মূর্তিটিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হলে গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পরে তাঁদের খালি হাতে ফিরে যেতে হয়।

এরপর পশ্চিম ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দারা একটি মন্দির বানিয়ে মূর্তিটির পুজো শুরু করে ২১ বছর আগে। সারা বছর নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে দু বেলা করে পুজো করলেও কোজাগরী লক্ষী পুজোর দিনটিতে মহাসমরহে পূজোর আয়োজন করা হয় এখানে। প্রতিবছর গ্রামের মহিলারা বাড়ির লক্ষী পুজো কোনমতো সেরে সন্ধ্যার মধ্যে লক্ষী নারায়ন পুজো মণ্ডপে এসে হাজির হন।পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের সমস্ত মহিলারা উপোষ থাকে। কোজাগরী লক্ষী পূজো এখানে রাতে হয়। গোটা বছর নিত্য পূজোর দায়িত্ব সামলান এই গ্রামেরই এক মহিলা। পুজা কমিটির সভাপতি মণীন্দ্রনাথ রায় জানান, বছরের প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ও সন্ধ্যের সময় পুজো হয় এখানে। এই লক্ষী নারায়ণ মন্দির খুব জাগ্রত। এখানে কেউ কোন কিছু মানত করলে মা লক্ষ্মী তাঁদের খালি হাতে ফেরান না। তাই গ্রামে বিয়ে, অন্নপ্রাশন হলে লক্ষী নারায়ণ মন্দিরে এসে গ্রামবাসীরা প্রথমে পূজো দিয়ে যান। এই মন্দিরে গোটা বছর ধরে প্রচুর সোনা ও রুপার গহনা দান করেন ভক্ত প্রাণ মানুষ। এই সকল গহনা সযত্নে জমা রাখা হয় লক্ষী মাতার নামে।লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির কমিটির সম্পাদক নান্টু বর্মন বলেন, যার জমিতে এই কষ্টি পাথরের দেবী মূর্তি পাওয়া গেছে সেই গোকূল চন্দ্র বর্মণ লক্ষ্মী নারায়ণ মূর্তির মন্দির করার জন্য ২ কাঠা জমি দান করেছেন। ২১ বছর ধরে এই খানেই লক্ষ্মী নারায়ণের পুজো হয়ে আসছে।

এই কষ্টি পাথরের মূর্তি পাওয়ার পর প্রশাসন আমাদের কাজ থেকে তা নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলো। আমরা গোটা গ্রামের লোক এক হয়ে বলেছিলাম আমরা নিজেদের জীবন দিয়ে দেব তবুও এই মূর্তিটিকে এখান থেকে নিয়ে যেতে দেবনা। গ্রামবাসীদের চাপে পরে সেদিন প্রশাসনকে খালি হাতে এখান থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এখানে লক্ষ্মী নারায়ণ পুজো নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে।লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির কমিটির সহকারী সভাপতি প্রফুল্ল বর্মণ বলেন, পশ্চিম ভাণ্ডার গ্রামের লক্ষ্মী নারায়ণের পুজোকে কেন্দ্র করে আসে পাশের গ্রাম থেকে কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয় এখানে। এখানে বিশাল মেলা বসার পাশাপাশি তিন দিন তিন রাত ধরে চলে বাউল গানের আসর। বাংলাদেশ, কোলকাতা, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, কোচবিহার থেকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বেশ কয়েকটি দল বাউল গানে অংশ নেবেন। বাউল গান চলাকালীন সময়ে এখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তিন দিন পর মহাপ্রভুর ভোগ দিয়ে মেলা ভাঙ্গা হয়। এই পূজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে দুর দূরান্তের অতিথিরা এসে হাজির হন। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে পাঁচ দিন ধরে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকেন বৃদ্ধ বৃদ্ধা থেকে শুরু করে কচিকাঁচারা।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট