ক্রিকেটীয় আবেগ হার মানায় ভয়কে, বোঝাল আফগানিস্তান


বুধবার,২৬/০৯/২০১৮
641

রাকিবুল ইসলাম ---

একবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। অনেক মানুষের প্রান যায়, অনেক মানুষ শরণার্থী হিসাবে পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার আক্রমণকে কেন্দ্র করে আমেরিকার আগ্রাসন আফগানিস্তানের উপর এসে পড়ে। গোটা বিশ্ব এক ভয়াবহ যুদ্ধের সাক্ষী থাকল। দেশে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হল অসংখ্য মানুষের প্রাণ গেল।
২০০১ সালের পর আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। সরকার বদলায় কিন্তু মানুষের জীবনের আশঙ্কার মেঘ কাটল না। সরকারের সঙ্গে সরকার বিরোধীদের প্রায় সংঘর্ষ লেগে থাকত। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় চলত বোম নিয়ে হামলা। এতেও অনেক মানুষের প্রাণ যেত। এই দুর্বিষহ জীবনের মধ্যে থেকেই আফগান ক্রিকেটের উথ্থান।

১৯৯০ সালের দিকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে সপরিবারে বাস করতেন মহম্মদ নবির পরিবার। তখন পাকিস্তানের স্কুলে ক্রিকেট খেলা চলত। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট হন নবি। তারপর সপরিবারে ২০০০ সালে আফগানিস্তানে ফিরে আসে নবির পরিবার। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালিবান ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়। সেখান থেকে নবি ক্রিকেটের স্বপ্ন দেখতে থাকে। এরপর নবির সঙ্গে মহম্মদ সাহ্জাদ, আসগার সানিকজাই এবং অন্যান্য রা মিলে আফগানিস্তানে ক্রিকেট দল তৈরি করলেন।
১৯৯৫ সালে আফগান ক্রিকেট বোর্ড গঠন হয়। অন্যান্য খেলার মতো তালিবান ক্রিকেটকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

কিন্তু পরবর্তীতে ক্রিকেট আফগানিস্তানে একমাত্র খেলা হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের জাতীয় দল পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে যোগদান করে। এরপর থেকে তারা এশিয়ান ক্রিকেট খেলতে থাকে। ২০০৬ সালে আফগানিস্তান তৃতীয়স্হান অধিকার করে নেপালকে হারিয়ে। ২০০৯ সালে আফগানিস্তান ইউএইকে হারিয়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের খেতাব যেতে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিসে টি২০ বিশ্বকাপে তারা অংশগ্রহণ করে। এরপর তারা ২০১৩ সালে অ্যাসোসিয়েট দেশের মর্যাদা পায়।
২০১৩ সালে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে মউ চুক্তি সাক্ষর করে এবং তারা আফগানিস্তান ক্রিকেটকে সমস্ত রকম টেকনিক্যাল সহযোগিতা করতে থাকে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর তারা জিম্বাবোয়ের মাঠে গিয়ে ৩-২ জিম্বাবোয়েকে হারায়। আফগানিস্তানই প্রথম দেশ যারা একটা টেস্ট খেলার দেশকে হারায়।

এরপর থেকে ক্রমেই আফগানিস্তান ক্রিকেটে উন্নতি করতে থাকে। এরপর ২০১৭ সালে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিসে খেলতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিসের বিরুদ্ধে ১-১ এ ওয়ানডে সিরিজ ড্র করে। তারপর বিগত এশিয়া কাপে আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কার মতো দেশের কাছে এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচ যেতে। সেখান থেকে এ বছরের এশিয়া কাপ। এই এশিয়া কাপে আফগানিস্তান মোট ৫টা ম্যাচ খেলেছে।
এই পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে আফগানিস্তান মোট দুটো ম্যাচ জিতেছে। কিন্তু যদি বলা হয় পাঁচটার মধ্যে পাঁচ ম্যাচই আফগানিস্তানের জেতা উচিত ছিল তাহলে সেটা কী খুব অন্যায় হয়? কারন দলটার মধ্যে প্রতিভার কোন অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। শুধু দরকার ভাল গাইড।
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ ছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এই ম্যাচে আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কাকে বড় রানের ব্যাবধানে হারায়। এরপর বাংলাদেশকেও একই ভাবে হারিয়ে আফগানিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটকে তাঁদের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশকে হারিয়ে আফগানিস্তান অনায়াসে শেষ চারে প্রবেশ করে।
শেষ চারে তাদের প্রথম খেলতে হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ব্যাট করে আফগানিস্তান করে ২৫৭ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরুতেই ওপেনার ফাকার জামানের উইকেট হারায়। এরপর আফগানিস্তান চাপে পড়ে যায়। দ্বিতীয় উইকেটে পাকিস্তান সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করে এখানেই খেলা আফগানিস্তানের হাত থেকে বেরিয়ে যায়।
কিন্তু পরের স্পিনার ও পেসারদের দুরন্ত পারফর্মেন্সের ফলে আফগানিস্তান ম্যাচে ফেরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানকে তিন উইকেটে হারতে হয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একই পুনরাবৃত্তি হয় এবং আফগানিস্তানকে তিন রানে হারতে হয়। এরপর ভারতের বিরুদ্ধে একই ভাগ্যের সম্মুখীন হয় কিন্তু এবার আর আফগানিস্তানকে আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি খেলা অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়।
এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের প্রথম দুটো ম্যাচ তারা বড়রানের ব্যাবধানে জেতে। কিন্তু পরের দুটো ম্যাচ অল্পের জন্য তাদের হাতছাড়া হয়। শেষ ম্যাচে ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেও তারা ম্যাচ ড্র করে। খেলা শেষে ধোনি বলেন, আফগানিস্তান অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত উন্নতি করেছে। আফগানিস্তান এশিয়া কাপের ফাইনালে না পৌঁছতে পারলেও তাদের পারফর্মেন্সে তারা খুশি কিন্তু তাদের একটাই হতাশা থেকে যাচ্ছে তারা খুব ভাল খেলেও ফাইনালে যেতে পারল না।
যে দেশে জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই, সেই পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থেকে আফগান ক্রিকেটের উত্থান। হয়তো ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ভালবাসাই তাদের সাফল্যের কারন। তা না হলে রাশিদ খান ২০ বছর বয়সে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই নম্বর বোলার। আর মুজিব ১৭ বছর বয়সে একজন রহস্য ময় স্পিন বোলার হয়ে উঠেছে। আফগান ক্রিকেটে প্রতিভার কোন অভাব নেই, দরকার শুধু দলকে ভালোভাবে পরিচালনা করার।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট