শিক্ষারত্ন সম্মান পাচ্ছেন চাকদহ রামলাল একাডেমির প্রধানশিক্ষক আনন্দময় মন্ডল


সোমবার,০৩/০৯/২০১৮
873

বিকাশচন্দ্র ঘোষ---

নদিয়া: ২০১৮ সালের শিক্ষারত্ন সম্মান পাচ্ছেন চাকদহ রামলাল একাডেমির প্রধানশিক্ষক আনন্দময় মন্ডল। সোমবার সরকারী আমন্ত্রণ পত্র এসে পৌঁছেছে তাঁর হাতে। তাঁর এই সম্মানে খুশি গোটা চাকদহ। আনন্দবাবুর প্রাক্তন সহকর্মী কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যোগ্য ব্যক্তি সম্মান পাওয়ায় আমরা গৌরাম্বিত।
চাকদহের এই বিশিষ্ট শিক্ষকের নাম জাতীয় শিক্ষক ২০১৮ সম্মানের জন্য প্রথম সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রস্তাব রেখেছিলেন কাজলবাবু। তাই তাঁর শিক্ষারত্ন প্রাপ্তিতে বেজায় খুশি চাকদহ পূর্বাচল বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়।
একনজরে আনন্দময় মন্ডল:
আনন্দময় মন্ডল, M.A., B.T., LLB.
বর্তমান প্রধান শিক্ষক, চাকদহ রামলাল একাডেমী (উঃমাঃ)।
প্রাক্তন সহঃশিক্ষক, চাকদহ পূর্বাচল বিদ্যাপীঠ (উঃমাঃ)
প্রাক্তন অধ্যাপক (আংশিক, চাকদহ মহাবিদ্যালয়, বিষয়-অর্থনীতি।

এদিন আনন্দময় মন্ডলের শিক্ষারত্ন প্রাপ্তির খবর জানিয়ে প্রাক্তন সহকর্মী সম্পর্কে কাজলবাবু বলেন, সহকর্মী হিসাবে পেয়েছিলাম আনন্দময়বাবুকে। যিনি প্রায় দু-দশক চাকদহ কলেজে অর্থনীতিতে অাংশিক সময়ের অধ্যাপনা করতেন। আইন-কানুন বিষয়ে তাঁর প্রজ্ঞা ছিল চোখে পড়ার মত। তিনি আইন শাস্ত্রে স্নাতক এল এল বি ছিলেন। তখন থেকেই লক্ষ্য করতাম ম্যানেজমেন্টে তাঁর দক্ষতা দুর্দান্ত। সবসময় নিয়মানুক কথাবার্তা বলতেন। কর্মী-সংসদের সম্পাদক হিসাবে, প্রতিষ্ঠানের ভালোর স্বার্থে নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিতেন। এজন্য তৎকালীন বাম শিক্ষক-সংগঠন কর্তৃক সভা ডেকে তাঁকে অপমান করতেও দেখেছি। প্রধান শিক্ষক পদে স্কুল-সার্ভিস কমিশনের নিয়োগপত্র পেয়েও আইনী জটিলতায় যোগদান করতে পারেননি রাণাঘাট ইউসুফ ইনস্টিটিশানে। এরপর আদালতের নির্দেশে (appx.2000-2002)তাঁকে রামলাল বা পূর্বাচলে নিয়োগ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন বামেদের সুনজরে ছিলেন না। তাই, আদালত অবমাননা করে সেই নিয়োগপত্র দেওয়াও হয়নি তাঁকে।

অবশেষে, রাজ্যের শাষন ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার সুযোগ তৈরী হয়। তখন নিজে দাবী করলেই, অাইন অনুযায়ী, চাকদহ পূর্বাচল বিদ্যাপীঠে নিজের স্কুলেই তিনি প্রধান শিক্ষক হতে পারতেন। কিন্তু অন্য কারো যাতে অসুবিধা না হয় তাই চাকদহ রামলাল একাডেমীতে প্রধান শিক্ষক হওয়ার দ্বিতীয় বিকল্পটি নিয়েই সন্তুষ্ট হন।

২০১২ সালের ৬ জানুয়ারি শতাব্দী প্রাচীন বিদ্যালয়,চাকদহ রামলাল একাডেমীতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন আনন্দবাবু।তাঁর যোগদানের পর রামলালের পঠন-পাঠনের মানের দ্রুত উন্নতি হতে শুরু করে। স্কুল তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম দশজনের মধ্যে রামলাল থেকেই মেধা তালিকায় জায়গা পায় সাতজন। উচ্চ-মাধ্যমিকেও রাজ্যের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান এবছর রামলাল একাডেমী থেকেই। বিদ্যালয়ে উচ্চ-মাধ্যমিক বিভাগে চালু হয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম সেকশান। সেই বিভাগের ফলাফলও বিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করেছে।
বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষ, পানীয়জল, কল, আলো, মিড-ডে-মিল, বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা সহ সব বিষয়ে দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। রবিবারও স্কুলে থাকেন প্রায় সারাদিন। প্রতিদিন রাত আটটা নাগাদ স্কুল থেকে বের হন। বিদ্যালয়ে নিজের উদ্যোগে মিড-ডে-মিলের জন্য কিচেন গার্ডেন তৈরী করেছেন, যেখানে এক মরশুমেই প্রায় এক হাজার লাউ ফলিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। মাধ্যমিক বিভাগে বিভিন্ন শ্রেণিতে ইংরাজীর ও উচ্চ-মাধ্যমিক বিভাগে অর্থনীতির ক্লাস নেন নিজেই। প্রয়োজনে খাতা দেখতে বা প্রশ্নপত্র তৈরী করতে হলেও তাঁর আপত্তি নাই। হেডমাস্টার মশাই হিসাবে কোনোদিনই নিজেকে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মিদের মাস্টার(প্রভু) হিসাবে আচরন করেন না কোনোদিন।
কর্মযোগীন আনন্দবাবু অবসর নেবেন এবছর অক্টোবরের ৩১ তারিখে। তার আগে তাঁর এই সম্মান গর্বে ভরিয়ে তুলেছে চাকদহের আপামর নাগরিককে।বাম আমলের একজন অবহেলিত কর্মযোগী মানুষ অবশেষে নিজের প্রাপ্য সম্মান পেলেন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট