যে শিল্পের হাত ধরে উত্তর দিনাজপুরের চেহারাটাই বদলে যেতে পারত, সেই শিল্প আজ অস্তিত্বরক্ষার কঠিন লড়াইয়ে


বৃহস্পতিবার,১০/০৫/২০১৮
745

পিয়া গুপ্তা---

উত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামেগঞ্জে রাজবংশী মহিলাদের হাতে তৈরি ধোকরা শিল্প । আর্থিক অনাটনের স্বীকার এই মহিলাদের   পাট ও রঙিন সুতোর হাতে বোনা  ধোকরা শিল্প আজ অস্তিত্ব সংকটে৷ যে শিল্পের হাত ধরে উত্তর দিনাজপুরের চেহারাটাই বদলে যেতে পারত, সেই শিল্প আজ অস্তিত্বরক্ষার কঠিন লড়াইয়ে

প্রতিবার ভোটে নেতাদের গালভরা আশ্বাসে আর মন গলে না এই ধোকরা শিল্পী দের৷ তাই এবার ডাঁয়ে-বাঁয়ে লড়াইয়ে বিন্দুমাত্র উত্সাহ নেই ধোকরা- শিল্পীদের৷ সকলে সমস্বরে বলছেন, ‘ভোট কবে হবে তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই বাপু।জিতলে কি নেতারা  টাকা দিবে? টাকা না-পেলে ধোকরা বুনে করব কী? তার চেয়ে মাটি কোপানো ঢের ভালো৷’ উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার,কালিয়াগঞ্জ সহ বহু গ্রামে ধোকরা শিল্পীদের মুখে এখন একটাই বুলি।সরকার কোন সাহায্য না করলে এই ধোকরা শিল্পকে বাঁচানো অসম্ভব । উল্লিখিত কালিয়াগঞ্জের বালাস,অনন্তপুর,ভাণ্ডার

ইটাহারের কোকনা গ্রাম সহ বহু গ্রামের মহিলাদের জীবিকা অর্জনের সাথি ছিল ধোকরা৷পাট ও রঙিন সুতোর কারুকার্য মহিলাদের নিপুণ হাতে গড়া এই ধোকরা অসম,বিহার সহ একাধিক রাজ্যে পাড়ি দেয় । ইতিমধ্যে এই শিল্পের উন্নতিতে প্রশাসন ধোকডা শিল্পীদের নিয়ে ক্লাস্টার গড়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করলেও প্রশাসনের সেই তালিকাতেই নেই বালাস,অনন্তপুর সহ একাধিক গ্রাম ।স্বাভাবিক কারণেই প্রশাসনের প্রতি বঞ্চনার সুর এই গ্রাম গুলির ধোকরা শিল্পীদের । বঞ্চনার ক্ষোভে এবারে পঞ্চায়েত ভোটে উগরে দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন ধোকরা শিল্পীরা ।বালাস ,অনন্তপুর সহ এই গ্রামগুলির রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহিলারাই আজ এই ধোকরা শিল্পের পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। এক সময় কালিয়াগঞ্জের বালাস গ্রামের ৪০০ এর ও বেশী মহিলা এই ধোকরা শিল্পের উপর নির্ভর ছিলেন ।

বালাস গ্রামের  মহিলারা জানান  নিজের হাতে পাট গাছ কেটে, আঁশ ছাড়িয়ে, সুতো কেটে ধোকরা তৈরি করি হাতে বুনে৷ আর দাম? মেরেকেটে শ’তিনেক৷ অথচ সৌন্দর্য, নান্দনিকতায় অনায়াসে টক্কর নিতে পারে কাশ্মীরের কার্পেটের সঙ্গে৷

একটা সময়ে এ গ্রামের শোভা, মাধুরী, মিনতিরা সংসারের কাজ সেরেও হপ্তায় বানিয়ে ফেলতেন চার থেকে পাঁচটা ধোকরা৷ কিন্ত্ত এখন না-আছে টাকা, না সম্মান৷ তাই কেউ ধোকরা বোনা ছেড়ে মুড়ি ভাজেন, কেউ চলে যান মাঠের জোগাড় খাটতে৷ কিছু কিছু মহিলারা আছেন যারা কাজ সেরে ফাঁকা সময় ধোকরা বানান তবে সরকারি সাহায্যের অভাবে তাদের ও মন বসে না এই কাজে।

অষ্টাদশী গৃহবধূ তুলি বর্মন  বলেন, ‘এক সময় কালিয়াগঞ্জ আর ইটাহার ব্লকের রাজবংশীদের তৈরি রঙিন ধোকরার বেশ কদর৷ প্রতি সপ্তাহে ধনকোল, পাতিরাজপুর, কুনোর, দুর্গাপুর, হাটে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান এই ধোকরার টানে অথচ আজ আমাদের ধোকরায় উত্সাহ নেই৷’  আক্ষেপে সুরে তিনি বলেন‘একটা সময় ছিল যখন এ জেলার প্রায় সব রাজবংশীর ঘরের বউরাই তৈরি করত ধোকরা৷ কিন্ত্ত টাকা যদি না-আসে, কাজ করা যাবে?’ ‘কেন সরকার বা পঞ্চায়েত সাহায্য করেনি?’  এখন সামনে পঞ্চায়েত ভোট তাই বাড়ি ভোট চাইতে বেরিয়েছে নেতারা।ওরা কি আমাদের দেখবে? যে আমরা দেখবো তাদের।”সুযোগসন্ধানী নয যোগ্য প্রতিনিধি চাই আমরা” যারা আমাদের জন্য লড়বে । এনে দিবে আমাদের সরকারি সুযোগ সুবিধা এমনি জনপ্রতিনিধি চান এই গ্রামের মহিলারা।গ্রামের অন্য মহিলা ফুলতা বর্মন বলেন আমরা নিজেদের জমিতে পাট চাষ করি ।পাট দিয়ে দড়ি পাকিয়ে সেই দড়ি দিয়ে ধোকডা বানাই।কিন্তু ধোকডা শিল্পে প্রযোজনীয় রং কেনা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না  ।

রং কেনার সামর্থ না থাকলে বাকিতেও রং নিয়ে আসতে হয় । নিজের বাড়িতে ধোকডা তৈরির যন্ত্র না থাকলেও পাশের বাড়ি থেকে তা এনে কাজ করতে হয়  ।বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় একার পক্ষে সংসার চালানো খুব দুষ্কর হয়ে পড়েছে ।তার উপর দিন দিন যেভাবে জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে।তাই বিয়ের পর মেয়েরা যাতে শ্বশুর বাড়ি গিয়েও ধোকডা বানাতে পারে তার জন্য ছোটো থেকেই এই গ্রামে মেয়ে দের ধোকডা বানাতে শিখানো হয় । কিন্তু বর্তমান যুগে জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার তাদের রুটিরোজগারের পথ ও যেন বন্ধ হতে বসেছে।সরকারি সাহায্য না পেলে গ্রামে যে কয়েক জন এই শিল্পের সাথে জড়িত আছেন তারাও টাকার অভাবে এই শিল্প থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন । তাই এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তারা চায় যোগ্য প্রতিনিধি ।যারা তাদের অবহেলার অন্ধকার ঘুচিয়ে সরকারি সাহায্যের মুখ দেখাবে।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট