পঞ্চায়েত নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে রাজ্যের শাসকদল ইতিমধ্যে বিরোধী শুন্যতায় দখল রেখেছে। অবশিষ্ট আসনগুলিতে ভোটের দিন কিংবা গণনার দিন একই ট্রাডিশান বজায় রাখবে তৃনমূল কংগ্রেস, তা বিরোধীরা বারবার অভিযোগ আকারে বিভিন্ন মহলে জানাচ্ছেন। অর্থাৎ পঞ্চায়েত ভোটে তৃনমূলের কোন চিন্তা নেই বললেই চলে। তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে তৃনমূলের অন্দরে বিজেপি কে নিয়ে নানান দুশ্চিন্তা তৈরি হচ্ছে। নারদা–সারদায় সিবিআই ইডির যেমন চোরা আতঙ্ক। ঠিক তেমনি উগ্র হিন্দুত্ববাদ– সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক নিয়ে বিজেপির সাথে মুখোমুখি লড়াই নিয়ে রণনীতি সাজাতে ব্যস্ত তৃণমূল নেতৃত্ব।
বাংলায় শতকরা ত্রিশভাগের কাছাকাছি মুসলিম ভোটার। তাই বিজেপির সাথে হিন্দুত্ব লড়াই করতে গিয়ে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে আদৌও চিড় ধরবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায়? তৃনমূলের জন্মলগ্নে থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু নেতা নেই বললেই চলে। যারা রয়েছেন তাঁদের সীমাবদ্ধতা সেই নির্বাচনী ক্ষেত্র অবধিই। আবার আবু আয়েষ মন্ডল কিংবা রেজ্জাক মোল্লার মত যারা সিপিএম থেকে তৃনমূলে এসেছেন, তাঁদের অতীতের রাজনৈতিক পেক্ষাপট দক্ষিনপন্থী ভোটারপদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত দুবছর কখনও টিপু সুলতান মসজিদের একদা ইমাম বরকতি সাহেব, আবার কখনও বা জমিয়ত উলেমা হিন্দের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তৃনমূলের সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে বিকশিত ছিলেন।
সম্প্রতি টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বরকতি সাহেবের গাড়ীতে লালবাতি লাগানো নিয়ে তৃনমূল নেতৃত্বর সাথে ব্যাপক দুরত্ব বাড়ে। এমনকি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে মাঠে নামিয়ে বরকতি সাহেব কে ‘ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়’ বলে কোন কোন মহলের দাবি। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূলে সরাসরি যোগদানের পর থেকে মন্ত্রিত্ব পাওয়া ছাড়া তেমন কিছু কপালে জুটেনি। নিজ বিধানসভা কেন্দ্র মঙ্গলকোটে বিধায়ক হবার সূচনালগ্ন থেকেই দলের স্থানীয়, জেলা কমিটির কাছে বয়কটের শিকার হয়ে চলেছেন।ববিরোধীদলের বিধায়ক নন, শাসকদলের মন্ত্রী হয়েও বিধায়ক তহবিলের কোন উন্নয়নকাজ করতে সেভাবে পারেননি। অনুদান ফিরে গেছে গোষ্ঠীবিবাদের সৌজন্যে। কালো পতাকা থেকে মহিলাদের ঝাঁটা হাতে গালিগালাজ সবই পেয়েছেন তিনি! পঞ্চায়েত ভোটে কোনও আসনে তাঁর অনুগামীদের দাঁড় করাতেও পারেননি সিদ্দিকুল্লাহ।
এই নিয়ে নানান ক্ষোভ দেখিয়েছেন মঙ্গলকোট বিধায়ক। সরকারী নিরাপত্তারক্ষী–গাড়ী ছেড়ে দেওয়া। রাজভবন কিংবা বিকাশভবন না যাওয়া। রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকেও যোগ দেননি তিনি। সিদ্দিকুল্লাহের এহেন দোদুল্যমান অবস্থা দেখে তৃনমূল সংখ্যালঘু মুখের সন্ধানে নেমে পড়েছে বলে খবর। ইতিমধ্যে তারা ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি কে শিক্ষামন্ত্রী কে দিয়ে ডাক পাঠিয়েছিলেন। মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ ত্বহা সিদ্দিকি তৃনমূলের এই ফাঁদে পা দেননি। সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছিলেন তিনি ” তৃণমুলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মন্ত্রীরা কত কঠিন অবস্থায় আছেন, তাতে তিনি অবগত।” এমনকি এক ইসলামিক জলসায় যোগ দেওয়ার পূর্বে কোলাঘাটে এক লজে তৃনমূলের অন্দরে মাথাব্যথা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সাথে একান্তে আলোচনা চালান ত্বহা সিদ্দিকি।
এই মুহুত্যে বাংলা জুড়ে প্রভাব আছে মু্হাম্মদ কামরুজাম্মানের। ‘সারাবাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ সহ ইমাম–মোয়াজ্জেনদের সংগঠনের কর্মকর্তা তিনি। অতীতে বাম আমলে মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়ানের রাজ্য সম্পাদক হিসাবে সিপিএম নেতাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। সারা বছরই নানান অরাজনৈতিক আন্দোলনে জনসমাগম করাটা তাঁর সাংগঠনিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যেমন আন্দ্রোলন চালান, আবার রাজ্যসরকারকেও রেয়াত করেননা তিনি বিভিন্ন বিষয়ে। পঞ্চায়েত ভোটে সংখ্যালঘু মানুষদের প্রাণহানি নিয়ে তাঁকে সরব হতে দেখা গিয়েছে। তাই তৃনমূল নেতৃত্ব এহেন সংখ্যালঘু নেতাকে সিদ্দিকুল্লাহের বিকল্প হিসাবে পাবে কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। প্রগেসিভ ইয়ুথ ফ্রন্টের রাজ্য সভাপতি সিরাম আলী ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক তথা সংবিধান বাঁচাও সমিতির অন্যতম কর্মকতা ফারুক আহমেদ সহ বেশকিছু সংখ্যালঘু সংগঠনের কর্মকর্তা আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃনমূলের সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে ব্যবহার করার রণনীতি নেওয়া হচ্ছে বলে তৃনমূলের শীর্ষ এক নেতার সুত্রে প্রকাশ। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের লড়াই করতে তৃনমূল বাংলায় ত্রিশ শতাংক মুসলিম ভোটকে নিজেদের সপক্ষে রাখতে সংখ্যালঘু মুখ আবশ্যিক হয়ে দাঁড়াবে ভোটব্যাংক অটুট রাখতে। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে নানান অবস্থান তৃণমূল নেতৃত্ব কে এখন থেকেই বিকল্প খোঁজবার পথ কে প্রশস্ত করছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কলকাতার বুকে ঐতিহাসিক মহামিছিলে আদিবাসী-এসসি-এসটি-সংখ্যালঘুরা এবার ঐক্য গড়ে চরম হুঁশিয়ারি দিল মোদী-মমতার সরকারকে। ঐতিহাসিক মহামিছিলের সংবাদ প্রকাশ করার জন্য সংবাদমাধ্যমকে অফুরন্ত ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফারুক আহমেদ। কলকাতার বুকে ঐতিহাসিক মহামিছিলে আদিবাসী-এসসি-এসটি-সংখ্যালঘুরা এবার ঐক্য গড়ে চরম হুঁশিয়ারি দিল মোদি-মমতার সরকারকে।২৮ এপ্রিল শনিবার কলকাতার বুকে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল বহু বঞ্চিত এসসি, এসটি, ওবিসি, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এসসি, এসটি-আদিবাসী-মুসলিমদের ডাকে ঐতিহাসিক মহামিছিল ও জনসভার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করা। সংবিধান বাঁচিয়ে রাখার অগ্নিশপথে হাজার হজার মানুষ পথে নামেন।
সুকৌশলে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম উপেক্ষা করেছে এই সংবাদ প্রকাশ না করে। আবার কয়েটা সংবাদমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংখ্যালঘু, আদিবাসী, এসসি, এসটি, মাতুয়া ও আদিভারতবাসীর কল্যাণে গবেষক, ব্যতিক্রমী তুরুণ-তুর্কী নেতা তথা উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন “আগামী দিনে সংবিধান রক্ষা করার মহত প্রয়াসকে সফল করতে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। এই আশা ও প্রত্যয় আমাদের আছে। যে সব সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করতে পারেনি আমরা আশা রাখি আগামীতে তাদেরকেও আমরা পাশে পাব সংবিধান বাঁচানোর প্রয়াস সার্থক করতে। আমজনতার অধিকার সুরক্ষিত রাখার লড়াইয়ে আমরা পথে নেমেছি যখন তখন এর শেষ দেখেই ছাড়ব। আমরা আমাদে অধিকার ছিনিয়ে নেব।”