রাজপথে আছড়ে পড়ল লক্ষাধিক দলিত-মুসলিম-আদিবাসী ঐক্যের  মহামিছিল


শনিবার,২৮/০৪/২০১৮
780

নিজস্ব সংবাদদতা, কলকাতা: দেশজুড়ে দলিত মুসলিম আদিবাসীদের নির্যাতন ও নিজেদের সংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষে কলকাতার রাজপথে আছড়ে পড়ল লক্ষাধিক দলিত-মুসলিম-আদিবাসী ঐক্যের সংবিধান বাঁচাও সমিতির মিছিল।
শনিবার দুপুরে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে দুটি বৃহৎ মিছিল ধর্মতলাতে একত্রিত হয়ে রেড রোডে ড. বি আর আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে এসে একত্রিত হয়। এই মিছিলে রাজ্যের বিভিন্ন সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এই মহামিছিল হয়। মিছিল শেষে আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করে এক সমাবেশে বক্তারা দেশের সর্বত্র শিশু নারী সহ দলিত মুসলিম আদিবাসী নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানান। এবং আগামী দিনে রাজ্যের দলিত আদিবাসী মুসলিমদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে একসাথে আন্দোলন করার অঙ্গীকার করেন। সমীর কুমার দাস ও ফারুক আহমেদ, বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, কঙ্কন কুমার গুঁড়ি, স্বপন কুমার হালদার, সুচেতা গোলদাররা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম, শরদিন্দু উদ্দীপন, মহঃ নুরউদ্দিন, সুব্রত বাঁটুল, প্রশান্ত বিশ্বাস, সজল মল্লিক, অনন্ত আচার্য প্রমুখ। এছাড়াও সংবিধান বাঁচাও কমিটির কোর কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যপালকে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। দলিত ও সংখ্যালঘু নেতাদের মধ্যে পাঁচজন প্রতিনিধি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে দলিত ও সংখ্যালঘুদের বঞ্চনার প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি তুলে দিয়ে ডিটেল বক্তব্য তুলে ধরেন, সমীর কুমার দাস, ফারুক আহমেদ, মহঃ কামরুজ্জামান, বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো, সুচেতা গোলদার।
সংবিধান বাঁচাও সমিতির ডাকে ২৮ এপ্রিল মহামিছিল ও সমাবেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলে দলে যোগ হাজার হাজার মানুষ আজ প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ও দলিত, সংখ্যালঘুদের তরুণ তুর্কী নেতা ফারুক আহমেদ বক্তব্য রাখার সময় এবং রাজ্যপালকে বলেন, “সংবিধান বাঁচাও সমিতির ডাকে কলকাতার রেড রোডে আজ এপ্রিল মহামিছিল ও সমাবেশে রাজ্যে ও দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলে দলে হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়ে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে বিপুল সাড়া দেন। আমারা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিললাম ২৮ এপ্রিল, শনিবার বিকেল চারটের সময় “সংবিধান বাঁচাও সমিতি”র পক্ষ থেকে। দেশে ও রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে এবং এসসি-এসটি আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে কয়েকদফা দাবিসম্পন্ন আবেদন তুলে দিয়ে আমরা আলোচনা করললাম রাজ্যপালের সঙ্গে। দলিত ও সংখ্যালঘুদের বঞ্চনার অভিযোগ জানিয়ে তার প্রতিকার করার আবেদন রাখলাম রাজ্যপালের নিকট। দলিত ও সংখ্যালঘুর প্রতিনিধি হয়ে আমরা পাঁচজন দেখা করে রাজ্যপালের কাছে সব তুলে ধরলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত ১৪ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রাজনৈতিক হিংসায় আর কারও প্রাণ যেন না যায় সেই আবেদনও রাখলাম। গণতন্ত্র রক্ষা করতে সরকারের বড় ভূমিকা নিতে হবে। রাজ্যপালকেও সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে।
দেশের কল্যাণে ও রাজ্যের মানুষের কল্যাণে “সংবিধান বাঁচাও সমিতি”র ডাকে দেশে ও রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে আমরা বদ্ধপরিকর থাকব। এই প্রসঙ্গে কিছু কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরছি।  মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনকল্যাণ ও গ্রন্থগার দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ্ চৌধুরী আমাকে জানিয়েছিলেন, “মঙ্গলকোর্ট বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের নিরাপত্তা ও তাদের ভবিষ্যৎ সুরোক্ষিত রাখার স্বার্থে রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে আমার যে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল তা আমি ছেড়ে দিয়েছি। এমন কি সরকারি গাড়িও আমি আর ব্যবহার করছি না।”
রাজ্যের বিশেষ করে সাধরণ মানুষ বিশেষত্ব আর্থিকভাবে পিছিয়েপড়া মানুষের জীবনহানি প্রতিনিয়ত ঘটছে। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা আজ সঙ্কটের মুখে। সংবিধানের চতুর্থ স্থম্ভ বলে পরিচিত সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিককুলও রেহাই পাচ্ছে না। এক ধরনের ভয় চারপাশ ঘিরে ধরেছে। নিরাপত্তা আজ যেন কারো নেই। তাই মন্ত্রী হিসেবে সরকার থেকে পাওয়া সিদ্দিকুল্লাহ্ চৌধুরীর নিজস্ব  পুলিশি নিরাপত্তা তা তিনি ছেড়ে দিয়েছন। এমন কি সরকারি গাড়িও তিনি আর ব্যবহার করছেন না। সাধারণ মানুষের স্বার্থে তিনি আজীবন লড়াই করেছিলেন এবং আগামী দিনেও তিনি তাই করবেন। সাম্প্রতিককালে তিনি ফুরফুরা শরিফের জনপ্রিয় পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
গোটা দেশের দিকে একটু আলোকপাত করছি এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, ঋণের দায়ে গত তিন বছরে ৩৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। দৈনিক ৩৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আত্মহত্যার ঘটনা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে আন্না হাজারে বললেন, ‘মোদি সরকার কৃষকদের কল্যাণে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও লাভজনক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে। কৃষকদের চেয়ে শিল্পপতিদের নিয়ে মোদি সরকার বেশি চিন্তিত। গণতন্ত্রে সরকারের চাবি থাকে জনতার হাতে এবং তাদের সরকারকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া উচিত। দেশের কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তারা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। কৃষকরা জমিতে সেচের জন্য সস্তা মূল্যে বিদ্যুৎ ও পানি পাচ্ছে না, খালে পানিও সরবরাহ হচ্ছে না।’ তিনি সরকারের কাছে কৃষি কমিশন গঠন করে তাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আন্না হাজারে কৃষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২৩ মার্চ থেকে দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলেন। দুর্নীতির সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করে আন্না হাজারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেন, ‘মোদি নিজেই বলেছিলেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ (নিজেও ঘুষ খাব না, কাউকে খেতেও দেবো না) কিন্তু দুর্নীতির ঘটনা একনাগাড়ে প্রকাশ্যে আসছে। এরফলে তার কাজকর্মের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখন মানুষের সচেতন হওয়ার সময়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন সরকারকে নির্বাচিত করা উচিত যারা সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবে।’
কেন্দ্রীয় সরকার জনলোকপাল বিল দুর্বল করেছে বলেও আন্না হাজারে মন্তব্য করেন। আন্না হাজারে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘কৃষকবিরোধী সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন। তার ওই মন্তব্যের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করছি। তিনি যথার্থ এবং সঠিক কথাই বলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকবিরোধী ও আমজনতাবিরোধী সরকারে পরিণত হয়েছে। আমরা দেখছি প্রত্যেকদিন ৩৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঋণের দায়ে গত তিন বছরে ৩৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আত্মহত্যার ঘটনা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সরকারকে তো কৃষকবিরোধী সরকার বলতেই হয়। এই সরকারের আমলে একেরপর এক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ভারতের কেন্দ্র সরকার জনবিরোধী সরকার।
বাংলায় ও ভারতে নতুন সূর্য ওঠার ডাক দিচ্ছেন দলিত-সংখ্যালঘু নেতারা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও দলিত ইস্যু নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদক্ষেপের ভূয়ষি প্রশংসা করছেন সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো এক রিপোর্টে প্রকাশ, বিগত দশ বছরে দলিত নির্যাতনের ঘটনা ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ১৫ মিনিটে ১টি করে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে দলিতদের বিরুদ্ধে। দেশে দলিতদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে দলিতদের মনে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের ঘটনাও চরমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বিকাশ বিশ বাঁও জলে ঠেলে আমরা দেখছি গোটা দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা।
প্রতিদিন ভারতে দলিতের ৬ জন নারী ধর্ষিতা হন। বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলিতে দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। “লাভ জেহাদ” ও “গো রক্ষা”-র নামে অসহায় সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যা চোখে দেখা যায় না, এই সব দৃশ্য  আদিভারতবাসীদের চোখে জল আনছে।
এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন ও দলিত-সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রতিকার করতে ভারত জুড়ে দলিত ও সংখ্যালঘু জাগরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। কলকাতার রাজপথে মহামিছিল ও প্রতিবাদসভার ডাক দিয়েছি দলিত ও সংখ্যালঘুরা আগামী ২৮ এপ্রিল বিভিন্ন দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সংগঠন নেতৃত্ব দেবে এই মহামিছিল ও প্রতিবাদসভার।
সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পরামর্শ দেবেন দলিত ও সংখ্যালঘু নেতারা। এই মহান  ভারতে বেশিরভাগ আদিভারতীয়দের মধ্যে দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলমানরাই সর্বদিকে সর্বাধিকভাবে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছেন। এই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে হবে দলিত ও মুসলমানদের।
পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা কাটাতে অভিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে এই দাবিও রাখছি। মাদ্রাসায় এখন‌ও দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাই অধিক। সে জন্য‌ই কি রাজ্য সরকার এতো অবহেলা করছে মাদ্রাসার প্রতি? শিক্ষক নিয়োগে এতো অনীহা কেন? জোরালো প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। রাজ্য সরকার অনুমোদিত ৬১৪ টি মাদ্রাসায় ৭০ শতাংশ শিক্ষক পদ এখনো শুন্য। মাদ্রাসা শিক্ষা আজ ভেঙে পড়েছে, সরকার তবুও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কোন অদৃশ্য কারণে? বিশ বাঁও জলে তলিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। কোর্টে কেস চলার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার চরম অবহেলা করছে মাদ্রাসার প্রতি। এর ফল ভুগতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসর বর্তমান সরকারকে। রাজ্যে নামেই সাতজন মুসলিম মন্ত্রী কিন্তু মুসলিমদের কাজের বেলায় একজনও যথেষ্ট পরিমানে কাজ করতে পারেন না। আর পারলে মাদ্রাসা সমস্যার কবেই সমাধান হয়ে যেত। রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে এই সরকার পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছে বললে ভুল হবে না। সাংবাদিকদের যে হারে পেটানো হলো তা বলার নয়।
ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত এই কেন্দ্র ও সরকার “ওয়াক্‌ফ উন্নয়ন করপোরেশন” তৈরি করল না। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দিনের পর দিন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। বেদখল সম্পত্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বর্তমানে যে সব সম্পত্তি আছে তা রক্ষা করতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ওয়াক্‌ফ বোর্ডের কাজ দেখলে মনে হবে গভীর সঙ্কটে আছে। এই সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একটাও হাই মাদ্রাসা নতুন করে অনুমোদন দেয়নি। সবাই জানি একটাই গল্প দশ হাজারের ভাওতা। সংখ্যালঘু মুসলিম আধিকারিকদের পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনে নীতিনির্ধারণের কোনও জায়গায় রাখা হচ্ছে না।
“সংবিধান বাঁচাও সমিতি”র ডাকে ২৮ এপ্রিল মহামিছিল ও সমাবেশে এসব প্রশ্নকে সামনে রেখে দলিত ও সংখ্যালঘু মহাজোট তৈরি করার প্রয়াস নেব। সেই জায়গা তৈরি করতে পারি আমরা এ রাজ্যে। সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু ভাতা, ‘শ্রী’ যুক্ত প্রকল্প ছাড়া এই সরকার কিছুই করেনি। অথচ এই সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল তারা ক্ষমতায় এলে সাচার কমিটির সুপারিশ এই রাজ্যে রূপায়িত করতে বদ্ধপরিকর থাকবে। ক্ষমতায় এসে রাজেন্দ্র সাচারকে রাজ্যে আনা হয়েছিল কিন্তু তাঁর সুপারিশ মানা হয়নি। বাস্তবিক গুরুত্বপূর্ণ রাজেন্দ্র সাচারের সুপারিশকৃত পরামর্শ আজও প্রয়োগ করতে এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ছিল “সমসুযোগ কমিশন” গঠন করতে হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যাঙ্ক থেকে বেশি বেশি সংখ্যালঘুদের ঋণ দিতে হবে। রাজ্যস্তরে সংখ্যালঘুরা উপকৃত হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য রাজ্যস্তরে তথ্যপঞ্জী ব্যাঙ্ক গঠন করতে হবে যাতে অন্যান্য অংশের মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে সংখ্যালঘু উন্নয়নকে তুলনামূলক ভাবে বিচার করা যায়। রাজ্য সরকারের প্রশাসনে সংখ্যালঘু মুসলমিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়েনি। সাংসদ প্রতিনিধি বিশেষ করে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সংখ্যা বাড়লেও সংখ্যালঘু প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়েনি, তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। পৌরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকাতে ওবিসি ক্যাটাগরি “এ” এবং “বি” করে সংখ্যালঘু মুসলিম প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে এবং বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। অনেক জেলাপরিষদে ৬০-৭০ শতাংশের কাছাকাছি মুসলিমদের বসবাস থাকলেও সেখানে কোনও মুসলিম নেতা ও নেতৃকে প্রার্থী করা হয়নি।
১২ টি এমন বিধানসভা কেন্দ্র আছে যেখানে সংখ্যালঘুরা ৫০ শতাংশের অধিক অথচ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সংরক্ষিত আসন করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যসরকার আজ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এসসি-এসটি-ওবিসি সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য এই সরকার অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে। একেই গরিব পিছিয়ে পড়া, তার উপর অনলাইন? এই সিদ্ধান্তের জন্য সবাইকে টাকা নিয়ে শহরে ছুটতে হচ্ছে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করতে। আবার সবাই সার্টিফিকেটও পাচ্ছে না, যার ফলে চাকরি, ভর্তি সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ওবিসি সংরক্ষণের নামে বঞ্চনা চলছে। বহু ক্ষেত্রে ওবিসি সার্টিফিকেট আছে এমন চাকরিপ্রার্থীর আবেদনকারীদের আবার সাধারণ ক্যাটাগরিতে চাকরিই দেওয়া হচ্ছে না। এখন ওবিসি সার্টিফিকেট আছে তেমন চাকরি প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই করে দু’একটা কোথায়ও চাকরি হচ্ছে। এবছর মুর্শিদাবাদ জেলায় সামান্য প্রাইমারি চাকরি পরীক্ষায় বহু যোগ্য সংখ্যালঘুদের সুপরিকল্পিত ছকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বহু টেট পাশরা আজও চাকরি পায়নি। রাজ্যসরকারের চাকরিতে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিভাগে সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে এই সব জায়গায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব বাড়েনি।
জনসংখ্যার অনুপাতে বহু বেশি পরিমাণে মুসলিমরা শুধুমাত্র কারাগারে রয়েছে। ভাবুন পরিবর্তনের জন্য আমরা অধিক সংখ্যায় সংখ্যালঘুরা এই সরকারকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছি। বাম সরকারের পতন সুনিশ্চিত করেছিলাম তৃণমূল কংগ্রেসকে জিতিয়ে সরকার গড়েছি। বাস্তবিক আমাদের কল্যাণে এই সরকার কিছুই করছে না কিন্তু মুখে বলছে ৯৯ শতাংশ কাজ করে দিলাম। রাজ্যের যে-কোনও রাজনৈতিক দলের দিকে চোখ রাখলে দেখত পাই শহীদের তালিকায় মুসলমান ও দলিতরাই আছে। বাস্তবিক সব রাজনৈতিক দল সুপরিকল্পিতভাবে দলিত ও মুসলমানদের লড়িয়ে দেয়, ফলে মারে ও মরে এই উভয় সম্প্রদায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ ও রাজ্য সরকারের ৮২ টির মতো স্বশাসিত সংস্থার চেয়ারপার্সন বা কর্ণধার ও কমান্ডিং পদে কোনও দলিত ও মুসলমান আধিকারিককে বসানো হয় না। ব্যতিক্রম হয়েছিল পিএসসিতে তবে তাঁকে দিয়ে অন্যায় কাজ করিয়ে নিতে না পারায় তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ না হতেই তিনি নিজের সম্মান বাঁচাতে চেয়ারম্যান (শেখ নুরুল হক, আইএএস) পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এটা অনেকেই জানেন। এখনও পর্যন্ত কোনও মুসলমান আধিকারিক পিএসসিতে সামান্য সদস্যও নেই।
যা ভারতের অন্য রাজ্যে ভাবাই যায় না। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কোনও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে ডিজি ও পুলিশ কমিশনার করা হয়নি। আমরা দেখেছি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমান এবং দলিত নেতাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই থাকে না। ৬৪ সালের দাঙ্গার পর রাজ্যবাসী খুব একটা বড় ধরনের দাঙ্গার মুখোমুখি হয়নি। এখন আমাদের দেখতে হচ্ছে হালিশহর, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, ধুলাগড় ও আসানসোলেরর মতো  প্রভৃতি এলাকার দাঙ্গার ভয়াবহতাকে। ধর্মের নামে অস্ত্রের ঝনঝনানি আজ বাড়বাড়ন্ত, যেন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য এ রাজ্য যে সম্প্রীতির নিরাপত্তা ছিল তাও আজ সঙ্কটের মুখে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রোধে ও দাঙ্গা-পীড়িতদের ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের স্বার্থে কংগ্রেসের ইউপিএ সরকার যে আইন তৈরি করেছিল তা আজও বিজেপি সরকার আইনে পরিণত করেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে আইন তৈরি করছে না কেন? উন্নয়নের নামে সব জায়গায় দলিত ও মুসলমানদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে কিন্তু উন্নয়নের অংশে তাদেরকে ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে।
রাজ্যে মুসলমান ও দলিতদের জমি নিয়ে বসবাসের জন্য যত উপনগরী তৈরি হয়েছে সেখানে মুসলমানদের ঠাঁই হয়নি। অল্প জায়গায় ঘেটোবাসী হয়ে বসবাস করাটাই তাদের এখন ভবিতব্য হয়ে উঠেছে। তাই কোনোরূপ অজুহাত রাজ্যের মানুষ আর শুনতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত চাকরির পরীক্ষাগুলিতে সঠিকভাবে রোস্টার মানা হচ্ছে না। এই চরম বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে এসসি-এসটি-ওবিসি-“এ” এবং ওবিসি-“বি” চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে। রোস্টার মেনেই চাকরি দিক রাজ্য সরকার। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঞ্চনার অবসান ঘটাতে বাধ্য করতে হবে সরকারকে। রাজ্যে যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিত আধিকারিকদের গ্যারেজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে, এই বৈষম্য দূর করতে হবে অবিলম্বে। ২৩টি জেলায় চোখ রাখলে কোনও ডিএম ও এসপি বা কমান্ডিং পোস্টে যোগ্য ও সৎ আধিকারক কাউকে দেখছি না। কেন? চাকরিরত যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, কেন? এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে হবে।
ডিজি এবং কমিশনার অফ পুলিশ পদে কখনও কোনও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি ইতিপূর্বে। পশ্চিমবঙ্গ শাসনকালে কোনও রাজ্য সরকার এই সৎ সাহস দেখাতে পারিনি কেন? এর উত্তর আজও অজানা। আমরা ভেবেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের মা মাটি মানুষের সরকার ব্যতিক্রম হবে, কারণ মা মাটি মানুষের কল্যাণে এই সকার কারও প্রতি বঞ্চনা করবে না এই আশা ছিল আমাদের। আমরাই ভোট দিয়ে সরকার গড়েছি। বাস্তবিক দেখা গেল তাঁর রাজত্বে সাতজন কমিশনার অফ পুলিশ পদে যারা দায়িত্বে আছেন তাঁদের মধ্যে কিন্তু একজনও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে দায়িত্বে দেওয়া হয়নি। বলতে দ্বিধা নেই চরম চাতুরী করে যোগ্য মুসলিম পুলিশ আধিকারিকদেরকে কম ও গুরুত্বহীন পদে দিয়ে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সম্মানীয় ম্যাডাম কার কুযুক্তিতে এসব করছেন ভেবে পাই না। অথচ মুসলিমদের মধ্যে ডিআইজি পদমর্যাদাসম্পন্ন যোগ্য অনেকগুলো পুলিশ এই রাজ্যে গুরুত্বহীন পদে আছেন। তবু কেন তাঁদেরকে কমিশনার অফ পুলিশ পদে দেওয়া হচ্ছে না? যারফলে উঠছে প্রশ্ন? এই বৈষম্য ও বঞ্চনার প্রতিকার চাই। আর কতদিন চলবে এই বৈষম্য? আমারা প্রতি থানাতে এবং পুলিশ প্রশাসনে দলিত, এসসি, এসটি, ওবিসি এবং মুসলিম পুলিশ আধিকারিকদেরকে মর্যদার আসনে তুলে আনতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাহাদুরের কাছে আবেদন রাখছি। সাতটি পুলিশ কমিশনারের মধ্যে অন্তত্য তিনজন মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে দায়িত্ব দিতে হবে। কারণ মুখে প্রচার রাখেন মুখ্যমন্ত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার না কি প্রকৃত অর্থেই সংখ্যালঘু দরদী সরকার? কিন্তু বাস্তবিক কার্যক্ষেত্রে একটু দরদ দেখাবেন এই আশা তো আমরা করতেই পারি।
তাঁর নিজের উদার মনকে আর একটু উদার করবেন আমাদের কল্যাণে। এই প্রত্যয় ও আশা আমরা করতেই পারি। রাজ্যে সমসুযোগ ও সমবিকাশ প্রতিষ্ঠা করতে সরকার উদ্যোগী হোক। রাজ্যের আমজনতার কল্যাণে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া এবং রক্ষা করা সরকারের প্রাথমিক কাজ বলে মনে করি। সব ধর্মের, সব বর্ণের ও সর্বশ্রেণীর মানুষের কল্যাণে সমদৃষ্টি দিয়ে আমাদের রাজ্যসরকার পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন করুক। কাউকে বঞ্চিত করে বা পিছনে ঠেলে রাজ্য ও দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার অবসান ঘটাতেই হবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতা মুক্তো শিক্ষাদান করতে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
তার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথে নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ইসলামি থিয়োলজী বিভাগ তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে হবে।
রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের টনক নড়াতে দলিত ও সংখ্যালঘুরা বদ্ধপরিকর হয়েছেন। তারপরও যদি সরকারের সুমতি না ফেরে তাহলে বাংলায় নতুন সূর্য ওঠবে আমাদের নেতৃত্বে। নতুন ভাবে বাংলার কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফেরাতে আসুন আমরা জোটবদ্ধ হই। বিপন্ন বাংলা ও দেশের মুক্তি সুস্থ গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা। সংবিধান বাঁচাতে আমরা বদ্ধপরিকর হয়ে পথে নামছি আপনিও নামুন। দেশকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করুন। আগামী দিন সুস্থ গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য আজ ২৮ এপ্রিল মহামিছিলে করে দলে দলে যোগ দিয়ে এই মহামিছিল ও সমাবেশ সফল করার জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আজ সকাল ১১ টার মধ্যে শিয়ালদহ ও হাওড়ায় চলে আসে বহু মানুষ মিছিলে হাঁটার জন্য।
সঙ্গে ছিল কালো ছাতা আর জলের বোতল ও ফেস্টুন।  আমাদের সংগ্রমার দলিত ও সংখ্যালঘুর মর্যাদার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম। আমাদের সংগ্রাম দেশে ও বাংলায় গণতন্ত্র ফেরানোর সংগ্রাম।”

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট