ফারুক আহমেদ: ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন, কলকাতায় ১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার বিকেল ৫ টাতে শ্রী অরবিন্দ ভবনে ৮, শেক্সপিয়ার সরণি, কলকাতা ৭০০০১৭ এক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। উক্ত অনুষ্ঠানেও বাংলাদেশের সম্মানিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে এপার বাংলার কিছু মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। বহু মানুষ এই আলোচনাসভাতে অংশ নিয়ে আলোচনা শুনে সমৃদ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করা হয়। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। ওই দিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং মেজর জেনারেল এম এ রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। পরের দিন দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে ১৭ই এপ্রিল শপথগ্রহণের এই সংবাদ ফলাও করে ছাপা হয়। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ কে স্বাগত জানিয়ে অন্যান্য বছরের মত এবারও পহেলা বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ) শনিবার, বিকেল ৪ টের সময় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন, কলকাতা কতৃক “মঙ্গল শোভাযাত্রা”র আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র, ৩ সোহারওয়ার্দী এভিনিউ, কলকাতা ৭০০০১৭ হতে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন পর্যন্ত এই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল। কবিতাপাঠ, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত পরিবেশন ও সমবেত নৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠান জমে ওঠে। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানটি সফল করতে বহু সপরিবার ও সবান্ধব অতিথির আগমন ঘটে। বিভিন্ন আবৃত্তি শিল্পীরা অপূর্ব আবৃত্তি পরিবেশন করেন যা সকলকেই মুগ্ধ করে। কচিকাঁচাদের নৃত্য পরিবেশনও সকল দর্শকমহলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়। এই অভিনব সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আনন্দঘন পরিবেশ ছিল বড় মায়াবী। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের আন্তরিক ব্যবহার সকল অতিথিদেরকেও মুগ্ধ করল। এদিন বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আগত সকল অতিথিদেরকে ডিনার করান।
বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের উদ্যোগে “সম্প্রীতির বাংলাদেশ” শিরোনামে কলকাতায় আইসিসিআরে সেমিনার দাগ কাটল। গত শনিবার কলকাতায় একটি বৃহৎ আকারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতা। “সম্প্রীতির বাংলাদেশ” শিরোনামে আইসিসিআর হলে এই সেমিনারের আয়োজন ছিল চোখে দেখার মতো।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ও কবি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পবিত্র সরকার সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাংসদ অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার, মহাসচিব তথা তৌফিক হাসানও উপস্থিত ছিলেন। সম্মানীয় অতিথিদের মূল্যবান আলোচনা ও বক্তব্য বাংলাদেশের পরিচয় নতুনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কলকাতার আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভার বিষয় ছিল সম্প্রীতির বাংলাদেশ। আয়োজনে ছিল তথ্যমন্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতা। এই আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সবুজকলি সেন প্রমুখ। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর আলোকপাত করেন। প্রদর্শিত হয় কয়েকটি মহা মূল্যবান তথ্যচিত্র।
বাংলাদেশ শুধু একটি দেশ নয়, মাতৃভাষা এবং তার সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসা ও উৎসর্গীকরণের জন্য বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ। যেখানেই বাংলাদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে তারা তাদের সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরবে। বিশ্বের সামনে তাদের সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার প্রয়াস বহু দিন ধরে মানুষকে মুগ্ধ করে আসছে। কলকাতা চিরকাল বাংলাদেশের পাশে মৈত্রীর বার্তা নিয়ে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানে এগিয়ে এসেছে। সকলেই জানে কলকাতা ঐতিহাসিকভাবে বাংলা সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত সকল মানুষের জন্য একটি বিশাল ক্যানভাস।
তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় কলকাতার কলেজে কলেজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি বিশেষ কেন্দ্রবিন্দু করেছিলেন এই শহরকে। উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন মো: মোফাখখরুল ইকবাল, প্রথম উপদেষ্টা, বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন, কলকাতা। “সম্প্রীতির বাংলাদেশ” শিরোনামে একটি সেমিনারে এপার বাংলার বহু সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিল। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি সকলকেই মুগ্ধ করেছিল।
অন্যদিকে এই সাংস্কৃতিক মহামিলনকে নিয়ে প্রবল উৎসাহী ছিলেন “উদার আকাশ” পত্রিকার সম্পাদক ও কবি ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, এই ধরনের উৎসব দুই বাংলার মানুষকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে এবং দুই বাংলার মানুষের মনে সম্প্রীতির বার্তা এক অটুট বন্ধনে আবদ্ধ করবে। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে এই বিশেষ উৎসবের আয়োজনও সার্বিক ভাবে সফল হল এবং আগত মানুষদের মনে দাগ কাটল।