ভেলোরে যারা চিকিৎসা করতে চান তাদের জন্য কিছু প্র‌য়োজনীয় তথ্য


রবিবার,১৫/১০/২০১৭
992

ভেলোরে সি এম সি সম্পর্কে কয়েকটি কথা

১/ ভেলোর:-
ভেলোর এর ট্রিটমেন্ট কতটা উপযোগী & উন্নতমানের সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমরা সাধারনত কোন উপায় না পেলে অবশেষে ভেলোর যায়। ওখানে কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ, মেডিসিন, যোগাযোগ, এপোয়েন্টমেন্ট এর বিস্তারিত নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি যাতে সকলের সাহায্য হয়। প্রসেস খুব নিয়মানুযায়ী হয় যাস্ট একটু জটিল।

২/ভাষা :-
হিন্দি/ইংরাজী ঠিকঠাক জানলে প্রব্লেম হওয়ার কথা নয়, তবে এখন পেসেন্ট এর ৭০% ই বাঙালী (bangladesh & westbengal er)… তাই বাংলা হলেও কাজ চলে যাবে।

৩/এপোয়েন্টমেন্ট:-
এপোয়েন্ট মুলত দুই প্রকার এর হয়
{১.} জেনারেল এপোয়েন্টমেন্ট ( জুনিয়ার ডাক্তার দেখেন)
{২. }প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট(
সিনিয়ার ডাক্তার রা দেখেন)
এখান থেকে কেউ গেলে অবশ্যই প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট নেবেন।

৪/এপোয়েন্টমেন্ট পদ্ধতি:-
সাধারনত অফলাইন & অনলাইন দুই রকমের এপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়। যেহেতু আমরা বাংলা থেকে যাচ্ছি তাই আমাদের ওখানে কোন লোক নেই ধরে নিয়ে অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট করাতে হবে।
অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট :- মোটামুটি যেহারে ভীড় হয়, তাতে কোন ডিপার্টমেন্ট এর প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট পেতে আপনাকে ১৫ দিন থেকে ৩ মাস অব্দি সময় লাগতে পারে।

৫/অফলাইন এপোয়েন্টমেন্ট:-
ভেলোর এর মেন গেট এ ঢুকলেই দেখতে পাবেন SILVER GATE FOR NEW APPOINTMENT..
আপনি আপনার প্রব্লেম টা ওখানে জানালেই ওরা নিদিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এ এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে আপনি ৩-৩০ দিনের মধ্যে প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন একপ্রকার নিশ্চিত।

৬/জরুরীকালীন ট্রিটমেন্ট:-
এর জন্য আলাদা EMERGENCY বিভাগ রয়েছে, সেখানে যাবেন। ওরাই সব প্রসেস বলে দেবে।
জেনারেল এপোয়েন্টমেন্ট:- অনলাইন অথবা অফলাইন এ করা যায়। ১-৩ দিন এর মধ্যে এপোয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন।

৭/কোন ডিপার্টমেন্ট এ যাবেন???
আপনি অনলাইন এ আপোয়েন্টমেন্ট নিতে গেলে কোন ডিপার্টমেন্ট এ নেবেন সেটা জানা জরুরী, নাহলে টাইম & পয়সা নষ্ট। ধরুন- কানের প্রব্লেম- ENT, হরমোন প্রব্লেম- endocrinology, ক্যন্সার পেশেন্ট:- onchology etc..
যদি না বুঝতে পারেন তাহলে ওদের সাইট এ দেওয়া হেল্পলাইন এ ফোন করে জেনে নিতে পারেন। প্রব্লেম বললেই ওরা ডিপার্টমেন্ট বলে দেবে। আপনার রোগ এর লক্ষন অনুযায়ী ডিপার্টমেন্ট এর আন্ডারে CLINIC বাছতে হয়।

৮/থাকা :-
এখানে রুম এর চাহিদা যেমন বেশি তেমন লজ ও আছে প্রচুর। ডবল বা ট্রিপল বেড এর রুম ১৫০-২০০ থেকে শুরু করে ১৫০০-২০০০ টাকা অব্দি। আপনি CMC থেকে যত দুরত্ব বাড়াবেন তত লজের রেট কমতে থাকবে। মোটামুটি ৭-৮ মিনিট হাঁটাপথের দুরত্বে আপনি ২০০-২৫০ টাকার রুম পেয়ে যাবেন। আপনি ২৪ ঘন্টা মানে একদিনের জন্য রুম বুক করে একটু খোজাখুজি করে কম দামে ভাল রুম ও দেখতে পারেন।

৯/খাওয়া-দাওয়া:-
অজস্র বাঙ্গালী হোটেল আছে, আপনি ৪০-৬০ টাকা/মিল হিসাবে ভাত পেয়ে যাবেন। এছাড়া সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার ও উপভোগ করতে পারেন তবে ৩-৪ দিন এর বেশি টানতে পারবেন না।

১০/CMC DETAILS:-
সিএমসি এর মেন ৩-৪ টা বিল্ডিং।
১. OPD BUILDING (outdoor patients) – আপনাকে ডাক্তার দেখবেন মুলত এই বিল্ডিং এ। এর ৫ টা ফ্লোর এ কাজ হয় সাধারনত।
> গ্রাউন্ড ফ্লোর:- এই ফ্লোর টা সমস্ত টেষ্ট এর জন্য বরাদ্দ। blood, x-ray,urine test সহ প্রায় সব টেষ্ট এখানে হয়। ডাক্তার যে টেষ্ট গুলো লিখে দিয়েছে, সেই স্লিপ টা নিয়ে পেমেন্ট ক্যাস কাউন্টার এ যেতে হয়। পেমেন্ট করার জন্য CASH / DEBIT -CREDIT-ATM CARD/ CRISS CARD ব্যাবহার করা হয়।(বিস্তারিত পরে দেওয়া আছে).।
পেমেন্ট করার স্লিপ এ লেখা থাকবে আপনাকে কোথায় কোন রুম এ যেতে হবে। ধরুন ব্লাড টেষ্ট এর জন্য – G20, XRAY- G11 এই রকম। আপনি সকাল সকাল এসে লাইন এ দাঁড়িয়ে টেষ্ট গুলো করিয়ে নিন। সকাল ৬ টা থেকে কাজ শুরু হয়ে যায়। আপনাকে ৫-৫:৩০ টা থেকে লাইন এ দাড়াতে হবে তাড়াতাড়ি এর জন্য।
> ফাস্ট ফ্লোর, সেকেন্ড ফ্লোর, থার্ড় ফ্লোর এ বিভিন্ন রুম এ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর প্রাইভেট & জেনারেল ডাক্তার রা দেখেন। আপনার এপোয়েন্টমেন্ট লেটার এ লেখা থাকবে আপনাকে কোথায় কোন ফ্লোর এ যেতে হবে।
উদাহরন স্বরুপ:-
>OPD Building SECOND FLOOR 210, report to MRO at 10:30am… র মানে হল আপনাকে সেকেন্ড ফ্লোর এ ২১০ নং রুম এর সামনে গিয়ে MRO COUNTER E এপোয়েন্টমেন্ট কপি টা জমা দিতে হবে সকাল ১০:৩০এর সময়। ১ ঘন্টা আগে পিছু হলেও প্রব্লেম হয়না সাধারনত।
> ISSCC BUILDING:- এটাও OPD BUILDING এর মত গুরুত্ব পুর্ন। এখানে যেসব কাজ গুলো হয়, নিউ এপোয়েন্টমেন্ট, রিপিট এপোয়েন্টমেন্ট, ফার্মেসী, ক্রিস কার্ড, CASH PAYMENT, & অবশ্যই ডাক্তার রাও দেখেন উপরের ফ্লোর গুলিতে।

১১/ NEW APPOINTMENT:-
সাধারনত ৪-১০ অব্দি কাউন্টার এ নিউ আপোয়েন্টমেন্ট, টেষ্ট, অনান্য কিছুর জন্য পেমেন্ট করা হয় নগদ টাকার মাধ্যমে।

১২/REPEAT APPOINTMENT :-
11-13 নং কাউন্টার এ কোন ডাক্তার এর পুনরায় এপোয়েন্টমেন্ট করানো হয়। এক্ষেত্রে কাউন্টার এ বল্ললেই হবে ডাক্টার কবে দেখতে চেয়েছে, ওরা এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেবে।
ফার্মেসী :- সাধারনত ৩ মাসের জন্য ওষুধ দেয় রোগীদের। ফার্মেসী তএ পেমেন্ট করে ওষুধ নেবার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়।

১৩/ CRISS CARD:-
এই কার্ড টা বানিয়ে নিলে আপনার হয়রানি অনেকখানি কম হয়ে যাবে। আপানার HOSPITAL NO.( PATIENT ID) দেখিয়ে বললেই ৪০২ নং কাউন্টার থেকে ক্রিস কার্ড বিষয়ক যাবতীয় সাহায্য করে দেবে। এই ক্রিস কার্ডে আপনাকে টাকা ভরতে হবে অগ্রিম ভাবে ( trhough cash transffer /atm transffer). তবে আমি ATM card ইউজ করেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। ক্রিস কার্ডের মজা হল বেশি বড় লআইনে দাঁড়াতে হবে না পেমেন্ট এর জন্য কারন criss card payment counter আছে প্রায় সব জাইগায়।

১৪/APPOINTMENT DATE CHANGE:-
এগিয়ে বা পিছিয়ে আনা….
ISSCC building e HELPDESK এ লম্বা লাইন দেবেন পেমেন্ট স্লিপ টা নিয়ে। অনেক ভীড় হয়। ওখানে আপনার প্রব্লেম বঅললেই ওরাই ডেট চেঞ্জ এর ব্যাবস্থা করে দেবে।(আগে যদি ডেট ফাকা থাকে তবেই)

১৫/ PMR BUILDING:-
সাধারনত ফিজিওথেরাপি ডিপার্টমেন্ট বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি এর যন্ত্রপাতি, জুতা, ডুপ্লিকেট ব্রেস্ট( সিলিকন ব্রেস্ট), ইত্যাদি সকল জিনিস এর জন্য এই ডিপার্টমেন্ট এ যেতে হয়। পেমেন্ট স্লিপ অথবা এপোয়েন্টমেন্ট লেটার এ PMR BUILDING উল্লেখ থাকবে।

১৬/WARD BUILDING:-
পেশেন্ট দের সার্জারি & ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন এ এখানে পেশেন্ট দের ভর্তি করা হয়। এত পরিস্কার পরিছন্ন & জীবাণুমুক্ত জাইগা হয়ত আপনার বাড়ির রুমগুলিও নয়। DIAGONASIS এর উপর বেশি জোর দেয়। অনেক টেষ্ট দেয়। তারপর যখন রোগ ধরা পড়ে তখনই চিকিৎসা করে। (কোলকাতার চেয়ে এখানেই এগিয়ে)।
টেষ্ট গুলি মুলত ৩ জায়গায় করানো হয়।

১৭/OPD BUILDING:-
সাধারণত ম্যাক্সিমাম জনের টেষ্ট এখানেই করানো হয়। তবে বিশেষ কিছু টেষ্ট এর জন্য যেমন USG এর জন্য ৩-৪ দিন ও লাগতে পারে। তাই যখন ডাক্টার এর সাথে কথা বলবেন ওনাকে রিকুয়েস্ট করবেন যেন আপনার টেষ্ট গুলি ALPHA CLINIC এ পাঠিয়ে দেয়। ওনাদের একটা কলমের খোচা দিলেই আপনার ৩-৪ দিনের কাজ টি ১ দিনেই হয়ে যাবে।

১৮/ EMERGENCY PATIENT:-
এর জন্য এমার্জেন্সী টেষ্ট এর ব্যাবস্থা আছে।
এই টেষ্ট গুলোর কোন রিপোর্ট আপনি পাবেন না, টেষ্ট গুলো হয়ে গেলে অটমেটিক রিপোর্ট টা আপনার খাতায় চলে যাবে অর্থাৎ আপনার HOSPITAL NO. & যে ডাক্তারবাবু কে দেখবেন সেই ডাক্তারবাবুর এর কাছেও চলে যাবে। তাই, প্রব্লেম এর কিছু নেই। রিপোর্ট পেতে হলে আলাদা ভাবে এপ্লাই করতে হয় ।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট