পরিতোষ বর্মণঃ পুরোটাই যেন স্বপ্ন। মারা যাওয়া ব্যাক্তি আবার জীবিত হয়, ঠিক এমনটা দেখা যায় শুধুমাত্র সিনেমায়। না শুধুমাত্র সিনেমায় নয়, এমন অলিক ঘটনা ঘটলো দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ এলাকায়। ১১ বছর আগে মৃত এক যুবক হটাৎ গত বুধবার বাড়ি ফিরে আসায়, রীতিমত ভিমড়ি খাবার জোগার পরিবারের লোক থেকে প্রতিবেশীরা। গত বুধবার রেজাউল সরকার বাড়ি ফিরতেই সবাই প্রথমে ভুত ভেবে আত্কে ওঠে। পরে পুরো ঘটনাটি পরিবারের লোককে বললে সত্যিটা জানতে পারে সবাই।
জানা গেছে, কাজের খোঁজে প্রায় ১১ বছর আগে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হামিদুল মন্ডলের সঙ্গে ভিন্ন রাজ্যে গিয়েছিল কুমারগঞ্জ থানার ককটি গ্রামের রেজাউল সরকার। সেই সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর। ভিন রাজ্যে কাজে যাবার একমাসের মধ্যে তার পরিবারের কাছে খবর আসে রেজাউল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সেই শুনে তার শেষ অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে তার পরিবার। রেজাউলের স্মৃতি প্রায় মুছে ফেলেছিল প্রতিবেশীরা এমনকি পরিবারও। ১১ বছর পর গত বুধবার হঠাৎ ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলেন তার বাবা মকবুল সরকার ও তার মা বেলিখা বিবি। প্রথমে ভেবে ছিলেন ভুত বা স্বপ্ন দেখছেন না তো। কিছু পরে অবশ্য জানতে পারে তার মৃত ছেলে বেচে আছে। সে কোনদিনও মারা যায়নি। ছেলেকে ফের কাছে ফিরে পেয়ে আত্মহারা সকলে।
রেজাউল সরকার ক্যামারের সামনে কিছু বলতে না চাইলেও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাকে মুম্বাই নিয়ে গিয়ে কয়লা খনির মালিকের কাছে ভিরিয়ে দেয় হামিদুর মন্ডল। সেখানে তাকে ইঞ্জেকশান দিয়ে সংজ্ঞাহীন করে দেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে কয়লা খনিতে দেখতে পায় সে। সেখানে তার মত আরও বহু যুবক রয়েছে। যাদের হামিদুরের মত দালালরা কিছু টাকার জন্য বিক্রি করে দিয়ে গেছে। তাদের দিয়ে সারা দিন রাত কয়লা খোদাই-এর কাজ করানো হত। গত ১১ বছরে তারা কেউ সূর্যের আলো দেখতে দেওয়া হয়নি। কাজ করতে না চাইলে বা কিংবা বাড়ি আসতে চাইলে চলত নির্মম অত্যাচার। অবশেষে সুযোগ বুঝে সেই কয়লা খনি থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় রেজাউল সরকার।
মৃত ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। এটাই অনেক আরও কিছু চাই না। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই তার এমনটাই ক্যামেরার সামনে জানালেন রেজাউলের মা বেলিখা বিবি।
প্রায় ১১ বছর পর বাড়ি ফেরা !
বৃহস্পতিবার,১৪/০১/২০১৬
784