পৌষ সংক্রান্তিতে কদর বাড়ছে ছাম-গাহেনের


বৃহস্পতিবার,০৭/০১/২০১৬
1726

বিকাশ সাহাঃ    অত্যাধুনিক যন্ত্রের আধিপত্তে রাজবংশী সমাজ থেকে ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে ছাম ও গাহেন। উন্নত প্রযুক্তির ধান ভাঙ্গানো মেশিনের আবিস্কারের আগে ধান ভাঙ্গাতে, ছাতু বানাতে ও চিরা তৈরিতে এই ছামের ব্যবহার ছিল বহুল প্রচলিত। মূলত কাঁঠাল ও শাল কাঠের দুই থেকে আড়াই ফুটের গুড়ির ভিতরের দিক গর্ত করে ছাম বানানো হত। ছামের মধ্যে চাল বা ধান রেখে শাল কাঠের একটি বড় হাতল দিয়ে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হয়। এই শাল কাঠের হাতলকেই বলা হয় গাহেন। পাঁচ থেকে ছয় ফুট লম্বা গোলাকৃতি গাহেনের কখনও এমাথা তো কখনও ওমাথা দিয়ে চাপ দেওয়া হত। গাহেনের দুমাথায় লোহার বের পড়িয়ে দেওয়া থাকতো। যাতে ক্রমাগত চাপে দুই মাথা থেঁতলে না যায়।
একসময় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ একক ভাবে বা দলবদ্ধ ভাবে গ্রামগঞ্জে ধান ভাঙ্গানো বা চাল থেকে গুঁড়া তৈরি করতে মুল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন এই ছাম ও গাহেনকে। সেই সময় সঙ্গীতের তালে তালে তাঁরা এই কাজ করতেন। যারফলে প্রচণ্ড খাটনির এই কাজ করতে গিয়ে সময় ও পরিশ্রমের দিক থেকে তাঁদের মুশকিল অনেকটা আসান হত। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কম সময়ে প্রায় কোণও পরিশ্রম ছাড়াই বেশি পরিমাণ ধান ভাঙ্গানো, চিঁড়া তৈরি সহ চালের গুঁড়া তৈরি করা সম্ভব। ফলে গোটা বছর ধরে ছাম ও গাহেন ঘরের এক কোনেই পরে থাকে। শুধুমাত্র পৌষ পার্বণের আগে সন্তানদের মুখে একটু ভাল রকমের পিঠে পুলি তুলে দিতেই বছরের এই দিনটিকে ছাম ও গাহেন বের করে ধুয়ে মুছে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। কালিয়াগঞ্জের গ্রাম্য এলাকায় আগে অনেক বাড়িতেই এই ছাম ও গাহেনের ব্যবহার হলেও এখন গোটা গ্রাম ঘুরলে একটি বা দুটি বাড়িতেই তা নজরে পড়বে। যে বাড়িতে ছাম ও গাহেন রয়েছে সেখানে গিয়ে পৌষ পার্বণের বেশ কয়েক দিন আগে গ্রামের মহিলারা চালের গুঁড়ো বানিয়ে আনেন।
পৌষ পার্বণের মাত্র সপ্তাহ খানিক বাকি। তাই নতুন চালের গুঁড়ো করতে কালিয়াগঞ্জের গ্রামগঞ্জের মহিলারা এখন থেকেই ছাম ও গাহেনের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন।
কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ১ নম্বর অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সৌরি বর্মণ ও অনিতা বর্মণ এদিন চালের গুঁড়ো তৈরি করতে গিয়ে জানান, আটা ভাঙ্গানো মিলে চালের গুঁড়ো করলে তা দিয়ে পিঠে পুলি ভাল হয় না। মিলের চালের গুঁড়োর পিঠের স্বাদও তেমন পাওয়া যায় না। ফলে বছরের এই সময়টাতে আমরা সন্তানদের মুখে একটু ভাল পিঠে পুলি তুলে দিতেই ছাম ও গাহেন দিয়ে চালের গুঁড়ো তৈরি করি। একটু বেশি খাটনি হয় ঠিকই কিন্তু ভাল কিছু বানাতে ও খেতে গেলেতো একটু খাটনিতো করতেই হবে।DSCN8170

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট