খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জমিয়তে উলামা হিন্দ (এআইইউডিএফ) নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে দূরত্ব কমছে। সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর রাজ্য সম্পাদক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’তে বৈঠক হয়েছে। রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলা হলেও রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে এআইইউডিএফ-এর মধ্যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নবান্ন থেকে বৈঠক শেষে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূঁয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা বাস্তব সত্য যে, মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ প্রচেষ্টায় এ রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নানা কাজ করা হয়েছে।’
রাজ্যে সিপিএম পরিচালিত বাম জামানায় সংখ্যালঘু মুসলিমরা নানাভাবে বঞ্চিত হওয়ায় সেই সময় প্রতিবাদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। বাম আমলে জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধেও জোরালো আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে সংখ্যালঘু ভোট বামফ্রন্টের দিক থেকে সরে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে চলে যায়। যদিও ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেস মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি অধিকন্তু নানাভাবে তার বিরোধিতা করা হয়েছে।
২০১১ সালের নির্বাচনে দীর্ঘকাল বাদে বামফ্রন্ট পরাজিত হলে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর তৃণমূল শাসনের চার বছর পার হয়ে গেছে। এতদিনেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা রাজনৈতিক সমঝোতার কথা হয়নি। এই প্রথম মমতার ডাক পেয়ে বৈঠকে বসলেন তিনি। রাজ্য রাজনীতিতে যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল এবং এআইইউডিএফ-এর মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় রাজ্য রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ হতে চলেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এআইইউডিএফ নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী রাজ্যসরকারের ভূঁয়সী প্রশংসা করলেও রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অন্যান্য সংগঠন কিন্তু সরকারের ভূমিকায় খুশি নয় মোটেও। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গণআন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ইব্রাহিম সিদ্দিকির পক্ষ থেকেও।
আব্দুল আজিজ সম্প্রতি বলেছেন, ‘মুসলিমদের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন, এই সরকারের তা নেই। কয়েকজন ইমাম এবং মুয়াজ্জিনকে ভাতা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না।’
আব্দুল আজিজ আরো বলেন, ‘হজ হাউসের জন্য বিল্ডিং এবং আলিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস গড়লেই মুসলিমদের উন্নয়ন শেষ হয়ে যায় না। শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে মুসলিমদের যথাযথ অংশ থাকা প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের চার বছর পূর্ণ হয়ে গেলেও চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলিমরা বঞ্চিত হয়ে রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান হয়েছে, সাধারণভাবে মুসলিমরা সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে নানা দাবি করলেও ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ইব্রাহিম সিদ্দিকি সম্প্রতি বলেছেন, ‘মমতা ফুরফুরায় আইটিআই থেকে রেল প্রকল্পর নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা হয়নি।’
তিনি বলেছেন, ‘সরকার মুসলিম সমাজকে ধোঁকা দিয়েছে। সামনে বিধানসভা ভোট থাকায় মুখ্যমন্ত্রী কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করলেও আসলে তিনি সংখ্যালঘুদের বোকা বানাচ্ছেন। ইফতারে যোগ দেয়া দুই বিধায়ককে সাসপেন্ড করে মুখ্যমন্ত্রী মুসলিমদের প্রতি তার মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের কোণঠাসা হয়ে থাকা নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে এক ইফতার পার্টিতে শামিল হওয়ার পর তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত এবং শিউলি সাহাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে।
ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে। কেউ তাদের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ভাবে না।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবিকে খারিজ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মুসলিমদের উন্নয়নের ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে এ কথা ঠিক নয়। এই সরকার কিছু কাজ করেছে ঠিকই। তবে সব কাজ হয়নি।’
তৃণমূলের কোণঠাসা হয়ে থাকা এমপি মুকুল রায়ও মনে করেন সংখ্যালঘু উন্নয়নে এখনো অনেক কাজ বাকি। তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকার পরোক্ষ সমালোচনাও করেছেন।
একদিকে, সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছাকাছি আসতে চাইছেন এআইইউডিএফ নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের অন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। কার্যত দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সংগঠন। রাজ্য সরকারও এসবের মধ্যে দিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আবারো সংখ্যালঘুদের সমর্থনে ক্ষমতায় আসার জন্য এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করেছে।