লাল যাত্রা:বাঙালির সাহস ও ঐক্যের প্রতীক

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ছিল নির্মম গণহত্যার দিন। এই কালো অধ্যায় কীভাবে ভুলি আমরা?যা একটি জাতির সংকল্প এবং স্থিতিস্থাপকতাকে সংজ্ঞায়িত করে। সেদিন ঢাকার রাজপথ লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল বাঙালীদের দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই। এই গণহত্যা স্মরণে প্রতিবছরের ন্যয় এবারও আয়োজিত হয়েছে – ‘লাল যাত্রা’ নামে পরিচিত এই র‍্যালি। নাট্যকার,নির্দেশক ও সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দের ভাবনা ও পরিকল্পনা এবং প্রাচ্যনাট এর প্রযোজনায়, লাল যাত্রা নিছক প্রতীকবাদকে অতিক্রম করে,বাঙালি জাতির সম্মিলিত চেতনাকে মূর্ত করে। এই যাত্রা যেন সেই দৃশ্যের চিত্রায়ন যেন কালো সীমানা সহ লাল শাড়ির এক সমুদ্র, স্বাধীনতার জন্য রক্ত জলান্জলীর এক মর্মান্তিক অনুস্মারক, বিভিন্ন বয়সী,বিভিন্ন পেশার শত শত লোক রাস্তা দিয়ে সমাবেশে সামিল,নৃশংস এক রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের ভারে সকলের হৃদয় ভারাক্রান্ত। ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ গানে ঢাকার স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর (টিএসসি) থেকে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর (ফুলার রোড সড়কদ্বীপ) পর্যন্ত মানুষের হেঁটে চলা,২৫ শে মার্চের নৃশংস ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করার পদযাত্রা। কিন্তু লাল যাত্রা শুধু একটি র‍্যালি নয়; আমাদের বাঙালি জাতির অদম্য চেতনার স্মারক।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কাছে প্রাণ বির্সজন দেওয়া অগণিত প্রাণের জন্য ন্যায়বিচার দাবি আদায়ের পদযাত্রা। দেশ মানে তো মা।সময় পেরিয়ে যেতে পারে,কিন্তু মা কী কখনও তাঁর সন্তানদের মৃত্যু ভুলতে পারে? লাল যাত্র যেন সেই চিত্র তুলে ধরে যেখানে “মা” তার সন্তানদের নিয়ে রাজপথে নেমেছে ন্যায়বিচার এর দাবি আদায়ে। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে, লাল যাত্রা আমাদের দেশের প্রতি কর্তব্যের একটি গৌরবময় অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে,দেশের জন্য যাঁদের এত ত্যাগ তাঁদের স্মরণ করা এবং তাঁদের চেতনাকে বহন করা।২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের অন্যতম নাট্যদল প্রাচ্যনাট প্রতিবছর ২৫শে মার্চ লাল যাত্রা র‍্যালির আয়োজন করে আসছে। আমেরিকান সাংবাদিক রবার্ট পেইন লিখেছিলেন যে এই হত্যাকান্ডে কমপক্ষে ৭০০০ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করা হয় এবং ৩০০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতি বছর ২৫শে মার্চ সেই নৃশংস হত্যাকান্ডের ইতিহাসকে স্মরণ করাতে, তার সুষ্ঠ বিচার দাবিতে ও আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি আদায়ে লাল যাত্রার আয়োজন করা হয়।আসুন আমরা স্মরণের মশালকে এগিয়ে নিয়ে যাই,লাল যাত্রার হাত ধরে। স্বাধীনতার শিখা যেন আগামী প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল হয় তা নিশ্চিত করে। লাল যাত্রা চিরকাল সাহস এবং ঐক্যে বিশ্বাসী বাঙালি জাতির অবিনশ্বর চেতনার প্রতীক হয়ে থাকবে।স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক-অভ্র বড়ুয়া,শিক্ষার্থী,দার্জিলিং,ভারত

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

4 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

4 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

4 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

4 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

4 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

4 days ago