যিনি বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন


সোমবার,২৫/০৩/২০২৪
334

শিক্ষাক্ষেত্রে, এমন কিছু শিক্ষক রয়েছেন যাঁদের আবেগ,পরিশ্রম,সত্যিকারের ভালোবাসা,সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা জ্ঞানের বিস্তারকে অতিক্রম করে। বিপ্লব স্যার, একজন শিল্পী এবং পাশাপাশি বাংলার শিক্ষক, শিল্পকলা এবং শিক্ষার এই অনন্য সংমিশ্রণকে মূর্ত করেছেন তিনি, বাংলা সাহিত্য ও ভাষার অধ্যয়ন যে কতটা মজার তা তাঁর ক্লাস না করলে অনুভব করা যাবে না।শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা তিনি।যেমন গীটার বাজান তেমন সুমুধুর তাঁর গানের কন্ঠ।এককথায় যাকে বলা যায় অসাধারণ।ভীষণ ভালোবাসেন বাংলা পড়াতে,বাংলা ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে। বাংলা, আবেগ এবং অভিব্যক্তির সাথে জড়িত একটি বিষয়,পশিচমবঙ্গে পড়াশোনা করার সুবাদে আমি উপলবদ্ধি করেছি বাংলাকে ২য় ভাষা হিসেবে নেওয়া ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য, এমনকি যাদের কাছে এটি তাদের মাতৃভাষা, তাদের জন্যও বিরাট এক জটিল ভাষা। মজার এবং দু:খজনক হলেও সত্যি,শিক্ষার্থী বাঙালি কিন্তু বাংলার চেয়ে সে ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশি।পরীক্ষায় পাশ করার জন্য শিক্ষার্থীরা পড়ছে বাংলা,যেন অংকের মতো ভয়।এমনিক বিভিন্ন স্কুল থেকে পাওয়া তথ্যমতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরাও বাংলাকে তাদের বিষয় হিসেবে নিতে অনীহা প্রকাশ করে। সেখানে বিপ্লব স্যার এর মতো শিক্ষক প্রতিনিয়ত ভেবে যান কীভাবে বাংলাটাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আরও সহজ করে তুলে যায়,আহা!কী চেষ্টা,কী পরিশ্রম করে যান।তাঁর একটাই উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীরা একটু ভালোবাসুক মায়ের ভাষাটাকে।পাশ করার জন্য নয়।ভালোবাসার তাগিদ থেকে পড়ুক ভাষাটাকে তারা।
দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে আমি একমাত্র ছাত্র যে বাংলা নিয়েছি,ইংরেজির পর।অদম্য উৎসাহদাতা,স্বপ্নদ্রষ্টা বিপ্লব স্যার যিনি শিক্ষার্থীদের পাঠকে বাঙালি সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং সাহিত্যেকে প্রাণবন্ততার সাথে তুলে করেন, ভাষাকে এমনভাবে জীবন্ত করে তোলেন যা পাঠ্যপুস্তকের সীমানা অতিক্রম করে,ভাষার প্রতি ভালোবাসার টান আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমার এক ঘন্টার ক্লাস সচরাচর দুই ঘন্টায় গিয়ে ইতি টানে।
তাঁর নৈপুণ্যের প্রতি বিপ্লব স্যারের নিবেদন স্পষ্ট। সঙ্গীত এবং বাংলা ভাষা উভয়ের প্রতিই তাঁর গভীর আবেগ অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত, এমন একটি শিক্ষাদানের পরিবেশ তিনি তৈরি করেন শ্রেণিকক্ষে যেখানে শেখার এবং অজানাকে জানার গভীরতর সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে আমার। ক্লাসের সময়সূচীর পরোয়া না করা নিবেদিত প্রাণ এই শিক্ষক;তাঁর সর্বোচ্চটা দেন,এই বিশ্বাস রেখে যে বাংলাকে ভয় পাওয়া শিক্ষার্থীরা তাঁদের মতো করে ভালোবাসুক ভাষাটাকে,ধারণ করুক অন্তরের গভীরে।শিক্ষার্থীদের খাতায় অগণিত ভুল সংশোধন করতে করতে একটুও ভেঙ্গে পড়েন না।বরং আফসোস করে বলেন”জানিস অভ্র ওরা যে বানানটা জানেনা তা কিন্তু নয়,সব খামখেয়ালিপনা,এটাই কষ্ট দেয় রে”তাঁর কথায় বুঝে যাই তিনি কত অসাধারণ শিক্ষক,কী ধৈর্য।তারপরও স্যারের মিষ্টি হাসিটা দিয়ে নিজেই নিজেকে আশা দেন।আমার কাছে স্যারের ক্লাস মনে হয় আত্ম-আবিষ্কার, সাংস্কৃতিক নিমজ্জন এবং বাঙালি ঐতিহ্যের সমৃদ্ধময় ভাষাকে জানার এক ভালোবাসাময় যাত্রা। সুতরাং, ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা শিক্ষার্থীর মনে তো জেগে উঠবেই,সেটাই স্বাভাবিক,যদি সে শিক্ষার্থী মন থেকে ভাষাকে ধারণ করে,উপলব্ধি করে।
আমি বিপ্লব স্যারের তত্ত্বাবধানে অতিবাহিত আমার সুন্দর সময়ের প্রতিফলন হিসাবে, আমার শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত সমৃদ্ধিতে তাঁর অমূল্য অবদানের জন্য আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম এর ফলসরূপ তিনি ভারতের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্সপিরিয়া কর্তৃক ‌‍”গুরু সম্মান পুরষ্কারে” ভূষিত হন।যা আমাদের জন্য পরম প্রাপ্তির।এমন শিক্ষকগুলোর সান্নিধ্য পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।ভালো থাকুক আমার শিক্ষক।সমাজ ও জাতি আলোকিত হোক।

লেখক-অভ্র বড়ুয়া,শিক্ষার্থী,দার্জিলিং,ভারত

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট