গৃহযুদ্ধ! মমতা-অভিষেক লড়াই – বিরোধের মাঝে ‘অন্য’ রাজনৈতিক কৌশল তৃণমূলের


বৃহস্পতিবার,০৪/০১/২০২৪
632

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বিরোধ চরম আকার নিয়েছে। এমন চর্চা চলছে নানা মহলে। সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে সে খবর সম্প্রচার হচ্ছে। খবরের কাগজগুলোতে রসালো খবর প্রকাশ পাচ্ছে। সত্যিই কি এমন বিরোধ মমতা এবং অভিষেকের মধ্যে চলছে? রাজনৈতিক মহলে এমন খবর নিয়ে নানান ধরনের গুঞ্জন ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি বেকায়দায় বুঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে বৈঠক করেছেন বলেও খবর ছড়িয়েছে। এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা মুখ খুলতেও শুরু করেছেন। তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসী সরাসরি মুখ খুলেছেন। নৈহাটি উৎসবে যোগ দিয়ে তিনি বলেছিলেন যা রটনা হচ্ছে তার কোন বাস্তবতা নেই। দলে এরকম কোন বিরোধ নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের নেত্রী বলেন।‌ দলে একটাই মুখ। তার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের প্রতীক জোড়া ফুল। দলের কর্মী-সমর্থকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জোড়া ফুল দেখেই লড়াইয়ে নামেন। যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বিরোধ বলে দেখানো হচ্ছে তার সম্পূর্ণই মিডিয়ার প্রচার। দলের আর এক নেতা ফিরহাদ হাকিম, তিনিও বলেছেন সকলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের মুখপাত্র পার্থ ভৌমিক বলেছেন ‘আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’।

বেশ কিছুদিন অন্তরালে দেখা গিয়েছে অভিষেককে। এই নিয়ে গুঞ্জন আরও ছড়ায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তার ঘনিষ্ঠ হলে বলেছেন তিনি শুধু ডায়মন্ড হারবার নিয়ে থাকতে চান। তিনি যেসব কথা বলেছেন তা রাজ্যের সরকার অনেক কিছুই মেনে নেয়নি বলে ঘনিষ্ঠ মহলে অভিযোগ করেন। এই নিয়ে জলঘোলা হয়েছে মিডিয়ায়। অবশ্য এই নিয়ে মুখ খোলেননি অভিষেক। সত্যিই কি তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে এমন কথা বলেছেন? ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল। দলের সমস্ত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা দিবসে শুভেচ্ছা জানান। সেই সঙ্গে আগামী দিনে বৃহত্তর লড়াইয়ের ডাক দেন। তাহলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সেই লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকার বার্তা দেন অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।‌ মমতা এবং অভিষেক উভয়ের বার্তা প্রায় একই। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে অপশক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন মমতা। এই শক্তির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়ের আহ্বান জানানো হয়েছে।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের প্রধান দুই মুখ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন সর্বস্তরকে সঙ্গে নিয়ে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য যে এক তা স্পষ্টই তাদের বার্তার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। তাহলে সত্যিই কী কোন বিরোধ রয়েছে মমতা অভিষেকের মধ্যে? আদতে বিরোধের যে জল্পনা চলছে তা কতটা সঠিক? আদতে এটা একটা কৌশল নয় তো! তৃণমূলের একেবারেই অভ্যন্তরীণ কৌশল!
তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা এখন জেলে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনুব্রত মণ্ডল এর মতন জেলবন্দী। একাধিক বিধায়ক জেলে। চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ। রেশন দুর্নীতির অভিযোগ। সারদা-নারদা অভিযোগ। বিরোধীরা উঠতে বসতে ‘চোর চোর’ স্লোগান দিচ্ছে। বিরোধীরা এমন একটা প্রচার করছে যে তৃণমূল মানেই ‘চোর’। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে দুর্নীতির সরকার বলে নিশানা করেছে বিজেপি। সবচেয়ে রেকর্ড সংখ্যক সিবিআই তদন্ত চলছে পশ্চিমবঙ্গে। এরকম এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃণমূলকে পঙ্কিল পাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের অন্যতম হাতিয়ার রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ইসুকে তুলে ধরা। তৃণমূল কংগ্রেসকে চোর প্রতিপন্ন করা। এরকম এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যখন তৃণমূলের এইসব ঘটনা নিয়ে চর্চা বেশি করছিলেন সেই সময় নতুন দিকে মোড় নিয়েছে আলোচনা। এখন কান পাতলে ‘চোর চোর’ কথাটা শোনা যাচ্ছে কম। তার থেকে বেশি শোনা যাচ্ছে মমতা আর অভিষেকের মধ্যে বিরোধ চলছে। এমনও শোনা যাচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপমুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। দলের সিনিয়র নেতারা তা মেনে নেননি। এমনকি অভিষেকের কোন কথাই শোনেননি মমতা। আর তাই দুজনের মধ্যে মতানৈক প্রকট হয়েছে। আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে, মমতা ও অভিষেক শিবির। বেশ খাচ্ছে খবর! রটনা রোজ রোজ নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। আর মমতা অভিষেক বিরোধ নিয়ে রটনা যত বাড়ছে, প্রচার যত বাড়ছে ততই চোর-দুর্নীতি, রেশন কাণ্ড, নিয়োগ কান্ড থেকে যেন বাঙালির রেহাই মিলেছে। আখেরে লাভ ঘাসফুলেরই। প্রচারেও থাকছে। আবার চোর দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে পারছে। আদতে এই বিরোধের গল্প ফেঁদে এটাই আসল রহস্য নয় তো!

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট