পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলে বিপর্যয় হয়েছে কংগ্রেসের। কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে অনেকগুলো রাজ্য। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন এই জয় বিজেপির নয়। ভোট কাটাকাটির সুযোগে জিতেছে বিজেপি। হেরেছে কংগ্রেস। সোমবার বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১২ শতাংশ ভোট কেটেছে ইন্ডিয়া- শরিকরা। যদি ইন্ডিয়া শরিকদের সঙ্গে আসন বোঝাপড়া হতো তাহলে কংগ্রেসের হারতে হতো না। মমতা বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম সিট সেয়ারিং করতে। সিট সেয়ারিং না হওয়াতেই বিজেপির জয় এসেছে। সিট সেয়ারিং হলে ২৪ এ বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না,
বিধানসভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির লাড্ডু বিলি নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, এই পরাজয় কংগ্রেসের, মানুষের পরাজয় নয়। সিট সেয়ারিং হলে বিজেপি জিততে পারত না। ইন্ডিয়া জোট একসঙ্গে কাজ করবে। ভুল থেকে শিক্ষা নেব আমরা।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর বিষয়ে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলকে নতুন করে গড়া হচ্ছে এবং ওটা আমার হৃদয়ের মেলবন্ধন। প্রতিটা দফতর কিন্তু কাজ করে সারা বাংলার জন্য, এখানে কোনো বৈষম্য নেই। আমি কয়েকদিন আগে দেখলাম যে সারা ভারতবর্ষে যে ঘর ঘর জল দেবে, এটা নাকি ওনারাই করছেন। তখন নির্বাচন চলছিলো। তিনি এটা প্রচারে বলতেই পারেন।কোভিডের সময় দুই বছর সাংসদদের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। কোভিডের সময় আমাদের ১৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিলো। সব রাজ্যেরই হয়েছিলো। তাই আমরা বলেছিলাম জিএসটি- কমপেনশেসন দুই বছরের জন্য বাড়াও। আমাদের লস যেটা হলো সেই টাকা কিন্তু আমরা পেলাম না।
তার আগে হলো নোটবন্দি। তাই নিয়ে একশো জনের বেশি মারা গেলো। কয়েকদিন আগে শুনলাম দুই হাজার টাকা নাকি বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বা ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন আবার দেখছি সব ঠিক আছে। এর মধ্যে রহস্য কি বুঝতে পারছি না। এটা কি ইলেকশনের জন্য করা হয়েছিলো ! আমি জানি না।
ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এসব জায়গায় কেউ ভয়ে যেতো না। বাম আমলে দেখতাম প্রতি বছর সাতশো থেকে আটশো মানুষ মারা যাচ্ছে।
দুপুর দুটোর পর কেউ বাইরে বের হতো না। আমি তখন বিরোধী দলে ছিলাম। আমি গিয়েছিলাম।
আমি তখন প্রায় ৪৫ দিন জঙ্গলমহল সফর করেছিলাম। সেই সময় ওখানকার মানুষের দূর্দশা চোখে দেখেছি। আমি নিজে মাটির ঘরে জন্মেছি। তাই মাটির প্রতি আমার একটা টান আছে।
মমতা আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বার যখন ঝাড়গ্রামে গিয়েছিলাম তখন একদিন আমি পায়ে হেঁটে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তখন ওখানকার মানুষ আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের হতে শুরু করলো। আমি তাদের বললাম আপনারা ভয় পাবেন না, আমি আপনাদের পাশে আছি সবসময়। শুধু একটা জিনিস করতে হবে, যারা বন্দুক নিয়ে ভয় দেখায় তারা সেটা করতে পারবে না। আমি তাদের চাকরি দেবো।
আমরা ইতিমধ্যেই ৭০ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছে। আগামি এক বছরের মধ্যে বাকি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেবো। আমি কখনও ঘুরবার জন্য বিদেশ যাই নি। আমি প্রথম থেকেই মনে করি আমার জীবন আমার দেশের, আমার রাজ্যের মানুষের ভালোর জন্য।
পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা একটা বেশি পেয়েছে। কংগ্রেসের থেকে ছত্রিশগড় আর রাজস্থান নিয়ে নিয়েছে। আবার কংগ্রেস তেলেঙ্গানা পেয়েছে। ৩৯%-৪২% ভোটের ফারাক। আর ১২ শতাংশ ভোট কেটেছে কে ! না আমাদের ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীরাই। এর জন্য শুধু রাজস্থানেই ৭০ টা আসন ওরা জিতে গেছে। শুধু প্রচার করলেই হয় না,আর বক্তৃতা দিলেই হয় না। স্ট্র্যাটেজি টা ঠিক করতে হয়। স্ট্র্যাটেজি ঠিক করলেই হবে। শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে হয় না। আমি এখনও মনে করি আসন রফা করলে বিজেপি সরকারে আসবে না।