রাজভবনের সামনে টানা ধরনা অবস্থানের ডাক দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার থেকে এই ধরনা অবস্থান শুরু হল। রাজ্যপাল যতক্ষণ না তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করছেন ততক্ষণ এই ধরনা। বাংলায় বঞ্চিত মানুষদের কথা রাজ্যপালের সামনে তুলে ধরতে চায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। কিন্তু রাজ্যপাল শিলিগুড়ি থেকে দিল্লি পালিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূলের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন রাজ্যপাল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সারারাত এই ধরনা অবস্থানে থাকবেন বলে ঘোষণা করেছেন। এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ৪ তারিখ রাজ্যপালের কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। ৫ তারিখ দেখা করার সুযোগ দেবেন ভেবেছিলাম। প্রতিনিধিদের শিলিগুড়িতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। রাজ্যপাল আবার দিল্লি চলে গেলেন। সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে রাজভবনে যান দলের প্রতিনিধিরা। অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, কোন আইনের কোন ধারায় ২০ লক্ষ মানুষের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁর।
১০০ দিনের টাকা গায়ের আটকে রাখা, আবাস যোজনার টাকা না দেওয়া – কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও জোরালো করছে তৃণমূল কংগ্রেস।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বৃহস্পতিবার রাজভবন অভিযান জনসমুদ্রে পরিণত হল।জনসমুদ্রে উত্তাল হল মহানগরী কলকাতা। রাজধানী দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচির পর কলকাতার রাজপথেও গর্জে উঠল ঘাসফুল শিবির। হাজার হাজার মানুষ বাংলার নায্য পাওনার দাবিতে গর্জে উঠলেন। আওয়াজ তুললেন রাজনীতি নয়, বাংলার হকের টাকা দেওয়া হোক। স্লোগানে মুখরিত হল কলকাতার আকাশ বাতাস।
বিভিন্ন প্রান্ত, শহর ও শহরতলি থেকে আসা সব মিছিলের অভিমুখ ছিল রবীন্দ্র সদন। মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ‘রাজভবন চলো’র ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অল্প সময়ের মধ্যে মিছিলে শামিল হন হাজার হাজার মানুষ। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সাংসদ-বিধায়ক- মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে একাডেমির সামনে থেকে মিছিল শুরু করেন অভিষেক। জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে পার্ক স্ট্রিট ক্রসিং এরপর এসপ্ল্যানেড হয়ে বাঁদিক ঘুরে রানি রাসমণি রোড হয়ে রাজভবনের উত্তর গেটে পৌঁছয় মিছিল। সেখানেই ধরনা মঞ্চে শুরু হয় বক্তৃতা । রাজভবনের গেটে ধরনায় বসে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যপাল রাজভবনে নেই। তবুও তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল রাজভবনে যান।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল যখন রাজভবনের গেটে পৌঁছায় তখন গেট বন্ধ করে রাখা হয়। এরপর সেই গেটের সামনেই বাংলার দাবি-দাওয়া নিয়ে প্ল্যাকার্ড রেখে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদের নিশান হিসাবে। মিছিলের গোটা রাস্তায় এই প্ল্যাকার্ড তাঁর হাতে থেকেছে।
রাজ্যপালের কাছে দলের তরফে সময় চাওয়া হলেও তিনি তা দেননি। অভিযোগ, বিজেপির নির্দেশ মেনে রাজনীতি করেই চলেছেন। দ্বিতীয়বার আবারও তাঁর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। বাংলার বকেয়া আদায়ে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে দিল্লির বুকে অভিষেকের নেতৃত্বে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির ঘৃণ্য প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি ও তাদের নির্দেশে দিল্লি পুলিশের চূড়ান্ত অভব্য আচারণ, সাংসদ-মন্ত্রীদের জোরজবরদস্তি থানায় নিয়ে যাওয়া। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। অভিষেক পণ করেছেন যতদিন না বিজেপি সরকার বাংলার বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়বে। দিল্লিতে প্রতিবাদ-কর্মসূচি হয়েছে। এবার কলকাতায় রাজ্যপালের কাছেও বাংলার মানুষের ক্ষোভের চিঠি পৌঁছে দেওয়া হবে। তাঁকেও জানানো হবে বিজেপি সরকারের কুকীর্তির কথা। কিন্তু রাজ্যপাল নানা অজুহাতে কার্যত মুখোমুখি হতে চাইছেন না।