শুক্রবার মহাবৈঠক। একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে বৃহস্পতিবার। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেজরিওয়াল, শরদ পাওয়ার থেকে শুরু করে লালু প্রসাদ যাদব, অখিলেশ যাদব থেকে তেজস্বী, হেমন্ত সরেন থেকে ভগবন্ত মান কি ছিল না? ভারতের বিরোধী রাজনীতিতে এমন ঐক্যবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বোধ হয় আগে দেখেননি দেশবাসী। শুরু হয়েছিল সেই পাটনা থেকে। তারপর বেঙ্গালুরু। এবার মুম্বই। সময় যত গড়াচ্ছে ততই যেন বিরোধী জোটের ঐক্য কংক্রিট হচ্ছে। ইন্ডিয়া জোট আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বেঙ্গালুরুটিতে ২৬ টি দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন। মুম্বাই বৈঠকে সংখ্যাটা আরো দুই বাড়লো। ২৬ দলের জোট বেড়ে দাঁড়ালো ২৮ দলে। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক আলোচনায় উঠে এসেছে অনেকগুলি বিষয়। শুক্রবারের বৈঠকে তার চূড়ান্ত হওয়া সম্ভাবনা।
ইন্ডিয়া জোটের কোন কনভেনার নেই এখন। ইন্ডিয়া জোটের কোন পদাধিকারী গঠন হয়নি। মুম্বাই বৈঠক থেকে আহবায়কের নাম ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা। এছাড়াও এই জোটের কর্মসূচি রূপায়নের জন্য একটা কমিটি গঠন হতে পারে। সারা দেশ জুড়ে আন্দোলন কর্মসূচি রুপায়ন করতে চলেছে ইন্ডিয়া জোট। আন্দোলনের রূপরেখা কি হবে তা চূড়ান্ত হবে শুক্রবার। অভিন্ন ইস্যু গুলোকে ধরে ধরে রাজ্যে-রাজ্যে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে ঝড় তুলতে চাইছে ইন্ডিয়া জোট। এর মধ্যে অন্যতম মূল্যবৃদ্ধি। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম আগুন ছোঁয়া তাতে করে সাধারণ মানুষের নাভিঃশ্বাস ওঠার জোগাড়। এছাড়াও যেভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বেছে বেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে লাগানো হচ্ছে তা নিয়েও দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে বিরোধীরা। কখনো রাহুল গান্ধী বা সোনিয়া গান্ধী বা কখনো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা হেমন্ত সরেন। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে তদন্তে নামিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তার বেলায় কোন তদন্ত হচ্ছে না। আবার বিরোধী দলে থাকা অভিযোগ থাকা কোন নেতা বিজেপিতে নাম লেখালে আর তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রয়োগ করা হচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই নিয়ে সরব হয়েছেন। এদিন বিরোধী দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্রের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
যেভাবে গণতন্ত্রের উপর বারে বারে আঘাত আসছে, বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলিকে যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার ভাতে মারার চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে লড়াই সংগঠিত করার সংকল্প নিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। বেছে বেছে বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির টাকা আটকে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গ দিল্লি বিহার তামিলনাড়ু ঝাড়খন্ড কর্ণাটক সহ দেশের বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলি কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার পথে হাঁটছে ইন্ডিয়া।
নির্দিষ্ট একটি লোগো তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। দলগুলির পরিচিতি তাদের প্রতীক চিহ্নে। এবার অভিন্ন লোগো তৈরি হবে। যে লোগোতে পরিচিতি পাবে ইন্ডিয়া জোট। ইতিমধ্যেই লোগোর কিছু খসড়া বৈঠকে সামনে এসেছে। তার থেকে একটা বাছাই করে নেবেন জোটের নেতারা।
গোটা দেশ শুক্রবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে। রাজনৈতিক সচেতন মানুষ এই বৈঠকের উপর নজর রাখছেন। নজর রাখছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর এ বৈঠকের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর যাদের তারা অবশ্যই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। জোট যত শক্তিশালী হচ্ছে বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ তত বাড়ছে। ২৪ শে লড়াইটা আরো কঠিন হয়ে উঠছে। বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া নিয়ে আগেই আক্রমণ সানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা। জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনা করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে বিজেপি। তৃতীয় বৈঠক আরো জোরদার হওয়ায় আতঙ্ক যে বিজেপিকৈ তাড়া করে বেড়াচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।