রাজন্যারা ভাঙছেন যাদবপুরের বাম-অতিবামের মৌরসীপাট্টা ?


রবিবার,২০/০৮/২০২৩
777

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বামপন্থী আন্দোলনের আঁতুড়ঘর। পশ্চিমবঙ্গে যবে থেকে বামফ্রন্টের ক্ষমতা দখল সেই তখন থেকেই যাদবপুর লাল দূর্গ। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বামপন্থী ও অতি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গুলির দাপাদাপি। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে মা মাটি মানুষের সরকার। তিন তিনবার ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের সব বাম দুর্গ ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বিধানসভায় বামপন্থীরা শূন্য হয়ে গিয়েছে। সিপিএম নেতারা এখন বুক ঠুকে বলতে পারেন না যে নির্দিষ্ট কোন এলাকা তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। তবে এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রমী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তৃণমূলের এই ভরা জোয়ারেও বামপন্থীরা মৌরসিপাট্টা সাজিয়ে রেখেছে যাদবপুরের ক্যাম্পাসে। বাম ও অতি দামের দাপাদাপিতে সেখানে তৃণমূলের প্রবেশ যেন নিষিদ্ধ। বেশ কয়েকবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যাদবপুরের ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। না, পারেনি। বামপন্থীদের গুতোই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির বাইরের কেউ সেখানে ঢোকার অনুমতিই পাইনা। এটাই যেন চিরাচরিত নিয়ম হয়ে এসেছে।

একটা ঘটনা সব তছনছ করে দিতে চলেছে বাম-অতিবামের গড়ে তোলা সেই সাম্রাজ্য। ক্রমশ আলগা হচ্ছে তাদের বাঁধন। ভিত নড়তে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে এখনো সেভাবে প্রভাব না পড়লেও চোরা স্রোত বইতে শুরু করেছে। নদীয়ার বগুলার স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যু যাদবপুরের বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গুলির কাছে এখন বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাদবপুরে ভর্তি হয়েছিল স্বপ্ননীল। কিন্তু সেখানকার দাদাদের দাদাগিরিতে স্বপ্ন নিভে গেছে। স্বপ্ননীলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সামনে উঠে এসেছে যাদবপুরের বাম অতিবামের দীর্ঘদিনের সাম্রাজ্যের গোপন অনেক কথা। যাদবপুরের ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে বাম অতিবাম ছাত্র সংগঠন গুলির নানান বেলেল্লাপনার কাহিনী সামনে এসেছে। প্রকাশ্যে মদ সিগারেট নেশা জুয়া যেন তাদের রোজকার নামচা হয়ে উঠেছিল। ওটাই যেন তাদের অধিকারে পরিণত হয়েছিল। আর তাই সিসিটিভিতে তাদের ছিল আপত্তি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির নিয়ম মেনে সেখানে সিসিটিভি লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু ছাত্র ইউনিয়ন গুলির গুঁতোই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বারে বারে। এখন যখন সিসিটিভি লাগানোর কথা উঠেছে তখনও তারা বিরোধিতা করে চলেছে। স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুর পরও এই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সেই অনড় মনোভাব। কোন যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য নেই, তবুও সিসিটিভিতে তাদের বাঁধা। অভিভাবক থেকে সাধারণ মানুষ আর তাই বলছেন সেখানকার দাদাদের, ইউনিয়ন নেতাদের বেলেল্লাপনা প্রকাশ্যে চলে আসার ভয়েই তারা আপত্তি জানাচ্ছে।

তবে এবার অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও ক্যাম্পাসে ঢুকতে শুরু করেছে। সিসিটিভি লাগানোর পক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলেছে। আওয়াজ তুলেছে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার দাবিতে। যাদবপুর ক্যাম্পাসের বামপন্থী ও অতি বামপন্থী সংগঠনগুলি তাদের বিপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলিকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আগের মতো আর পেরে উঠছে না। গাজোয়ারী মনোভাবের পাল্টা প্রতি আক্রমণ পাচ্ছে পদে পদে। ইতিমধ্যেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট খুলেছে। এই ইউনিটের সভাপতি দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের লড়াকু নেত্রী রাজন্যা। প্রথমবর্ষের ছাত্রমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিটের পদ ঘোষণা করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।  ইউনিটের সভাপতি হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় টিএমসিপি-র সহ-সভাপতি রাজন্যা হালদার। ইউনিটের চেয়ারপার্সন করা হয়েছে সঞ্জীব প্রামাণিককে। একুশে জুলাই এর মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন রাজন্যা। তারপর থেকেই তৃণমূলের এই ছাত্র নেত্রী গোটা বাংলায় ‘হিট’ হয়েছেন। গত কয়েক দিনে যাদবপুরের ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁর নেতৃত্বে লড়াই নজর কেড়েছে। বামু অতিবাম ছাত্র সংগঠনগুলির নেতা-নেত্রীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শুরু করেছেন তৃণমূলের এই ছাত্র নেত্রী। শনিবার দশ দিনের সময় সীমা বেঁধে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই দশ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে সিসিটিভি না বসালে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নিজের দায়িত্বে সিসিটিভি বসাবে। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের এই ছাত্রনেত্রী। অভিভাবক থেকে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানাচ্ছেন সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্তকে। যেখানে সেখানকার মৌরসীপাট্টা করে রাখা বাম ও অতিবামের নেতা-নেত্রীরা এর বিরোধিতা করে আসছে। সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্রমশই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যাদবপুরের ক্যাম্পাসে ভিত শক্ত করতে পারছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সত্যি বেকায়দায় পড়েছে সেখানকার বাম ও অতিবামেরা। স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুর পর তবে কি এবার মৌরসিপাট্টা গোটাতে চলেছে বামেরা?

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট