“নো ভোট টু মমতা”। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এর রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দল এক জোটে এই স্লোগান তুলেছিল। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এক জোটে আওয়াজ তুলেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার। সঙ্গে দোসর হয়েছিল আইএসএফের মত ছোট ছোট দলগুলিও। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনার যে ফলাফল তাতে সাধারণ মানুষ পাত্তা দেয়নি বিরোধীদের সেই স্লোগানকে। সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার। যত বেলা গড়াতে থাকে ততই সবুজের ছড় গ্রাম বাংলায় কালবৈশাখীর আকার নিতে থাকে। বিজেপি সিপিএম কংগ্রেসকে পিছনে পেলে তৃণমূল কংগ্রেসের পাল তোলা নৌকো থরথর করে এগিয়ে যায়। ঘাসফুলের সাম্রাজ্য বিস্তার বাংলা জুড়ে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ সব ক্ষেত্রেই ঝড় বয়ে যায় ঘাসফুলের। পাহাড় থেকে সাগর সর্বত্রই ছিল একই ছবি। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্রই তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্য। দিনের শেষে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন। টুইটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন বিরোধী জোটের সেই স্লোগান নো ভোট টু মমতা। বাংলার মানুষ বিরোধীদের এই স্লোগানকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ভোট ফর মমতা স্লোগান দিয়েছেন বাংলার জনগণ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষকে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ রায় দিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যেভাবে এর রাজ্যের বিরোধী দলগুলি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়িয়েছে তার জবাব দিয়েছেন জনগণ।
আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনের আগে ৩০ তার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের দিকে পাখির চোখ ছিল বাংলার সব রাজনৈতিক দলের। সেই ফলাফল প্রকাশ হলো। ভরাসাই এর রাজ্যের বিজেপি সিপিএম কংগ্রেসসহ তৃণমূল বিরোধী দলগুলি। দ্বিতীয় স্থানের জন্য লড়াই করেছে বিজেপি ও সিপিএম। তাও তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে শত যোজন দূরে থেকে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল আরও শক্তিধর হয়ে উঠল পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে। গত বিধানসভা নির্বাচনে যেসব জেলায় তৃণমূলের খারাপ ফল হয়েছিল সেখানেও এবার ঘাসফুলের ঝড় বয়ে গেছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহলে জেলাগুলিতে তৃণমূল অসাধারণ ফলাফল করেছে। যে বাঁকুড়া পুরুলিয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বা ঝাড়গ্রামের সাধারণ মানুষ বিজেপিকে পছন্দ করেছিল এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তারা ফিরে এসেছে তৃণমূলের ঘরে। নদীয়া জেলার মানুষও তৃণমূলের পক্ষে রায় দিয়েছে। অত লোকসভা নির্বাচন বা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে এই জেলায় বিজেপি সাফল্য পেয়েছিল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই বিজেপি কোনঠাসা। উত্তরবঙ্গে জেলাগুলিতেও তৃণমূলের জয় জয়কার হয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এইসব জেলায় বিজেপি বিপাকে পড়ে যাবে এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। বাঁকুড়া পুরুলিয়া ঝারগ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুর নদিয়া এবং উত্তরবঙ্গী জেলাগুলিতে গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। ২৪শে লোকসভা ভোটের আগে সেই সব জেলাতেই বিজেপির পরাজয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এর রাজ্য থেকে বিজেপি যেসব আসন পেয়েছিল তার অধিকাংশই হারাতে হতে পারে ২৪ এর লোকসভা ভোটে। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে সরব ছিল বিরোধী দলগুলি। আদালতে মামলা গড়িয়েছিল। আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারপরেও বিপর্যয় বিরোধীদের। রাজ্যে ৬১ হাজারের বেশি বুথে নির্বাচন হয়েছিল। একশোর মত আসনে অশান্তি ছড়িয়ে ছিল। শতাংশের হিসেব করলে তা অতি নগণ্য। ফলে এবারের পঞ্চায়েত ভোটকে বিরোধীরা যতই দাবি করুক সন্ত্রাসের নির্বাচন তা কিন্তু নয়। রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় সাধারণ মানুষ তারা নিশ্চিন্তে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। বিরোধীরা ভোটের ফলাফলের পর সন্ত্রাস বলে চিৎকার করবে। কিন্তু আদতে তাদের চেয়ে বুথ স্তরে ভিত্তি নেই তা মেনে নিতেই হবে। যেখানে সংগঠন বিরোধীদের আছে সেখানে তারা জিতেছে। ২৪ এর আগে বিরোধীদের কাছে চরম অশনি সংকেত বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।