মাম্পসের লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাম্পস হলে ভাইরাসজনিত প্যারোটিড নামের লালাগ্রন্থির প্রদাহ। এটি অত্যন্ত সংক্রামক (ছোঁয়াচে)। হাঁচি-কাশির (ড্রপলেট) মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এর ফলে জ্বর, মাথা ব্যথার সঙ্গে কানের সামনে ও নিচে বা চোয়ালের ওপরে দুই পাশে লালাগ্রন্থি ফুলে যায়, খাবার গিলতে বা চিবাতে ব্যথা হতে পারে।

এটি সাধারণত শিশু-কিশোর বয়সে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও হতে পারে। শীতের শেষ ও বসন্তের শুরুতে বেশি দেখা যায়। ভ্যাকসিন আসার আগে এটি প্রচুর দেখা যেত।

প্রচলিত এমএমআর (মাম্পস, মিজেলস, রুবেলা) ভ্যাকসিনের কল্যাণে এর প্রকোপ অনেকটাই কমে গেছে। তাই প্রতিটি শিশুকে এই টিকা দেওয়া প্রয়োজন। এক ডোজ ভ্যাকসিন শতকরা ৮০ ভাগ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী কী? ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১২ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে রোগ প্রকাশ পায়।

♦♦ প্রথমে জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, অবসাদ ও ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়। মুখ শুকিয়ে যায়। প্রচণ্ড দুর্বল লাগে।

♦♦ এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কানের সামনের ও নিচের অংশে অবস্থিত লালাগ্রন্থিতে ব্যথা ও ফোলা শুরু হয়।

♦♦ ফোলা প্রথমে এক পাশে শুরু হয়।

৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অপর পাশে ফুলতে দেখা যায়। এই ফোলা ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

♦♦ কানে ও গলায় ব্যথা হতে পারে।

♦♦ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে তেমন লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পায় না। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কমবেশি হয়। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পেলে সেটি শিশুদের চেয়ে মারাত্মক হয়।

কী কী জটিলতা হতে পারে?

সাধারণ লক্ষণ-উপসর্গের বাইরেও কিছু জটিলতা হতে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়াই যেকোনো জটিলতা নিয়ে মাম্পস প্রকাশ পেতে পারে।

জটিলতাগুলো

অরকাইটিস (অণ্ডকোষে প্রদাহ) : এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এতে ছেলেদের অণ্ডকোষ ফুলে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এক পাশে বা উভয় পাশে হতে পারে। উভয় পাশে হলে পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যত্বের আশঙ্কা থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

ওফোরাইটিস (মেয়েদের ডিম্বাশয়ে প্রদাহ) : এতে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা, জ্বর ও বমি হয়। কিছু ক্ষেত্রে স্তনে প্রদাহ হতে দেখা যায়।

স্নায়ুতন্ত্রে প্রদাহের কারণে মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, আর্থ্রাইটিস, নেফ্রাইটিস, থাইরয়েডাইটিস এবং হঠাৎ বধিরতা দেখা দিতে পারে। ভ্যাকসিন যুগের আগে মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস এবং শিশুর জন্ম-পরবর্তী বধিরতার প্রধান কারণ হিসেবে মাম্পসকে ধরা হতো।

এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, পেনক্রিয়াটাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।

প্রধান কারণগুলো কী কী?

প্যারামিক্সো ভাইরাস ফ্যামিলির ভাইরাসের কারণে মাম্পস হয়। এই ভাইরাসটি হাঁচি-কাশি বাতাসের মাধ্যমে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ বা ব্যবহৃত জিনিসের (ফোমাইট) মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। তাই এটিকে খুবই ছোঁয়াচে রোগ বলা যায়।

কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

সাধারণত রোগীর লক্ষণ-উপসর্গগুলো দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়।

এ ছাড়া মাম্পস রোগীর সান্নিধ্যে আসা এবং একই সময় চারদিকে মাম্পস রোগীর আধিক্য এই রোগ নির্ণয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গলা এবং কানের পরীক্ষা করে দেখা বা অন্য কোনো কারণে ফোলা কি না দেখা।

ভাইরাস (আরটি-পিসিআর) এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা যায়।

ভাইরাস নির্ণয়ের জন্য মুখের/বাক্কাল রস পরীক্ষা এবং প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়।

অতীতে মাম্পসের টিকা দেওয়া হয়েছে কি না, তা দেখা।

চিকিৎসা

এটি একটি সনিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। বেশির ভাগ রোগী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। রোগের লক্ষণ-উপসর্গ অনুসারে রোগীর কষ্ট লাঘবে ভাইরাসজনিত অন্য কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

এই রোগটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের তেমন কার্যকারিতা নেই। শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকলে নিজে থেকে সেরে ওঠে। চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীরা নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন-

জ্বর/ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন নিতে পারেন।

ফোলার জন্য গরম অথবা ঠাণ্ডা সেঁক।

সেসব খাবার এড়িয়ে চলুন, যেগুলো চিবানোর প্রয়োজন। নরম খাবার খেলে ভালো হয়।

প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল গ্রহণ করুন।

সংক্রমণ ছড়ানো প্রতিরোধ করতে অন্যদের থেকে আলাদা থাকা।

খারাপ কোনো লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে বা ব্যথা ও ফোলা বেশি হলে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

প্রতিরোধ

মিজেলস, মাম্পস, রুবেলার (এমএমআর) টিকার পরামর্শ দেওয়া হয়। সিডিসির পরামর্শ অনুসারে সব শিশুকে দুই ডোজ এমএমআর টিকা দেওয়া উচিত। প্রথমটি ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে এবং দ্বিতীয়টি চার থেকে ছয় বছর বয়সে। সংক্রমিত ব্যক্তির জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে হাঁচি-কাশির সময় তাদের মুখ ও নাক ঢেকে রাখা, যাতে অন্য ব্যক্তির মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে না পড়ে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

তাৎক্ষণিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস

পশ্চিম বাংলার একাধিক জেলায় ঝড়-বৃষ্টি আসন্ন 📍 কলকাতা, ১৭ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।…

2 weeks ago

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

3 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

3 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

3 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

3 months ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

3 months ago