লাভজনক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তার মধ্যে “রামবুটান”

যে সব বিদেশি ফল এ দেশে সফলভাবে লাভজনক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তার মধ্যে রামবুটান অন্যতম। এ ফল অনেকটা লিচুর মতো, তবে লিচুর চেয়ে আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা চ্যাপ্টা। পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা হলুদ আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে। ফলের পুরু খোসার উপরি ভাগ কদম ফুলের মতো শত শত চুল দিয়ে আবৃত। মালয়েশিয়া ভাষায় রামবুটানের অর্থ চুল। একই কারণে এ ফল চুল বা দাড়ি বিশিষ্ট লিচু বলে অনেকের নিকট পরিচিত। রামবুটান লিচুর মতোই চিরহরিত, মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট লম্বা গাছ। বর্ষাকালে জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। অপুষ্ট ফলের রঙ সবুজ থাকে। ফল পুষ্ট হলে উজ্জ্বল লাল/ মেরুন রঙে পরিবর্তন হতে থাকে এবং এর দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে পাকা ফল সংগ্রহ করার উপযোগী হয়।

উৎস ও বিস্তার : মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এ ফলের আদি উৎস। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ব্রুনাই ও শ্রীলংকায় প্রচুর রামবুটান ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। এ সব দেশ থেকে অনুরূপ আবহাওয়া বিশিষ্ট দেশে বা দেশের অংশ বিশেষে এ ফলের বিস্তার আরম্ভ হয়। শীতের তীব্রতা কম এমন দেশে যেমন ভারত ও বাংলাদেশের এমন অংশেও এ ফলের বিস্তার ও চাষ জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

জলবায়ু : ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল আবহাওয়া বিশিষ্ট অঞ্চল রামবুটান চাষের জন্য উপযোগী। এ ফল গাছে শীতের তীব্রতা সহ্য শক্তি নেই বললেই চলে। শীত কালে তাপমাত্রা ১০০ সেলসিয়াসের নিচে নেমে ৫-৭ দিন বিরাজ করলে গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পার্বত্য অঞ্চলীয় জেলাসহ বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও যশোর জেলায় এ ফল সম্প্রসারণ সম্ভাবনা বিরাজ করছে। রাঙ্গামাটি জেলায় কিছু সংখ্যক রামবুটান গাছে ৩০-৪০ বছর ধরে ফল দিচ্ছে। নেত্রকোনা জেলার কিছু সংখ্যক চাষি প্রায় ২০ বছর ধরে রামবুটান ফল উৎপাদন বিপণন করে বেশ লাভবান হচ্ছে। এছাড়া নরসিংদী উপজেলার শিবপুর জেলায় কয়েক জন রামবুটান চাষির সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তদাঞ্চলে লটকন চাষের পাশাপাশি রামবুটান চাষে অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় রামবুটান উৎপাদনকারী দেশগুলোতে যাদের রামবুটান বাগানে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তারা তথা হতে ফল/বীজ সংগ্রহ করে বাংলাদেশে রামবুটান চাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

পুষ্টিগুণ : রামবুটান একটা ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ ফল। এ ফলে প্রচুর আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং ক্যালোরি রয়েছে। এন্ট্রি অক্সিডেন্টাল গুণ সমৃদ্ধ ফ্যাট ফ্রি এ ফলে সব ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভিটামিনস, মিনারেলস রয়েছে।

মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। তবে পানি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা যুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি এ ফল চাষে বেশি উপযোগী। মাটি শক্ত, কাঁকরময় বা বেশি এঁটেল হলে গাছ রোপণের জন্য মাদা তৈরি কালে ৫-৭ ফুট চওড়া ও গভীর করে মাটি সরিয়ে তৈরি গর্ত উপযোগী পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করে এ ফল গাছ রোপণ করা হলে বেশি চাষে সফলতা আনা সহজতর হয়। রামবুটান চাষের জন্য মাটির পি-এইচ মাত্রা ৫.৫-৬.৫ হলে ভালো হয়।

বংশবিস্তার : প্রধানত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা দিয়ে রামবুটান ফল চাষ করা হয়। পাকা ফলের বীজ বের করে তা তাজা অবস্থায় চারা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রামবুটান বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৫-৭ দিনের বেশি থাকে না। এজন্য বীজ সংগ্রহের পর পরই বীজ বপনের প্রয়োজন হয়। বীজ বসানোর জন্য উপযোগী পটিং মিডিয়া তৈরি করে নেয়া জরুরি। মিডিয়া তৈরির জন্য মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড)-২৫%, নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া (কোকোডাস্ট)-২৫%, লতাপাতা বা আর্বজনা পচা জৈব সার- ২৫%, এবং ভিটে মাটি (নার্সারির কাজে ব্যবহার উর্বর মাটি)- ২৫%। এগুলো একত্রে মিশিয়ে তলা ছিদ্র বিশিষ্ট মাটির টব মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে তার ওপর র্২র্ দূরত্বে বীজ বসাতে হয়। বীজের চওড়া ভাগ নিচে রাখতে হবে এবং বীজ বসানোর পর উপরিভাগ সামান্য মাটি (হাফ ইঞ্চি পুরু) দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। বীজ বপনের আগে ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া ভালো। বীজ বপনের পর এ টবকে আধা ছায়ায় রাখতে হবে। বৃষ্টির পানিতে যেন বেশি ভেজা বা উপরিভাগের মাটি সরে না যায় তা রোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। অঙ্কুরিত বীজ পিঁপড়া খেয়ে নষ্ট করতে যেন না পারে এ জন্য কীটনাশক ব্যবহার বা অন্য উপায়ে গজানো বীজকে নিরাপদ রাখতে হবে। টবের মাটি যেন শুকিয়ে না যায় এ জন্য মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করে হালকাভাবে মাটি ভেজাতে হবে। মাটি সব সময় হালকা ভেজা অবস্থায় থাকবে, প্রয়োজনের বেশি পানি দেয়া উচিত হবে না। বীজ বসানোর ১০-২০ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হবে, চারা গজানা শুরু করবে।

চারা/কলম সংরক্ষণ : গজানো চারা র্৮র্ -১র্০র্ লম্বা হলে র্৮র্র্ -১র্০র্ মাপের মাটির টবে ভালো পটিং মিডিয়া দিয়ে একেকটা চারা উঠিয়ে আলাদা ভাবে রোপণ করার মাধ্যমে চারাকে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়তে দিতে হবে। চারার বয়স ৬ মাস হলে গাছের গোড়া ছেড়ে টবের কিনারে র্১র্ -১.র্৫র গভীর নালা করে ইউরিয়া-২০ গ্রাম, টিএসপি- ৫০ গ্রাম এবং পটাশ ৩০ গ্রাম হারে তিন মাসের ব্যবধানে দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীতে তিন মাসের ব্যবধানে আরো দু’বার এ সারের পরিমাণ দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। চারার বয়স এক বছর হলে অপেক্ষাকৃত বড় টবে (১র্২র্ -১র্৪র্ ) নতুনভাবে পাটিং মিডিয়া দিয়ে ও অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ জৈব সার/ কম্পোস্ট এবং একেকটা গাছের জন্য ২৫০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া মিশিয়ে রিপটিং করতে হবে। সংরক্ষিত চারা আধা ছায়ায় রেখে ১.৫-২ বছরের বয়স্ক বড় চারা জমিতে রোপণের জন্য উপযোগী হয়। এক বছর বয়স্ক চারায় বাডিং, সাইড গ্রাফটিং অথবা জোড় কলম পদ্ধতি অবলম্বনে কলম করা চারা রোপণ করার প্রচলন এখন বাড়ছে।

গাছের লিঙ্গ : চারা থেকে প্রাপ্ত গাছ তিন ধরনের হয়ে থাকে। এতে পুরুষ, স্ত্রী ও উভলিঙ্গিক গাছের জন্ম হতে পারে। অর্থাৎ বীজের চারায় অনেকটা পেঁপে গাছের মতো ভিন্নতর লিঙ্গের গাছ পাওয়া যায়। পুরুষ গাছ হলে তাতে ফল ধরে না, তবে তা স্ত্রী গাছে পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ধরতে সহায়ক হয়। চারার গাছে মাতৃ গুণাগুণ বজায় থাকে না। ফল ধরতে ৫-৬ বছর সময় লেগে যায়। বর্তমানে কলম করা গাছ আমদানি করে কিছু সংখ্যক নার্সারিম্যান পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে উভয়লিঙ্গিক রামবুটানের কলম করা গাছ বিপণন করছে।

চারা/কলম রোপণ : রামবুটান ফল গাছ প্রধাণত : ৩০ -৩৫ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়। গাছ রোপণ করার আগে গাছ রোপণের জন্য ‘লে-আউট’ প্লান তৈরি করে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে গাছ রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করে নেয়া দরকার। সাধারণ অবস্থায় গাছ রোপণের জন্য গর্তের মাপ হবে ৩-৪ ফুট চওড়া ও গভীর। যে সব মিশ্রণ দিয়ে তৈরিকৃত গর্ত ভরাট করতে হবে তা হলো :

(ক) মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) : ১৫%

(খ) ৩নং গ্রেডের ইটের মার্বেল সাইজের ছোট খোয়া : ১৫%

(গ) নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া (কোকাডাস্ট) : ১৫%

(ঘ) উর্বর মাটি ( ভিটে মাটি) : ২৫%

(ঙ) পচা গোবর/ আর্বজনা পচা : ৩০%

এর সঙ্গে আর মেশাতে হবে হাড়ের গুঁড়া -১ কেজি, ভার্মি কম্পোস্ট- ৫ কেজি, টিএসপি- ৪০০ গ্রাম, এমওপি – ৩০০ গ্রাম, জিপসাম- ৩০০ গ্রাম এবং জিংক, বোরণ ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় অনুখাদ্য প্রতিটা ৫০ গ্রাম করে। সবগুলো একত্রে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১৫ দিন রেখে দেয়ার পর গাছ রোপণের জন্য উপযোগী হবে।

চারা/কলম রোপণ : সেচ সুবিধা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে বছরের যে কোনো সময় রামবুটান চারা/কলম লাগানো যায়। তবে বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগে এপ্রিল-মে মাসে গাছ রোপণ করা হলে বর্ষা ও শীত আরম্ভের আগে শিকড় দ্রুত ছাড়ানোর সুযোগ পায়। প্রতিকূল অবস্থায় গাছ বেড়ে উঠার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সরেজমিন থেকে চারা/কলম ১র্০র্ -১র্২র্ উঁচু করে তৈরি মাদার মধ্যভাগে রোপণ করলে ভালো হয়। এভাবে রোপণের পর গাছের গোড়া থেকে প্রায় ৩ ফুট দূরে ১র্০র্ চওড়া ও ১র্০র্ গভীর নালা তৈরি করে নালার মাটি দিয়ে বাইরের চারধারে বৃত্তাকারে বাঁধ দিয়ে দেয়া ভালো। এ ব্যবস্থায় শুকনা মৌসুমে গাছের গোড়ায় প্রত্যক্ষভাবে পানি দেয়ার সুবিধা হয়, নালায় সরবরাহকৃত পানি থেকে প্রয়োজনীয় রস গাছ শুষে নেয়। রোপণের পর অবশ্যই গাছে কাঠি দিয়ে সোজা রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে ঝড়-বাতাসে গাছ হেলে পড়া রোধ হবে, গাছ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়তে সহায়ক হবে।

পানি সেচ ও নিষ্কাশন : গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকা এবং মাটিতে রসের অভাব উভয়ই রামবুটান গাছের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য বাগানের দু’সারি গাছের মধ্য ভাগে র্২-২.র্৫ চওড়া ও গভীর করে নালার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থায় বাগানে পানি জমা রোধ হবে। শুকনা মৌসুমে অবশ্যই ৮-১০ দিনের ব্যবধানে গাছের গোড়ার চারিধারের মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে প্রয়োজনীয় রসের অভাব দূর করতে হবে।

মালচিং : শুকনা মৌসুমে গাছের গোড়া থেকে ৩-৪ ইঞ্চি ছেড়ে প্রায় ৩ ফুট দূর পর্যন্ত শুকনা খড়কুটো, কচুরিপানা অথবা লতা-পাতা দিয়ে মালচিং দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এ মালচিং র্৪র্ -র্৬র্ পুরু হবে। এ ব্যবস্থায় শুকনা মৌসুমে মাটিতে রস সংরক্ষিত থাকবে, গোড়ার চারধারে আগাছা জন্মানো রোধ হবে। গাছের শিকড় বৃদ্ধি সহজতর ও সুরক্ষায় সহায়তা হবে। পরে এসব মালচিং দ্রব্য পচে জৈব সারের উৎস হিসাবে কাজ করবে। বর্ষাকলে মালচিং দেয়ার প্রয়োজন হয় না। শুকনা মৌসুমে মালচিং মাটিতে মিশে/পচে গেলে ৩ মাস পরপর পুনরায় নতুন করে মালচিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।

আধা ছায়ার ব্যবস্থা নেয়া : গাছ রোপণের প্রথম তিন বছর খরা মৌসুমে রোদের তাপ সহ্য ক্ষমতা রামবুটান গাছের কম। এ জন্য গাছের ১.৫-২ ফুট গোড়া ছেড়ে ৫-৬ ফুট উচ্চতায় দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চট বা ছালার বেড়া দেয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে গাছকে আধা ছায়াদানের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ ব্যবস্থায় রোদের তাপে পাতা পুড়ে/জ্বলে যাওয়া রোধ হয়। গাছের গোড়া ছেড়ে কয়েকটা ধৈঞ্চা, বকফুল, অড়হড় গাছ লাগিয়েও আধা-ছায়ার ব্যবস্থা করা যায়। শীতকালে ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য গাছের উপরি ভাগে সাদা পলিথিন সিট দিয়ে কভার দেয়ার মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। গাছের বয়স ৪-৫ বছর হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই এ গাছের রোদের তাপ ও শীত সহিষ্ণুতা বেড়ে যায়। এ জন্য পরে ফলন্ত গাছে এভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হয় না।

ট্রেনিং-প্রুনিং : গাছ যেন চার ধারে বেশি ডাল ছড়ায় এ জন্য গাছ লম্বায় র্৩-র্৪ উঁচু হলেই আগা কেটে প্রথম ৩-৪ টা শাখা তৈরি করে নিয়ে গাছকে উপরে ও পার্শ্বে বাড়তে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এছাড়া ছোট দুর্বল ডাল মাঝে মাঝে ছেঁটে দিলে গাছের কাঠামো সুন্দর হয়ে বেড়ে উঠে। বেশি লম্বা না হয়ে ঝাকড়া গাছে ফল ধরা ও পাড়ার সুবিধা বেশি। এ জন্য ট্রেনিং-প্রুনিং পদ্ধতি অবলম্বনে সেভাবে গাছের কাঠামো তৈরি করে নিতে হবে।

সার প্রয়োগ : রামবুটান গাছে জৈব উৎস থেকে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করা ভালো। রামবুটান গাছে ফসফরাস সারের চাহিদা অনেক বেশি। বিভিন্ন বয়সী রামবুটান গাছে বছরে যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন তা হলো:

বিভিন্ন সার বছরে দু বার প্রয়োগ করা ভালো। সুপারিশকৃত ডোজের ৪০% ভাগ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল-ফল ধরার আগে/সময় প্রথমবার প্রয়োগ করতে হবে। এ সময় গাছের গোড়া কোপানো যাবে না। হালকা ভাবে আঁচড়া দিয়ে মাটি আলগা করে সারগুলো গাছের ক্যানোপি (দুপুর বেলা যে পর্যন্ত অংশে রোদ পড়ে) বরাবর ছিটিয়ে দিয়ে মালচিং দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অবশিষ্ট ৬০% সার ফল সংগ্রহের পর একইভাবে গাছের গোড়ার চারধারে ছিটিয়ে দিয়ে হালকা ভাবে কুপিয়ে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই পানি দিয়ে মাটি ভালোভাবে ভেজাতে হবে।

পোকা-মাকড় : এ ফলের খোসা বেশি পুরু এবং সুতালো আবরণ থাকার ফলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অনেক কম। তবে মাঝে মাঝে ফল ছিদ্রকারী পোকা, পাতা খেকো লেদা পোকা, মিলিবাগ ও স্কেল পোকার উপদ্রব দেখা যায়। গাছে ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করলে নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পোকার উপদ্রব বেশি দেখা গেলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় স্প্রে করে তা দমন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

পশুপাখির উপদ্রব : রামবুটান ফল পাকলে রাতে বাদুড়, ইঁদুরের উপদ্রব এবং দিনে কাঠবিড়ালি, কাকসহ আরও কয়েক প্রকার পাখির আনাগোনা বাড়ে। রাতে হারিকেন জ্বালিয়ে রাখলে বা টিন বেঁধে শব্দ করলে রাতে বিচরণকারীদের উপদ্রব রোধ করা যায়। দিনের বেলা টিন বাজিয়ে পাখি তাড়ানো যায়। আক্রমণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে লায়লনের জাল দিয়ে গাছের উপরিভাগ ঢেকে দিয়ে তা রোধ করা যায়।

ফল সংগ্রহ : রামবুটান গাছে মার্চ মাসে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং এপ্রিল মাসে কচি সবুজ রঙের ফল ধরতে আরম্ভ করে। ফুল ফোটার ৩-৪ মাস পর জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। ফল পুষ্ট হলে সবুজ রঙের ফল হঠাৎ করে লাল, মেরুন রঙে রূপান্তর হতে থাকে। এ অবস্থা শুরু হওয়ার ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। লিচু ফল সংগ্রহের ন্যায় এ ফল হাত দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। ফলের থোকার সঙ্গে ১র্০র্ -১র্২র্ ডালসহ ফল সংগ্রহ করা উচিত। এ ব্যবস্থায় তথা হতে নতুন শাখা গজিয়ে পরের বছর বেশি ফল ধরতে সহায়ক হবে। কোনো কোনো গাছে দ্বিতীয় বার অমৌসুমে কিছু ফুল-ফল ধরতে দেখা যায়।

একটা ফলন্ত বয়স্ক গাছ থেকে বছরে ১৫০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় এ ফল বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। ফল পাড়ার ৭ দিনের মধ্যে বিপণন বা আহার কাজ শেষ করতে হয়। তবে ১০-১২০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হলে সেলফ লাইফ আরও ৮-১০ দিন বাড়ানো যায়।

বর্তমানে বাংলাদেশে এ ফলের বাজার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ৪০০-৫০০/- টাকা। নরসিংদী এবং নেত্রকোনার রামবুটান চাষি ৮-১০ বছর বয়স্ক প্রতি গাছের ফল বিক্রি করে প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০/- টাকা আয় করে আসছে। তারা প্রতিটা ফলের বীজ ৫-৭ টাকায় বিক্রি করে।

এ লাভজনক ফল চাষে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই রামবুটান ফল চাষ সম্প্রসারণে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে এবং এ ফল চাষ সম্প্রসারণ এ দেশে বেগবান হচ্ছে।

এম এনামুল হক

মহাপরিচালক (অব:), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং সদস্য, বিশেষজ্ঞ পুল (অচঅ), কৃষি মন্ত্রণালয়,

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

তাৎক্ষণিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস

পশ্চিম বাংলার একাধিক জেলায় ঝড়-বৃষ্টি আসন্ন 📍 কলকাতা, ১৭ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।…

2 weeks ago

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

3 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

3 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

3 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

3 months ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

3 months ago