সিরাজুল ইসলাম: বাড়িতে পড়াশোনার তেমন চল নেই। পাড়াতেও যে পড়াশোনার দারুণ পরিবেশ আছে, তেমনটাও নয়। মিনি ট্রাকচালক গরিব বাবা আর বুটিককর্মী মা বুঝেছিলেন, তাঁদের একটি ‘রত্ন’ উপহার দিয়েছেন ভগবান। যে রত্নকে ঠিকঠাক লালন করতে পারলে একদিন তার দ্যুতিতে উজ্জ্বল হবে পরিবার ও গোটা এলাকা। এমন রত্ন লালন করা কি খুব সহজ? বিত্তবানদের কাছে সহজ হতে পারে। কিন্তু, কঠিন ছিল ওই বাবা-মায়ের কাছে। এখনও আছে। মা-বাবা জানতেন ছেলে কতদূর যেতে পারে। তাই সামর্থের বাইরে গিয়ে অনেক কষ্টে ছেলেকে পড়িয়েছিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। আশা করেছিলেন ভাল ফল করবে ছেলে। সেই ছেলেই প্রথম হল উচ্চমাধ্যমিকে।
নিঃসন্দেহে মেধার জোরে প্রথম হয়েছে বজবজের শুভ্রাংশু সর্দার। সবাই তাঁকে কুর্নিশ জানাচ্ছে। আজ শুভ্রাংশুর এই জায়গায় আসার পেছনে তাঁর বাবা-মায়ের অবদান কতটা, এটা অনেকেরই জানা নেই। বাবা একটি গোডাউনের জিনিসপত্র পাঠানোর মিনি ট্রাক চালান। কাকভোরে বেরিয়ে যেতে হয়। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। একা মা একটি বুটিকে কাজ করে সংসার সামলে নজর রেখে গিয়েছেন ছেলের পড়াশোনায়। তিনি হয়তো জানতেন কী করতে পারে ছেলে। তাই ছেলের শিক্ষা নিয়ে কোনও আপস করেননি মা। রত্নগর্ভা মা আজ সবচেয়ে খুশি। তাঁর সব না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে ছেলে শুভ্রাংশ।
মেধা থাকলেই কি প্রতিবন্ধকতা হয় না অর্থ? আজ শুভ্রাংশুর সাফল্যে হয়তো অনেকেই বলবেন না, হয় না। মেধা দিয়েই সব জয় করা যায়। কিন্তু না, থাকতে হয় শুভ্রাংশুর মতো হার না মানা বাবা-মা। ছেলের পড়ার মতো পরিবেশ নেই বাড়িতে। ওরা বুঝেছিলেন, সেই পরিবেশ থেকে বেশিদূর যেতে পারবে না ছেলে। তাই ওরা সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনে। যেখানে গত কয়েক বছর ধরে সযত্নে ‘শান’ দেওয়া হয়েছে এই মেধাকে। আজ সেই মেধা সবার প্রথম হতে পেরেছে।
প্রথম হওয়া শুভ্রাংশু নিশ্চয় আরও অনেক দূর যাবে। প্রথম হওয়ার অনেক বড় পুরস্কার পাবে কর্মজীবনে। তার জন্য আমাদের সবার শুভেচ্ছা থাকবে শুভ্রাংশুর সঙ্গে। ছেলে শুভ্রাংশু যেমন প্রথম হয়েছে, তেমনই ‘প্রথম’ হয়েছেন তাঁর মিনি ট্রাকচালক বাবা তাপস সর্দার ও বুটিককর্মী মা শম্পা সর্দার। ছেলের জন্য গত ১৮ বছর যে লড়াই চালিয়েছেন, সেই জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে একেবারে ‘প্রথম’ হয়েছেন শুভ্রাংশুর মা-বাবাও। এর পুরস্কার কী? আপাতত অপেক্ষা। শুভ্রাংশু কর্মজীবনে অবশ্যই সফলতম হবেন। তখন এতদিনের ত্যাগের বিনিময়ে কয়েকগুণ বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পাবেন তাঁর। মা-বাবাকে সেই ‘পুরস্কার’ দেওয়ার ‘ঋণ’ থাকছে শুভ্রাংশুর মাথায়।
©—– সিরাজুল ইসলাম।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)