রমজান মানেই রোজাদারদের জন্য বিশেষ এক পরীক্ষা। এ পরীক্ষা যেমন মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের, ঠিক তেমনি সুস্থ সবল দেহে পরিপূর্ণভাবে সব আমল ও ইবাদত সম্পন্ন করার। সেই আমল ও ইবাদত পালন করার সময় আমাদের কিছু ভুল ধারণা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি না! মাহে রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বেতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, তাকে ‘তারাবিহ নামাজ’ বলা হয়।
আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবিহ নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবিহ’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবিহ নামাজ বলা হয়।
সারাদিন রোজা রাখার পর এশার নামাজ শেষে আমরা সাধারণত তারাবিহ নামাজ পড়ে থাকি। ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়ার পর বেতর নামাজ পড়ে আমরা বাসায় ফিরে আসি। আর এই রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অপরদিকে রমজানের পুরো মাস মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম হলো রোজা, যা মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
এখন কথা হলো এই তারাবিহ নামাজ আসলে কী? তারাবিহ নামাজের সঙ্গে রোজার কী সম্পর্ক?
তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি না–এ বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে না। আসলে বিষয়টি ঠিক নয়। কেন ঠিক নয়, সে বিষয়েই ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের আলোকপাত করেছেন। চলুন জেনে নিই তার মুখেই–
তারাবিহ নামাজ কোনো কারণে কেউ পড়তে না পারলে অনেকে মনে করেন তারাবিহ যেহেতু পড়তে পারলাম না, তাহলে রোজা রেখে লাভ নেই। বিষয়টি একদমই ঠিক নয়। কেননা, তারাবিহ নামাজ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু রোজা রাখায় আছে। রোজা রাখা ফরজ, যা অবশ্যই পালনীয়।
তারাবিহ নামাজ রাসুল (সা.) পড়েছেন। তার ধারাবাহিকতায় এই নামাজ মুসলমানরা পড়ে আসছেন। হজরত ওমর ফারুক (রা.) থেকে এখন অবধি ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় হয়ে আসছে। বাংলাদেশের সব মসজিদেই ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়া হয়।
কিন্তু যদি কেউ তারাবিহ নামাজ পড়তে না পারার জন্য পরবর্তী সময়ে রোজা না রাখেন, তাহলে তিনি অনেক বড় ভুল করবেন। কেননা, তারাবিহ হচ্ছে সুন্নত আর রোজা ফরজ। ফরজ মানে অবশ্য পালনীয়। তাই রোজার সঙ্গে তারাবিহর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু রোজা রেখে তারাবিহ নামাজ পড়লে তাতে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে।
রমজান মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই এ মাসে তারাবিহ নামাজের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন খতম দেওয়া হয়। আপনি যদি রমজানের পুরো মাস ধারাবাহিকভাবে তারাবিহ নামাজ পড়তে পারেন, তাহলে আপনি পবিত্র কোরআন খতম দেওয়ার সওয়াবও পেয়ে যাবেন। কিন্তু যদি কেউ তারাবিহ নামাজ পড়তে না পারেন তাতে সমস্যা নেই। এতে রোজায় কোনো প্রভাব পড়বে না। তারাবিহ নামাজ না পড়তে পারলেও রোজা হবে।