কাঁঠালের মুচি পচা রোগ ও ঝরা প্রতিরোধে করণীয়

কাঁঠালের কোন অংশই ফেলে দিতে হয় না। পাকা এবং কাঁচা কাঁঠাল উভয়ই খাওয়া যায়, কাঁঠালের স্বাদ মিষ্টি এবং আনারস, আম এবং কলার মতোই। কাঁঠাল যখন কাঁচা থাকে, তখন এটিতে একটি আলুর মতো নিরপেক্ষ স্বাদ থাকে এবং সুস্বাদু রান্নার পদ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কাঁঠালের মুচিতে ফাল্গুন মাসে বিভিন্নরকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল কাঁঠালের মুচি পচা রোগ। একে ইংরেজিতে soft rot নামে ডাকা হয়ে। আজ আমরা জানব কাঁঠালের মুচি পচা রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে।

মুচি পচা রোগের কারণ:

রাইজোপাস আরটোকার্পি (Rhizopus artocarpy) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণ:

তরুণ ফল এবং পুরুষ পুংদণ্ড ছত্রাক দ্বারা চরমভাবে আক্রমিত করা হয় এবং অল্প কিছু মুচিই পরিপক্কতা লাভ করতে পারে। স্ত্রী ফুল এবং পরিপক্ক ফলগুলিতে সাধারণত সংক্রমিত হয় না।

এই রোগের ফলে আক্রান্ত ফলগুলির একটি বড় অংশ দ্রুত পড়ে যায়। আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে – ছত্রাকটি প্রচুর পরিমাণে মাইসেলিয়া সহ ধূসর রঙে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে যা ধীরে ধীরে ঘন হয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে।

রোগের বিস্তার:

গাছের পরিত্যক্ত অংশে ছত্রাকটি বেঁচে থাকে এবং বাতাস, জল ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে রোগ ছড়ায়। বৃষ্টিপাতের ও ঝড় তুফানের পরে রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। তাই এইসময়ে বৃষ্টিপাত কাঁঠাল চাষীদের জন্যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ফুল ও ফল আসার সময় গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করলে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হতে পারে। পর্যাপ্ত আলোর অভাবে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ছত্রাক ধীরে ধীরে পুরো ফল বা পুরো ফুলে ছোড়িয়ে যেতে থাকে যে পর্যন্ত সেটি পড়ে না যায়।

মুচি পচা রোগের দমনব্যবস্থা:

১) আক্রান্ত পুস্পমঞ্জুরী, ফল ভেজা বস্তা জড়িয়ে গাছ থেকে তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা দূরে কোথাও নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

২) বাগান ও গাছের আশেপাশ সবসময় পরিছন্ন রাখতে হবে।

৩) কাঁঠাল বাগানে কোনপ্রকার জৈব সার বা কম্পোস্ট তৈরি না করাই ভাল।

৪) ফল বেশী ঘন না রাখাই ভাল। অনেকগুলো মুচি হলে পাতলা করে দিতে হবে।

৫) ফুল ফোটার সময় ডায়াথিন-এম-৪৫ বা নোয়িন ছএাক নাশক ০.৩ % হারে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। অথবা

৬) মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার বোর্দো মিশ্রণ বা ডায়াথেন-এম-৪৫ অথবা রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটারে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অথবা

৭) ফলে এ রোগ দেখাগেলে ০.২ % হারে রোভরাল স্প্রে করতে হবে।

৮) গাছে ফুল আসার পর থেকে ফলিকুর নামক ছত্রাকনাশক প্রতি ১০ লিটার জলে ৫ গ্রাম মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

16 hours ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

17 hours ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

17 hours ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

2 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

2 days ago

কলকাতায় এসআইপি অ্যাবাকাস ইন্টারন্যাশনাল প্রডিজি ২০২৪: বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীদের গাণিতিক দক্ষতার অসাধারণ প্রদর্শন

কলকাতা, ১০ নভেম্বর ২০২৪: অ্যাবাকাস প্রশিক্ষণের অন্যতম শীর্ষ সংস্থা, এসআইপি অ্যাকাডেমি, কলকাতার বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণে…

3 days ago