বলিউডে ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল যশ চোপড়া পরিচালিত রোম্যান্টিক থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘ডর’। এই ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন কেড়েছিলেন বর্তমান বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। এতে আরও অভিনয় করেছিলেন সানি দেওল এবং জুহি চাওলা। কিন্তু জুহি নন, ছবির নায়িকা হিসেবে যশের প্রথম পছন্দ ছিলেন শ্রীদেবী। কিন্তু যশের প্রস্তাবে রাজি হননি শ্রীদেবী। এতদিন পর জানা গেলো সেই কাহিনী। শ্রীদেবী একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জুহি আগে এমন চরিত্রে অভিনয় করেনি। ও এই ছবিতে অভিনয় করলে ভালোই হবে। কিন্তু আমি ‘চাঁদনি’, ‘লমহে’ ছবিতে অভিনয়ের পর আর এই চরিত্রে অভিনয় করতে চাইনি। আমার জন্য এই চরিত্রটি বড় সাধারণ।শ্রীদেবীর মন্তব্য, কিরণের চরিত্রের বদলে তাকে যদি রাহুল অর্থাৎ শাহরুখ যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, সেই চরিত্রটি দেওয়া হতো তাহলে তিনি আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়ে যেতেন। যদিও কানাঘুষা আছে যে, শাহরুখের সঙ্গে নাকি শ্রীদেবী কখনও কাজ করতে চাইতেন না। আর সেই কাহিনীর সূত্রপাত ‘বাজিগর’ ছবিকে ঘিরে।
১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল আব্বাস – মাস্তান পরিচালিত ‘বাজিগর’। এই ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন দুই অভিনেত্রী শিল্পা শেঠি এবং কাজল। এই তিন তারকাই তাদের বলিউড ক্যারিয়ার সবে শুরু করছেন তখন। কানাঘুষা শোনা যায় যে, ‘বাজিগর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সালমান খানকে। সালমান প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় শাহরুখকে এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি এককথায় রাজি হয়ে যান। শাহরুখের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে পছন্দ করা হয়েছিল শ্রীদেবীকে। তাকে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আব্বাস – মাস্তান। কিন্তু শ্রীদেবী সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। শ্রীদেবী তখন জানান যে, ‘বাজিগর’ ছবিতে তার চরিত্র নির্মাণ পছন্দ হয়নি। শ্রীদেবীর যে চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল, সে চরিত্রটি সিনেমার পর্দায় অভিনেতার হাতে মারা যেতো। আর এই বিষয়টি নাকি কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি শ্রীদেবী।
ওই সময় বলিউড জুড়ে ফিসফাস ছিল যে, শাহরুখ ইন্ডাস্ট্রিতে তখন নতুন এসেছিলেন। শ্রীদেবী তখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে। পর্দায় একজন নবাগতের হাতে তার প্রাণ যাক – সেটা মানতে পারছিলেন না তিনি। তাইতো শ্রীদেবী মনে করেছিলেন যে, এই দৃশ্য দেখার পর দর্শক তার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে না। তাই তিনি অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। জানা যায়, শুধু ‘বাজিগর’ বা ‘ডর’ ছবির ক্ষেত্রেই নয়, শাহরুখের সঙ্গে আরও দু’টি ছবিতে অভিনয় করতে চাননি শ্রীদেবী। ২০০০ সালে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘মহব্বতে’। অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ। ‘মহব্বতে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল শ্রীদেবীকেও। অবশ্য, শাহরুখের বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে নয়। শ্রীদেবীর জন্য আলাদা একটি চরিত্র ভেবেছিলেন আদিত্য।
কিন্তু আদিত্যের প্রস্তাবে রাজি হননি শ্রীদেবী। কোনো এক অজানা কারণে পরিচালককে ফিরিয়ে দেন তিনি। পরে বাধ্য হয়ে পুরো চরিত্রটিই ছবি থেকে বাদ দেন আদিত্য। ১৯৯৭ সালে যশ চোপড়ার পরিচালনায় মুক্তি পায় রোম্যন্টিক ঘরানার ছবি ‘দিল তো পাগল হ্যায়’। এই ছবিতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত এবং কারিশ্মা কাপুর। অতিথিশিল্পী হিসেবে দেখা গিয়েছিল অক্ষয় কুমারকে। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবির নায়িকা হিসেবে প্রথমে শ্রীদেবীকে পছন্দ করেছিলেন যশ। কিন্তু শ্রীদেবী পরিচালকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এই ধরনের চরিত্রে আগেও অভিনয় করেছেন বলে আর একই চরিত্রে কাজ করতে চাননি তিনি। তবে, ১৯৯৬ সালে বড় পর্দায় শাহরুখ এবং শ্রীদেবীকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। রাম শেঠির পরিচালনায় ‘আর্মি’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দুই তারকা। যদিও এই ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল শাহরুখকে। ‘আর্মি’ মুক্তি পাওয়ার এক দশক পর আবার শাহরুখ অভিনীত ছবিতে দেখা যায় শ্রীদেবীকে। ২০১৮ সালে আনন্দ এল রাই পরিচালিত ছবি ‘জিরো’ মুক্তি পায়। কিন্তু এই ছবিতে কোনো মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেননি শ্রীদেবী। অতিথিশিল্পী হিসেবে ক্ষণিকের জন্য শাহরুখের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছিলেন। তবে ‘জিরো’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শ্রীদেবী।