সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলছেন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। বাঙালি বিয়েতেও কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন নতুন প্রজন্ম। যাজ্ঞসেনী আর সৌমিকের বিয়েতে ধরা পরল সেই ছবি।ছকভাঙা বিয়ের আয়োজন হয়েছিল কলকাতার স্বভূমিতে।
ভাবছেন নিশ্চয়ই প্রতিদিন কতই তো বিয়ে হয়! এ আবার এমন কি ব্যাপার! তবু কিছুটা আলাদা না হলে আর এই লেখার প্রয়োজন হত না।
পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার,আত্মপ্রত্যয়ী যাজ্ঞসেনীর চরিত্রে আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের অপূর্ব মিশেল। তাই বিয়ের দিনটি পঞ্জিকা দেখে লগ্ন নির্ধারণ করে ঠিক করা হয়নি,হয়েছে অন্যান্য সুবিধের বিচারে।ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী সৌমিকও যথেষ্ট প্রগতিশীল মানসিকতার। তাই পারস্পরিক বোঝাপড়ায় তারা বাঙালি বিয়ের যুক্তিগ্রাহ্য আনন্দময় অনুষ্ঠানগুলোকে রেখে বর্জন করছে পুরুষতান্ত্রিক নারীর মর্যাদাহানিকর নিয়ম গুলোকে। স্বনির্ভর নারী দানের সামগ্রী নয়, এক মুঠো চাল ছুঁড়ে দিয়ে বাবা মায়ের ঋণও শোধ করা যায় না। সুতরাং দিনের পর দিন শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সেই নিয়মের গড্ডালিকায় গা না ভাসিয়ে এই বিয়ে।বিয়ে হল দুই প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের যৌথ জীবনযাপনের অঙ্গীকারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাই এই বিয়েতে দু পক্ষের অভিভাবকরা যাজ্ঞসেনী ও সৌমিকের সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। সামগ্রিকভাবে অনুষ্ঠানটির পৌরোহিত্য করছেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা নন্দিনী ভৌমিক ও তার সহযোগীরা।বৈদিক মন্ত্রের যথাযথ উচ্চারণ ও অর্থের ব্যাখ্যা আর সঙ্গীতের সাহচর্য্যে,ঐতিহ্যবাহী আবহে কন্যা সম্প্রদান বা কণকাঞ্জলির মত নারী ও তার পরিবারের পক্ষে অবমাননাকর নিয়ম গুলো বাদ পড়ছে । আবার মালাবদল, শুভদৃষ্টি ও সিঁদূর দানের মত নিয়মগুলো ব্রাত্য ছিল না।নন্দিনী ভৌমিকের শিক্ষাগুরু অধ্যাপিকা গৌরী ধর্মপাল-সৃষ্ট এই বিবাহ পদ্ধতির নাম ‘পুরো নতুন বৈদিক বিবাহ’। আইনি বিয়ে আর বিয়েকে ক্যামেরাবন্দী করার দায়িত্বেও রয়েছেন মহিলারা।যাজ্ঞসেনী ও সৌমিকের প্রথাভাঙ্গা এই বিয়ের মতোই বৈদিক মন্ত্র ও রবীন্দ্র সংগীতকে পাথেয় করে ভবিষ্যতে আরও দাম্পত্য সম্পর্কের বন্ধন অটুট হোক, সমাজ ভাবনা হয়ে উঠুক সমদর্শী।
বাঙালি বিয়েতেও কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার
রবিবার,১২/০২/২০২৩
2193