কবরডাঙ্গা মোড়ের কাছে রাউন্ডে ছিলেন হরিদেবপুর থানার সাব-ইনস্পেকটর প্রীতম বিশ্বাস। ঘুরতে ঘুরতে নজরে পড়ে একটি বিজ্ঞাপনী পোস্টার, যেটির বক্তব্যের সারমর্ম, ‘সন্তান দত্তক নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা আমাদের আশ্রমে যোগাযোগ করুন’। সঙ্গে দেওয়া রয়েছে দুটি ফোন নম্বর, একটি ল্যান্ডলাইন ও একটি মোবাইল।
বিজ্ঞাপনের ভাষা এবং চেহারাছবি দেখেই সন্দেহ জাগে প্রীতমের মনে। বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত জনৈক রঞ্জিত দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই সন্দেহ দৃঢ়তর হয়। রঞ্জিত জানান, তিনি, তাঁর স্ত্রী মাধবী রায়, আত্মীয়া সুপ্রিয়া নাইয়া, ও অন্যান্যরা মিলে চালান এই ‘আশ্রম’, পোশাকি নাম শ্রী রামকৃষ্ণ নতুন জীবনদান সেবাশ্রম। সন্তানহীন দম্পতিদের ‘সহজে দত্তক নেওয়ার সুবিধে’ দেওয়া হয় এই আশ্রমে, প্রতিটি শিশুর ‘মূল্য’ চার লক্ষ টাকা।
হরিদেবপুর থানার ওসি ইনস্পেকটর সুব্রত দে-কে গোটা ঘটনা অবিলম্বে জানিয়ে দেন প্রীতম, এবং রঞ্জিতের ঠিকানায় তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রম ও তার কার্যকলাপ সংক্রান্ত কোনও বৈধ নথিপত্র নেই তাঁর কাছে। যা কাগজপত্র আছে, তা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় যে সন্তান দত্তক নেওয়ার নামে চলছে জালিয়াতির ব্যবসা, সন্তানহীন দম্পতিদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সুযোগ নিয়ে তাঁদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় পড়ে।
সেই ভিত্তিতেই ২ নভেম্বর রাত ১১.১৫ নাগাদ তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় রঞ্জিতকে, বাজেয়াপ্ত করা হয় বেশ কিছু বিজ্ঞাপনী পোস্টার ও নথিপত্র। কবরডাঙ্গা মোড়ে প্রদর্শিত পোস্টার-টিও তুলে নিয়ে আসা হয়।
হরিদেবপুর থানায় ইনস্পেকটর দে-র নির্দেশে রঞ্জিত (৪৬), মাধবী রায় (৩৫), সুপ্রিয়া নাইয়া, ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দায়ের হয় এফআইআর, অভিযোগকারী সাব-ইনস্পেকটর প্রীতম বিশ্বাস স্বয়ং। তদন্তকারী অফিসার সাব-ইনস্পেকটর দেবাশীষ সাধুখাঁর তত্ত্বাবধানে চলছে তদন্ত। রঞ্জিত বাদে এফআইআর-এ উল্লিখিত বাকি সকলেই আপাতত ফেরার, তবে বেশিদিনের জন্য নয়।
Source : KP Social Media