সামান্য এই মাছের দোকান থেকেও কতকিছু শিখলাম !

সুদেব কুমার বিশ্বাস : এই ছবিটি ভালো করে দেখুন। খুব সুন্দর কোনো ছবি নয় অবশ্যই। ছবিটি তোলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোনো এক ছোট্ট বাজার থেকে। এটি কিন্তু একটি মাছের দোকান।
বাংলাদেশের যে কারও কাছে মনে হতেই পারে, মাছের দোকানে মাছ এত কম কেন? মাছগুলো কাটাই বা কেন? এগুলো কেউ কি কিনে নিয়ে কাটিয়ে নিচ্ছেন?কাটা মাছের আবার দোকান হয় নাকি?
লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে নানাভাবে কাটা আছে মাছগুলো। কোনোটি মাঝখান থেকে কাটা। কোনোটির মাথা আছে কেবল। কোনোটির আবার শুধুই লেজ। মাঝের অংশের বিভিন্ন সাইজের পিস করাও আছে। যার যেটি পছন্দ কিনে নিয়ে যান। আপনি ঠিকই পড়ছেন। আপনি চাইলে কেবল ঐ মাথাটিই কিনতে পারবেন। অথবা ঐ লেজটি।
আমার নিজের চোখে দেখা। একজন এসে বললেন, “দাদা, একশো মাছ দিন তো!” দোকানী কাটা মাছের একপাশ থেকে আবার কেটে একশো গ্রাম মাছ ওজন করে দিলেন। ভদ্রলোক আবার বললেন, “ওটা দু’পিস করে দিন।” দোকানী তাও করে দিলেন।
এখন বলতেই পারেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এত কৃপণ কেন? আমিও তাই ভাবতাম আগে। ওদের এসব নিয়ে অনেক রসিকতা করতাম। এখন করি না। তার কারণ বলছি খুলে।
বাংলাদেশে রুই মাছের কেজি 300 থেকে 400 টাকা। তার বেশিও আছে। এখন একজন স্বল্প আয়ের মানুষের যদি তিন কেজি ওজনের রুই মাছ খেতে ইচ্ছে করে, তার পক্ষে একটি মাছ কিনে খাওয়া সুদূর পরাহত। কারণ এদেশে সাধারণত মাছ কেটে বিক্রি হয় না। আর এতটা মাছ একবারে কিনে রাখবেনই কোথায়?
একদিন বাজার থেকে এক হালি ইলিশ মাছ কিনে রিকশা করে ফিরছিলাম। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা মাছের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বাজান, কত কইরা লইচে একটা মাচ?” আমি বললাম, বারোশো করে। তাই শুনে তিনি মন ভার করে বললেন, “হ্যার লেইগাই তো আমগো আর খাওনের বরাত নাই!” এখনও ইলিশ মাছ খেতে গেলে ঐ বৃদ্ধ মানুষটির কথা মনে পড়ে।
আমি হিসেব করে দেখলাম, এই মাছ বাজারে কেটে বিক্রি করলে ঐ রিকশাওয়ালাও একদিন হয়তো সাহস করে দুইশো টাকা দিয়ে তিন পিস মাছ কিনে ছয় পিস করে নিয়ে রান্না করে এক বেলা তৃপ্তি করে খেতে পারতেন। অথবা রুই মাছের পেটির মাছ। কেউ হয়তো রোজ খান এসব। আর তারা না হয় খেলেন বছরে এক-আধবার। তবু বঞ্চিতের কাতারে তো রয়ে গেলেন আজীবন কেবল কম রোজগার থাকার কারণে।
ওখানে দোকান থেকে একটি আপেল কেনা যায়। মিষ্টির দোকানে এক পিস, দুই পিস মিষ্টির জন্যে প্যাকেট আছে আলাদা। বরং এক কেজি ওজনের প্যাকেট পাওয়া মুশকিল। আর আমরা আমাদের ফুটানি এতই বেশি যে, আধা কেজির নিচে মিষ্টি কিনতে চাইলে দোকানদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। এক জোড়া আপেল কেনাও মুশকিল আছে। সেদিন কলা কিনতে গিয়ে আমাকে এক হালি কলা দিলেন না ধানমন্ডির এক দোকানদার। বললেন, এক ডজনের নিচে বিক্রি করেন না।
ওপার বাংলায় একজন চা বিক্রেতার বাড়িতেও দোতলা বিল্ডিং দেখতে পাওয়া যায়। আর আমাদের এখানে কেউ কেউ মাসে লাখ টাকা বেতন পেয়েও মাসের শেষে ধার করে চলেন। আমরা যা আয় করি তার সব খেয়েই শেষ করে দিই। আর আমাদের মতো ফুটানিবাজ জাতি দুটো আছে বলে তো মনে হয় না।
সামান্য এই মাছের দোকানের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও কতকিছু শিখলাম।
সবার ভালো হোক! জগতের কল্যাণ হোক!

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

2 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

3 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

3 days ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

3 days ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

4 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

4 days ago