বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পটলের দুটি জাত আবিষ্কার করেছে, পটল চাষ করবেন যেভাবে

পটল একটি জনপ্রিয় উচ্চমূল্য সবজি। পটল খরিপ মৌসুমের সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছর ধরেই পাওয়া যায়। গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে বাজারে যখন অন্যান্য সবজি কম পাওয়া যায় তখন পটল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া পটল চাষের উপযোগী। দেশের সকল এলাকাতেই পটল চাষ করা সম্ভব।
পটলের পুষ্টিগুণ
উচ্চ পুষ্টিমান ও বহুবিধ ব্যবহারের জন্য পটল সবার পছন্দের একটি সবজি। খাবার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পটলে রয়েছে ২.৪ গ্রাম প্রোটিন, ৪.১ গ্রাম শ্বেতসার, ০.৬ গ্রাম চর্বি, ৭৯০ মা.গ্রা. ক্যারোটিন, ০.৩০ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.০৩ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-২, ২৯ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ২০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১.৭ মি.গ্রা. আয়রন, এবং ৩১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি।
জাত নির্বাচন :
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পটলের দুটি জাত আবিষ্কার করেছে। জাত দুটো উচ্চ ফলনশীল ও রোগবালাই সহ্য করতে পারে সেগুলো হলো ‘বারি পটল-১’ ও ‘বারি পটল-২’। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ থেকে ৩৮ টন।
বারি পটল-১:
আকার: ফল ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা, বেড় প্রায় ১.৫ ইঞ্চি।
ওজন : প্রায় ৫৫ গ্রাম।
ফলন: প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ২৪০ টি ফল ধরে, যার মোট ওজন প্রায় ১০ কেজি। একর প্রতি ফলন: ১২১৪৫ কেজি বা প্রতি শতাংশে ১২০ কেজি।
বারি পটল-২:
আকার: ফল ৩.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা, বেড় ১.৫ থেকে ১.৭৫ ইঞ্চি।
ওজন: প্রায় ৫০ গ্রাম।
ফল: প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৩৮০ টি ফল ধরে, যার মোট ওজন ১৪ কেজি।
একর প্রতি ফলন: ১৫,৩৮৫ কেজি বা প্রতি শতাংশে ১৫০ কেজি।
পটল চাষে জলবায়ু:
পটল গাছের দৈহিক বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। পটলের জন্য উচ্চতর তাপমাত্রা এবং অধিক সূর্যালোক প্রয়োজন হয়। বৃষ্টিপাতের আধিক্য ফুলের পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায় এবং ফলন কমে যায়।
পটল চাষে মাটি:
নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি এবং বেলে দো-আঁশ থেকে দো-আঁশ মাটি পটল চাষের জন্য উপযোগী। পটল বেশ খরা সহিষ্ণু। তবে পানির ঘাটতি দীর্ঘায়িত হলে ফলন কমে যায়।
বংশবিস্তার:
এটি কাণ্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। শাখা কলমের ক্ষেত্রে পরিপক্ব কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাণ্ড মরে গেলেও শিকড় জীবিত থাকে। ফলে এই শিকড় থেকেই আবার গাছ জন্মে। রোপণের আগে পটোলের শিকড় গজিয়ে নিলে বেশি ভালো হয়।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ :
প্রথমে মাটি ভালো করে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে নেয়া উচিত। জমিকে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমান করে নিতে হবে। বেড পদ্ধতিতে পটল চাষ করলে ফলন ভালো হয় এবং বর্ষাকালে ক্ষেত নষ্ট হয় না। সাধারণত একটি বেড ১.০-১.৫ মিটার চওড়া হয়। বেডের মাঝামাঝি এক মিটার থেকে দেড় মিটার বা দু’হাত থেকে তিন হাত পর পর মাদায় চারা রোপণ করতে হয়।
এক বেড থেকে আর এক বেডের মাঝে ৭৫ সেমি. নালা রাখতে হবে। মাদা বা পিট তৈরি মাদা বা পিটের আকার- দৈর্ঘ্য- ৫০ সেমি. প্রস্থ- ৫০ সেমি. গভীরতা- ৪০ সেমি. নালা- ৭৫ সেমি. মাদা থেকে মাদার দূরত্ব-১.০-১.৫ মিটার মাদায় গাছের দূরত্ব-৭.০-১০.০ সেমি. গভীরতা-৫০ সেমি. মোথার সংখ্যা ১০,০০০/হেক্টর স্ত্রী গাছপ্রতি ১০টি স্ত্রী গাছের জন্য ১টি পুরুষ গাছ সুষ্ঠু পরাগায়নের ক্ষেত্রে ১০% পুরুষ জাতের গাছ লাগানো উচিত এবং এসব গাছ ক্ষেতের সব অংশে সমানভাবে ছড়িয়ে লাগানো উচিৎ।
গোবর বাআবর্জনা সার ভালোভাবে পচানো দরকার। পটল দীর্ঘমেয়াদি সবজি ফসল, এ জন্য মে মাস থেকে ফসল সংগ্রহের পর প্রতি মাসে হেক্টরপ্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৪ কেজি এমপি সার উপরি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে ফলন বেশি হবে।
সার প্রয়োগ:
মাদাপ্রতি ১.০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম খৈল, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৩০ গ্রাম এমওপি, ২০ গ্রাম বোরণ সার এবং ১৫০ গ্রাম জিপসাম সার রোপণের সময় প্রয়োগ করা হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল ধরা কমে গেলে সে ক্ষেত্রে মাদাপ্রতি ৫০০ গ্রাম গোবর সার, ৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৯০ গ্রাম টিএসপি, ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করলে ফলন অনেক বেড়ে যায়।
পটল চাষে পরাগায়ন:

পটল চাষের ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়ন একটি জরুরি বিষয়। চারা লাগানোর তিন মাসের মধ্যে পটলের ফুল আসতে শুরু করে। পটল একটি পরপরাগায়িত উদ্ভিদ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ফোটে। কাজেই পরাগায়ন না হলে পটলের ফলন পাওয়া যাবে না। পটলের পরাগায়ন সাধারণত বাতাস এবং কীটপতঙ্গের দ্বারা হয়ে থাকে। তবে জমিতে পুরুষ ফুলের সংখ্যা খুব কমে গেলে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন করা প্রয়োজন হয়। পটল গাছে পরাগায়নের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ ফুল দরকার। একটি সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল তুলে নিন এবং পুংকেশর নির্বাচন করে ফুলের পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলুন। তারপর প্রতিটি স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের মুন্ডু পুংকেশর দ্বারা আস্তে আস্তে ২-৩ বার ছুঁয়ে দিন। এর ফলে গর্ভকেশরে পুংকেশর থেকে রেণু আটকে পরাগায়ন হবে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে সাধারণত ৭-৮টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা সম্ভব। তা ছাড়া পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে তা থেকে পরাগরেণু আলাদা করে পানিযুক্ত একটি প্লাস্টিক পাত্রে নিয়ে হালকা ঝাকি দিয়ে পরাগরেণু মিশ্রিত করে টিউবের মাধ্যমে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডের ওপর ২-৩ ফোঁটা ব্যবহার করেও পরাগায়ন সম্পন্ন করা যায়। এ পদ্ধতিতে পটলের ফলন অনেক বৃদ্ধি পায়।
ফসল সংগ্রহ:
কচি অবস্হায় সকাল অথবা বিকালে পটল সংগ্রহ করতে হবে । সাধারণত জাতভেদে ফুল ফোটার ১২ -১৪দিনের মধ্যে পটল সংগ্রহের উপযোগী হয়।
মুড়ি ফসল:
পটল গাছ থেকে প্রথম বছর ফসল সংগ্রহ করার পর গাছের গোড়া নষ্ট না করে রেখে দিয়ে পরবর্তী বছর পরিচর্যার মাধ্যমে গুড়িচারা থেকে যে ফসল পাওয়া যায় তাকেই মুড়ি ফসল বলে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

তাৎক্ষণিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস

পশ্চিম বাংলার একাধিক জেলায় ঝড়-বৃষ্টি আসন্ন 📍 কলকাতা, ১৭ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।…

2 days ago

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

2 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

2 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

2 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

2 months ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

2 months ago