কবি এ কে সরকার শাওন


শনিবার,১১/০৬/২০২২
3814

এস এম আনোয়ার হোসেন অপু: বাংলাদেশী বাঙ্গালী কবি এ কে সরকার শাওন কে নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রথমেই আমার মনে আসা তাঁর লিখা কয়েকটি কবিতাংশ চয়ন করছি…

“আমার মনের গভীর ক্ষত
নাইবা জানলো কেউ,
হাসির রেখায় ঢেকে থাকুক
সাত সাগরের ঢেউ!”

কিংবা

“আফ্রোদিতির চোখের পাতায়?
কীর্তিনাশার বান চলে;
তাঁর দুখের ভাগী হবো
বিলীন হবো তার জলে!”

কিংবা

“আমার বাবা আমার বিশ্ব
বাবা ছাড়া আমি নিঃস্ব!
গুনে-মানে, ধ্যানে-জ্ঞানে
বাবা গুরু আমি শিষ্য!”

উপরের জনপ্রিয় পংক্তিমালাগুলি রোমান্টিক কবি এ কে সরকার শাওনের। প্রথম কবিতাংশটি কবির প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “কথা-কাব্যে”র কবিতা “দাগ রয়েই যায়” কবিতার। দ্বিতীয় কবিতাংশটি কবির দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “নিরব কথোপকথন” এর “মন পবনের নাও” কবিতার। তৃতীয় কবিতাংশটি তৃতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “আপন-ছায়া”র “বাবার ছবি” কবিতার। এ রকম অনেক জনপ্রিয় কবিতা তিনি লিখেছেন যা দেশে বিদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে আসছে।

কবিতায় রোমান্টিক ভাবধারার আধিক্য পরিলক্ষিত হয় বলে প্রেম পিয়াসীরা তাঁকে রোমান্টিক কবি বলে থাকেন! “কথা-কাব্য” কাব্যগ্রন্থের “বিরাগ-বচন” কবিতায় লিখেছেন,

“যে হৃদয়ে লাঙ্গল দিয়ে
রক্ত গঙ্গা বহাস,
জানিস না তুই
সেই হৃদয়ে
তোরই বসবাস!”

জনপ্রিয় কবিতা “আমার সজনী সেন” এ তিনি বিশ্বের মহান প্রেমিক প্রেমিকাদের তুলে ধরে নিজ প্রেয়সীকে লিখেছেন,
“সুন্দরের রানী ক্লিওপেট্রা তুমি
ট্রয় নগরীর হেলেন।
রবী ঠাকুরের লাবন্য তুমি,
তুমি আমার সজনী সেন!”

কবি এ কে সরকার শাওনের জন্ম ১৯৬৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের গোপালপুরে। পিতা মো: আবদুল গনি সরকার একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা মিসেস সালেহা গনি সরকার ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি সব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইনভিত্তিক পণ্য বিশেষ করে বই বিক্রির ওয়েবসাইটে বিক্রি হচ্ছে।
https://www.rokomari.com/book/author/70977/a-k-sorkar-shaon

তাঁর কবিতা অতি কাল্পনিক। কবিতা নিয়ে তিনি নিজেই বলেছেনে, “আমার কবিতার চরিত্রাবলী কাল্পনিক এবং একান্তই নিজস্ব। জীবিত, মৃত ও অর্ধ-মৃত কারো সাথে কোন মিল নেই।” তাঁর কবিতার অন্যতম চরিত্র “সজনী সেন”। সে কি অশরীরী নাকি রক্ত-মাংসের কোন মানবী? এ নিয়ে রহস্যের কোন সুরাহা তিনি আজ ও করেননি। তাঁর ভাষায় “হৃদয়েশ্বরী” কবিতায় তিনি লিখেছেন,

“কেউ বলে নাটোরে
কেউ বলে চিরির বন্দরে
আসলে সেই মহা-মানবী
আছে শুধু আমার অন্তরে”

কোমল হৃদয়ের কবি অত্যন্ত পিতৃ-মাতৃ ভক্ত। কবির পিতা-মাতা ও জন্মস্থান “গোপালপুর” নিয়ে লিখা “শিকড়-শিখর” কাব্যগ্রন্থের “শিকড়-শিখর” কবিতায় তিনি বাবা ও মা নিয়ে যা লিখেছেন তা নিম্নরূপ।

“আগাগোড়া দেশপ্রেমিক
সহজ, সরল, সৎ, সুমন।
দেখেছি ঘুরে বিশ্বজুড়ে
বাবার মত বিরল সুজন!”

মিঠেকড়া মা আমার
গুনি অতি প্রত্যুৎপন্নমতি!
মিষ্টভাষী সরলা বিদুষী
বিধি সৃজিছেন অল্প অতি!”

তাঁর জনপ্রিয় কবিতাগুলি হচ্ছে, চশমা, তুমি আমার সজনী সেন, নারী তুমি অনন্যা, পরে কথা হবে, দাগ রয়েই যায়, আপন-ছায়া, ধন্যি মেয়ে, কাশ্মীরী শাল, পশীহারা, বাবার ছবি, আমি নইকো একেলা, কাঁঠাল, উদাসীন পথিকের মনের ব্যাথা, অপ্সরী, একাদশীর চান, নীল টিপ, বিরাগ-বচন, বিক্ষুব্ধ উর্মিমালা ইত্যাদি।

কবির শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি ঝালকাঠির উদ্ধোধন হাই স্কুলে। ছেলে বেলায় অসুস্থতার কারনে ১৯৭৫ সালে সরাসরি ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন । ১৯৮০ সালের জুনে উদ্ধোধন হাই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে থাকাকালে বাবার বদলীজনিত কারনে নিজ গ্রাম গোপালপুরে চলে যান। ১৯৮৩ সালে নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ১৯৮৫ সালে নবীনগর সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৯১ সালে বাংলদেশ বিমান বাহিনীর এয়ারম্যান ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (এটিআই) থেকে এ্যারোনটিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং (এয়ারফ্রেম) থেকে প্রথম শ্রেণিতে এসোসিয়েট ইন্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ বছর ঐ ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষক ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (বহিরাগত ) থেকে ইংরেজী সাহিত্য স্নাতক, ২০০৭ সালে এজাম্পশন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড থেকে ডিপ্লোমা ইন ইনফরমেশন টেকনোলজিতে স্নাতক লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

কবির অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি যেমন বাঁশীওয়ালা, শিকড়-শিখর, আপন-আভাস, প্রলয়-প্রলাপ, আলো-ছায়া, প্রণয়-প্রলাপ, সজনী, প্রান্তিক-প্রান্তরে, চেয়ার ও চোর, বাঁকা চাঁদের হাসি (শিশুদের জন্য) ও ইংরেজি কবিতার বই” Songs of Insane” এবং গল্পগ্রন্থ “মেকাপ-বক্স” প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

১৯৯১ সালের ৫ জুলাই সাবেক আহসানউলাহ ইন্জিনিয়ারিং কলেজের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সত্তরের দশকের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশেক জহির (আসল নাম এ কে এম জহিরুল হক ইব্রাহিম) সাহেবের দ্বিতীয় কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ও তার সহধর্মীনি শিক্ষাবিদ রত্নগর্ভা নাজমা আশেকীন শাওন এম. এ. এম-এড তিন কন্যা সন্তানের জনক-জননী। জ্যেষ্ঠ কন্যা নাজমুন সালেহীন তৃষা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করেছে। মেঝো কন্যা কামরুন সালেহীন তৃনা ষ্টাডি ইন ইন্ডিয়া (এসআইআই) প্রজেক্টের আওতায় ভারত সরকারের পূর্ণ স্কলারশিপে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (কিট) এরোস্পেস ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছে। কনিষ্ঠ কন্যা রুশ সরকারের পূর্ণ স্কলারশিপে মস্কোর বিখ্যাত” পিরোগভ রাশিয়ান ন্যাশনাল রিসার্চ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি”তে ডক্টর অফ মেডিসিন পড়ার জন্য চুড়ান্ত তালিকায় রয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি মস্কো চলে যাবার কথা রয়েছে।

সংগঠন ও দল বিমুখ তিনি বাংলাদেশ সম্মিলিত কবি পরিষদের নিষ্ক্রিয় সভাপতি। বাড়ী থেকে কদাচিৎ বের হন। লিখালিখির পর অবসরে তিনি গান করেন। ষ্টারমেকারে এ প্লাস ও এ ডাবল প্লাস গ্রেডে কবির রয়েছে সাড়ে তিন শত গান। সরকারী চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরখানের নিজ বাসভবন “শাওনাজে ভবনে”।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট