কলকাতা: এক নাবালিকার মায়ের আবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট নাবালিকার গর্ভপাতের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই আইনী স্বীকৃতি ধর্ষণের মতো বর্বর ঘটনায় আক্রান্ত মহিলাদের পক্ষে একটি অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক রায়। এতদিন এই অনভিপ্রেত অনিচ্ছুক গর্ভাবস্থাকে মেনে নিতে হতো মেয়েদের। এমনকি সেই বাচ্চাকে না চাইলেও লালন পালন করতে হতো। এখন সময় হয়েছে এই আক্রান্তদের অবস্থাকে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার দৃষ্টিকোণে নয় বরং মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার। এই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হওয়া মেয়েরা শরীর ও মনের গভীর ক্ষত নিয়ে সারা জীবন বাঁচে, যা সমগ্র সমাজের ওপর প্রভাব ফেলে।
তবে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অবশ্যই আক্রান্ত মহিলাদের ও নাবালিকা হলে তাদের অভিভাবকের থাকা উচিৎ। দেশের সমস্ত কোর্টের উচিৎ এই ধরনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আক্রান্তদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তাদের পাশে থাকা; তাদের সম্মানজনক ভাবে সমাজের স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া, যেমন প্রশংসনীয় ভাবে কলকাতা হাইকোর্ট এই কাজটি করেছেন।
এটা মনে রাখা দরকার যে ধর্ষণ এমন একটা অপরাধ যেটা শুধুমাত্র একটি পুরুষ একটি নারীর বিরুদ্ধে করে না – এই অপরাধ সমস্ত নারী সমাজের প্রতি হয়। ধর্ষণের উদ্দেশ্য ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশ করা। চিরাচরিত কাল থেকে এভাবেই পুরুষ নারীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে, অসম্মান করেছে । ধর্ষণের ক্ষত শুধুমাত্র আক্রান্ত নারীকেই ক্ষতবিক্ষত করেনা, পরোক্ষে সমগ্র নারীসমাজ কে ক্ষতবিক্ষত করে। সেইসঙ্গে এই ধরনের অপরাধের যথাযথ বিচার দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। সরকারের তরফে থেকে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধকে সমাজ থেকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। “যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রতি বিন্দুমাত্র সহনশীল না হওয়ার” নীতিকে শুধুমাত্র প্রচারমাধ্যমে না রেখে দেশের সমস্ত সরকারের উচিত এই নীতিকে বাস্তবায়িত করা। মহিলা স্বরাজ আশা করে যে কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় এই ধরনের অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে যে অসংখ্য আবেদন অন্যান্য কোর্টে দাখিল হয়েছে, তাদের পথ দেখাবে।