কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি জাস্টিস ইন্দিরা ব্যানার্জি কলকাতার ইলিয়ট রোডে দেশের প্রথম টেলাডক টেলিমেডিসিন কনসালটেশন ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন। এটি তৈরি করেছে মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী মিশন হাসপাতাল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। উপস্থিত ছিলেন মীনাক্ষী মিশন হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ড: এস গুরুশঙ্কর।
এই ক্লিনিক টেলাডক প্রযুক্তি বিশিষ্ট, যেটিকে বিশ্বের আধুনিকতম টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গণ্য করা হয় এবং বিশ্বের সেরা দশটি হাসপাতালের মধ্যে ছয় টিতেই ব্যবহার করা হয় (ওই ছয় হাসপাতাল হল: ১. মায়ো ক্লিনিক- রচেস্টার, ২. ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক-ইউএসএ, ৩. ম্যাসাচুসেট্স জেনারেল হসপিটাল-ইউএসএ, ৪. চ্যারাইট-ইউনিভার্সিটিমেডিজিন- জার্মানি,৫. দ্য জন হপকিনস হসপিটাল-ইউএসএ, ৬. সেবা মেডিকেল সেন্টার-ইসরাইল)। ভারতে মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী হাসপাতাল দেশের প্রথম এবং একমাত্র হাসপাতাল যারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কলকাতার রোগীরা সরাসরি মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী হাসপাতালে ৪৫ টি বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে রোগ নির্ণয়,পরামর্শ এবং চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন।১৯৮৫ সালে নির্মিত দেশের টেলিমেডিসিনের পথিকৃৎ ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।
মীনাক্ষী মিশন হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র, মাদুরাইয়ের চেয়ারম্যান ডক্টর এস গুরুশঙ্কর বলেন, “কলকাতায় এই ধরণের একটি আধুনিক টেলি কনসালটেশন ক্লিনিকের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহুসংখ্যক রোগী আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। নতুন পরিষেবার মাধ্যমে আমরা এরাজ্যের মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম,যাঁরা নিজেদের সাধ্যের মধ্যে উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবার সন্ধান করছেন। টেলাডক মানুষের ভার্চুয়াল সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রধান প্রযুক্তি গুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ,যেটিকে বিশ্বের আধুনিকতম টেলিমেডিসিন প্লাটফর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা এই দেশের একমাত্র হাসপাতাল যারা সম্পূর্ণভাবে টেলাডক নির্ভর একটি টেলিমেডিসিন কেন্দ্র তৈরি করেছে। এবারে আমরা দেশের কয়েকটি বাছাই করা জায়গায় শুধুমাত্র টেলিমেডিসিনের কেন্দ্র তৈরি করব যেখান থেকে রোগীরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এতে তাঁরা অযথা যাতায়াতের হয়রানি এড়াতে পারবেন। পাশাপাশি মাদুরাইয়ের মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর শহরের হাসপাতালে এ ধরণের পরিষেবার খরচ মেট্রো শহরগুলো তুলনায় অনেক কম। পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ কলকাতায় আমাদের এই টেলাডক নির্ভর কনসালটেশন সেন্টার থেকে উপকৃত হবেন।”
ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ টেলাডক প্রযুক্তিতে রোগীরা মীনাক্ষী মিশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের আউটডোর চিকিৎসা, তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরী মাপকাঠির পরিমাপ ও শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ করতে পারবেন। রোগীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সঞ্চিত রাখার ব্যবস্থা রয়েছে,চিকিৎসকরা যা সহজেই প্রয়োজনে আবার হাতে পেয়ে যাবেন। রোগীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ এর ক্ষমতা আছে এই প্রযুক্তির। যার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা আরও উন্নত মানের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন।টেলাডক প্লাটফর্মে লাগানো ক্যামেরা এবং মনিটর রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে কথোপকথনের ক্ষেত্রটিকে আরও কার্যকরী করে তুলেছে। রোগীরা দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মাধ্যমে একই সঙ্গে ৬ জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
মীনাক্ষী মিশন হাসপাতাল এবং গবেষণা কেন্দ্র মাদুরাই এর চেয়ারম্যান ড: এস গুরুশঙ্কর বলেন, “বিগত ১৫ বছর ধরে রোগীদের টেলিমেডিসিন পরিষেবা দিয়ে আসছি যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত এক লক্ষেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এখন আমাদের টেলিমেডিসিন বিভাগটি সম্পূর্ণভাবে টেলাডক টেলিহেলথ প্লাটফর্ম নির্ভর, যা আমাদের আরও দক্ষতার সঙ্গে গোটা দেশের রোগীদের কাছে আমাদের বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও ফলপ্রসূ ভাবে পৌঁছে দিতে সক্ষম করে তুলেছে। মীনাক্ষী মিশন হাসপাতালের টেলাডক টেলি মেডিসিন বিভাগ এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্রনিক রোগের চিকিৎসা সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারছেন।এই হাসপাতাল দেশের প্রথম স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান যারা স্বয়ংক্রিয় টেলাডক রোবটের মাধ্যমে দু’বছর আগে গভীর করোনা সংকট কালে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে রোগীদের স্বাস্থ্যপরিসেবা পৌঁছে দিয়েছেন।