গন্তব্যস্থল : মৌসুনি দ্বীপ


শনিবার,১২/০২/২০২২
5605

বিশ্বজিৎ রায়: সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূরীকরণের জন্য বেছে নিয়েছিলাম প্রকৃতির কোল, সকালবেলা শিয়ালদাহ রেলস্টেশন থেকে নামখানা লোকাল ধরে ঘটা তিনেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম নামখানা রেলস্টেশন। স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা টোটো নিয়ে মিনিট চল্লিশের মধ্যে পৌঁছে গেলাম হুজ্জুতের খেয়া ঘাট, মিনিট তিনেকের মধ্যে নৌকো করে পেরিয়ে গেলাম চিনাই নদী। নদীর এপারের একটা দোকান থেকে টিফিন সেরে আবার টোটো করে রওনা দিলাম মৌসুনির উদ্দেশ্যে। মিনিট পঁচিশ পর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যস্থলে, চারিদিকে গাছপালার মধ্যে তাবু বা মাটির ঘরে থাকার ব্যবস্থা। আর দুহাত দূরে সমুদ্রতট আর বিস্তৃত জলরাশির সমাহার, অনলাইনে টেন্ট বুকিং করে রেখেছিলাম, ফলে নিজেদের টেন্ট পেতে খুব একটা সমস্যা হলোনা, ফ্রেশ হয়ে আসার আমাদের অভ্যর্থনা জানানো হলো ডাবের জল দিয়ে, তারপর সোজা চলে গেলাম সমুদ্রতটে। চুটিয়ে উপভোগ করলাম আর বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করলাম , সমুদ্রে স্নান সেরে দুপুরের আহারটা করে নিলাম। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, পাতিলেবু, শশা, বেগুনভাজা, পোস্ত দিয়ে আলুভাজা, মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপির তরকারি, রুই মাছের কালিয়া, চাটনি আর পাঁপড়. খাওয়া নিয়ে একটু জিরিয়ে বেরিয়ে পড়লাম জম্মু দ্বীপ ভ্রমণে।

ছবি : বিশ্বজিৎ রায়

ফিরে এসে সমুদ্রতটেই দেখলাম সূর্যাস্তের দৃশ্য। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য ! এতটাই অপূর্ব আর মুগ্ধকর যে কোনো ভাষা দ্বারা তার ব্যাখ্যা চলেনা। তারপর ফিরে এলাম ক্যাম্পে, ততক্ষনে টুনি লাইট দিয়ে গোটা ক্যাম্পটা সাজিয়ে তোলা হয়েছে। হালকা সুরে গান বাজছে, চা বিস্কুট এলো. বসে বসে গল্প করতে লাগলাম, শুরু হলো বার্বিকিউ চিকেন তৈরির প্রস্তুতি, কিছুক্ষন পর এলো মুড়ি আর পিয়াজি, বেশ জমজমাট পরিবেশ। খেতে খেতে গল্প চললো, বার্বিকিউ চিকেন হাতে পেয়ে টপাটপ মেরে দিলাম, কি অসাধারণ খেতে ! কেয়ারটেকার জিজ্ঞেস করে নিলো কে ভাত খাবে র কে রুটি ! তারপর আমরা টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের অন্ধকারে সমুদ্রতট ভ্রমণে, যা যা দেখলাম আর অনুভব করলাম সবই স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে। ঘন্টা দুয়েক পর ক্যাম্পে ফিরে এলাম , ভাত, এক ধরণের পাঁচমিশালী তরকারি আর মুরগিরকারী দিয়ে রাতের আহারটা সম্পন্ন করলাম. তারপর টেন্টে শুয়ে চললো গল্প আর থেকে থেকে কানে আসছিলো সমুদ্রের গর্জন. কখনো ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা। ভোরবেলায় ঘুম ভাঙলো মোরগের ডাক আর পাখির কিচির মিচির শব্দের সাথে। ভোরের সমুদ্রতট দর্শন করলাম। দেখলাম সারি সারি গাছের ফাঁক দিয়ে সূয্যিমামা উঁকি দিচ্ছেন। টেন্টে ফিরে পেলাম চা আর বিস্কুট, তারপর আমাদের ছবি তোলার পর্ব চললো। স্নান সেরে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। ইতিমধ্যেই ডাক পড়লো সকালের টিফিনের। লুচি, তরকারি, আর একটা ডিমসেদ্ধ। ক্যাম্প ম্যানেজার গোপালদার সাথে কথা বলে বেরিয়ে এলাম, ঠিক যেভাবে পৌঁছেছিলাম, সেভাবেই ফিরে এলাম।

ছবি : বিশ্বজিৎ রায়


সর্বোপরি ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে মৌসুনি একেবারে আদর্শ জায়গা। একবার অন্তত এ স্থান দর্শন করা উচিত বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়।
বিঃ দ্রঃ 1) week days এ যেতে হলে অগ্রিম অনলাইন বুকিং নাও করতে পারেন. তবে weekend এ গেলে অগ্রিম অনলাইন বুকিং অবশ্যই করিয়ে নেবেন। আমরা Alafia travellers Camp এ বুকিং করে রেখেছিলাম।
2) check in এর পর থেকে check out এর আগে অবদি সমস্ত খাওয়া ( মিনারেল ওয়াটারও ) প্যাকেজের মধ্যে. কেবল বার্বিকিউ চিকেন আর জম্মু দ্বীপ ভ্রমণ প্যাকেজের বাইরে।
3) আমিষ – নিরামিষ দুইরকম খাবারের ব্যবস্থা আছে।
4) ক্যাম্পের ম্যানেজার থেকে শুরু করে কর্মচারী সকলের ব্যবহার খুবই ভালো।
5) মদ্যপান হয়. তবুও পরিবার নিয়ে যাওয়াটা নিরাপদ বলে আমার ব্যক্তিগত মত। অনেকেই অমত পোষণ করতেই পারেন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট