অনুশ্রী বিশ্বাস: মুকুটমণিপুর – মানুষের ছোটবেলায় এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে যেগুলো জীবনের স্মৃতিপটে রয়ে যায় অমলিন, যা ফিরে আসে কোনো আনমনা বিকেলে পর্যন্ত সূর্যের আলোয় জানলার পশে বসে ঘর ফেরা পাখিদের দেখতে দেখতে। মনে হয় কোনোদিন তো আর ফিরবে না সেই সোনালী স্বপ্ন , ফিরবে না তো সেই রাত জাগা আকাশের শান্ত নীরবতা। আমি গেছিলাম কোনো এক ফেলে আসা সময় বহু বহু বছর আগে বেড়াতে মুকুটমণিপুর। সেই বেড়ানোর স্মৃতি এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে এখনো মাঝে মাঝে মনে হয়ে যেন ঠিক মাঝের এতো গুলো বছর যেন বুদ্বুদের মতো মিলিয়েছে শূন্যে। তাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করতো – কেমন আছো মুকুটমণিপুর। আমরা গেছিলাম এই বছর মার্চ মাসে বিষ্ণুপুর ঘুরতে এবং তার পরের দিন মুকুটমণিপুর। সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে যখন WBTDC বিষ্ণুপুর থেকে বেরোলাম তখন আকাশ এ হালকা মেঘের সঞ্চার ঘটেছে। বিষ্ণুপুর থেকে মুকুটমণিপুর যাওয়ার রাস্তা টা আমার মনে হয়ে দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম সুন্দর রাস্তা। রাস্তার দুপাশে জঙ্গল আর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। মুকুটমণিপুরে আমরা ছিলাম WBFDC সোনাঝুরি রিসোর্টে। বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বন বিভাগের এই থাকার জায়গা টি পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কটেজ। আমরা ছিলাম দুটি ঘর নিয়ে – শাল ও পিয়াল, রুম গুলো বিশাল বড়। পৌঁছতে দুপুর হয়ে গেছিলো বলে তাড়াতাড়ি সেরে ফেললাম লাঞ্চ। ঘরোয়া রান্না একেবারে – মাছ ভাত দিয়ে সারা হলো খাওয়া। এরপর গেলাম কংসাবতী নদীর ওপর গড়ে ওঠা ডাম ঘুরতে এবং তার সঙ্গে বোটিং করতে। বোটিং এর ব্যাপার টা কিন্তু বেশ খরচ সাপেক্ষ যা দেখলাম। যা খুশি দাম চাইছে, তাই আপনাকে দর দাম করতে হবে ভালোই। অবশেষে একটিও বোট ভাড়া করে কংসাবতী নদীর বুকে ভাসতে শুরু করলাম। প্রথমে গেলাম ডিয়ার পার্ক। বোট যেখানে দাঁড় করবে সেখান থেকে ডিয়ার পার্ক যেতে আবার একটা ভ্যান গাড়ি ভাড়া করতে হবে। হেটেও যাওয়া যাবে অবশ্য যদি হাতে সময় থাকে। ডিয়ার পার্কে রয়েছে বেশ কিছু হরিণ যাদের আপনি খাওয়াতেও পারেন। এরপর আমরা গেলাম পরেশনাথ মন্দির। ছোট্ট টিলার ওপর তৈরী এই মন্দিরে শিব ঠাকুরের পুজো হয়। মন্দির দর্শন করে যখন যখন নৌকা করে ফিরছি মুকুটমণিপুর তখন সন্ধ্যার কালো নিকষ অন্ধকার চারদিক গ্রাস করেছে। বিশাল কংসাবতীর সেই সর্বগ্রাসী রূপ ভয়ের সঞ্চার ঘটাবে একথা না বললেই নয়। কিন্তু সেই সঙ্গে ভালো লাগার স্রোতও বয়ে যাবে। যখন ফিরলাম ঘাটে তখন প্রায় সন্ধ্যে ৭ টা বেজে গেছে। একটু চা খেয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে , ফেরার সময়ে এতো অন্ধকার ছিল চারপাশে মনে পরে যাচ্ছিলো বহু বছর আগের কথা যখন মুকুটমণিপুরে এসেছিলাম। মনে হচ্ছিলো যেন সেই পুরোনো দিনেই ফিরে গেছি। সেই ঝি ঝি পোকার ডাক, সেই চারিদিক গ্রাস করা অন্ধকারের চাদর বেছানো পরিবেশ। রাতের WBFDC কিন্তু এক দারুন অভিজ্ঞতা, ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় বসে দূরে ডামের আলো দেখা আর তার সঙ্গে বিভিন্ন পোকা মাকড়ের শব্দ এক অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি করবেই। আপনার মুকুটমণিপুর বেড়ানোর সার্থকতা এখানেই।
আমাদের মুকুটমণিপুর ঘোরার ভিডিও দেখতে পারেন এই লিংক থেকে