ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: ১৯৮২ সালে কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল আলম আকনের দণ্ড বাতিল করে চাকরিকালীন সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। অবশেষে তিন যুগ পর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রিভিউ রায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পাবেন তার হারানো চাকরি জীবনের সব বেতন-ভাতা। আদালতে ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস কে মোর্শেদ। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনে। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মাত্র আড়াই টাকা বেশি দামে সরকারি পাট বীজ বিক্রির অভিযোগে স্বাধীনতার ১১ বছরের মাথায় চাকরি হারাতে হয়। শুধু তাই নয়, হতে হয়েছিল গ্রেপ্তারও।
৩৯ বছর পর সামরিক আদালতের আদেশে চাকরি হারানো সেই বীর অবশেষে নিজের অধিকার ফিরে পেলেন। নথি থেকে জানা যায়, ঘটনাটি এরশাদের সামরিক শাসন আমলের। মাত্র আড়াই টাকা বেশি দামে সরকারি পাট বীজ বিক্রির অভিযোগে ১৯৮২ সালের ১৫ই এপ্রিল পাট সম্প্রসারণ সহকারী মো. ওবায়দুল আলম আকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৭শে সেপ্টেম্বর এরশাদের সামরিক আদালত আকনকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি দুই মাস জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর প্রায় ৩০ বছর পর ২০১২ সালে সামরিক আদালতের সেই সাজা ও চাকুরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ওবায়দুল আলম আকন। সেই রিটে চাকুরিচ্যুতি থেকে অবসরে যাওয়ার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সব সুযোগ-সুবিধাসহ সমুদয় বেতন-ভাতা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ
ই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২০শে নভেম্বর হাইকোর্ট ওবায়দুল আলমের সাজা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ে তার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত সব বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পাওনা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আপিল করে। এই আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ রায় দেন আপিল বিভাগ। সেই রায়ে ওবায়দুল আলম আকনের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের অংশ বহাল রেখে সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত অংশটি (এক্সপাঞ্জ) বাদ দেওয়া হয়। তবে এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সেই আবেদন খারিজ করে আজ রায় দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।