বাংলাদেশের গাছ বলে তার প্রিয় ঋতু বর্ষকাল

আহসান রনি: যদি জানতে চাওয়া হয় আপনার প্রিয় ঋতু কোনটি? আমরা একেকজন হয়তো একেক ঋতুর পক্ষে নিজেদের পছন্দ আর ভালোলাগার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করি। সবাই অবশ্যই নিজের পছন্দের ঋতুটিকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে চাইব। কিন্তু যদি গাছেদের কাছে জানতে চাওয়ার সুযোগ থাকতো তাদের প্রিয় ঋতু কোনটি। আমার বিশ্বাস সব গাছ সমস্বরে বলে উঠতো বর্ষাকাল। প্রকৃতি যেন প্রতিবছর বর্ষা নিয়ে আসে শুধু গাছেদের জন্যই। প্রতিবার বর্ষাঋতু যেন ফিরে আসে ফলগাছগুলোর ফল ধারণের পর কিছুটা অবসরের সঙ্গী হয়ে, চারা গাছেদের আকাশ ছোঁয়ার সাহস হয়ে আর কদম বকুল কেয়া কামিনীর মোহনীয় সুবাস হয়ে। গ্রীষ্মের খরতাপের পর বর্ষায় মাটি হয়ে উঠে নরম ও কোমল। তাই গাছের নতুন চারা রোপণেরও উত্তম সময় এটি। আমরা জানি ভালো চারা মানে ভালো গাছ। তাই চারা রোপনের আগে যদি সঠিক চারাটি সংগ্রহ করা যায় তাহলে বৃদ্ধি ও ফলনও সন্তোষজনক হয়। সাধারণত চারা সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোন নার্সারিতে গিয়ে আমরা প্রথমেই বলি যে, আমাকে ভালো একটি গাছ দিন! এবং এ কথা বলে বড়সড় একটি গাছ আশা করি। আর যদি গাছে ফুল-ফল থাকে তাহলে তো কথাই নেই! অনেকেই ভাবি পয়সা দিয়ে যখন কিনব তবে ছোট কেন বড় গাছই কিনি! এক্ষেত্রে যদি বিক্রেতা চারার দাম কিছুটা কম রাখেন তবে তো জিতে গিয়েছি ভেবে খুশিমনে গাছটি নিয়ে চলে আসি। আর অধিকাংশ ক্রেতার এমন মনোভাবের বিষয়টি বিক্রেতারা ভালো করেই জানেন! ফলে তারাও হাসিমুখে দেখতে বেশ বড়সড় গাছটি ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দেন। চারাটি কেনার সময় আমরা অনেকেই ভাবি না, গাছটির শিকড় মাটিতে চলে গিয়েছিল কি না, মাটি থেকে উঠানোর সময় শিকড় ছিড়ে গিয়েছিল কি না! চারাটি কোন জাতের কিংবা উৎকৃষ্ট মানের কিনা! সবসময় কাছাকাছি বিশ্বস্ত নার্সারি থেকে চারাগাছ নেয়ার চেস্টা করবেন। না হলে ঠকার আশঙ্কা থেকেই যায়। যেমন, বলে দিল হবে মিষ্টি, হলো টক। বলল, হাইব্রিড, হবে ননহাইব্রিড, বলবে কলমের চারা হবে বীজের চারা, ফুলের ক্ষেত্রে বলে দিবে এক রঙ হবে আরেক রঙ। তাছাড়া কাছাকাছি দুরত্বের নার্সারি থেকে চারা কিনলে তা আনানেয়ায় সুবিধা হয় এবং চারার উপরও কম চাপ পড়ে।

কি গাছ লাগাবেন?

কোথায় লাগাবেন? টবে নাকি মাটিতে!

টব হলে সেটি কেমন সাইজের টব এবং তা কোথায় রাখবেন?

গাছের চারা কিনতে যাবার আগে এ বিষয়গুলো নিয়েও স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই!

কি দেখে ভালো চারা চিনবেন; এ প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন। নার্সারিতে গিয়ে প্রথমে পুরো নার্সারিটি ঘুরে দেখে নিন চারাগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কি না! যদি গুছিয়ে রাখা থাকে তবে ধরে নিবেন বিক্রেতা যতœবান। এবং গাছ নিলে ভালো গাছ পাবেন। আর যদি দেখেন পাতা হলুদ, শুকনো, এলোমেলো, গাছের নিচে আগাছা তবে ধরে নিতে হবে গাছওয়ালা তেমন যতœবান নয়।

সবল ও ঝোপালো চারা গাছ দেখে নিন: নার্সারিতে একই জাতের বিভিন্ন চারাগাছ থাকে। কিন্তু সবগুলোর বৃদ্ধি সমান হয় না। তাই যে গাছটির বৃদ্ধি ভালো হয়েছে এমন গাছটি দেখে নিতে হবে। যে গাছের একটি শাখা লম্বা হয়ে উঠে গিয়েছে সেটি অবশ্যই নয়। কারণ এমন গাছ পরবর্তীতে ভালো শেইপে আনা খুব মুশকিল। আবার চারাগাছে ফুল বা ফল ধরা থাকলে মন সহজেই আকর্ষিত হয়। সে গাছটি নিতে আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। তবে লাগানোর জন্য ফুল ফলযুক্ত গাছ যথোপযুক্ত নয়! বাড়িতে গিয়ে লাগানোর পরপরই ঝরে যাবে সব ফুল ফল। এমনকি মারাও যেতে পারে গাছ। তাই ফুল ফলে গাছ ভরে থাকলে সে দিকে মনোযোগ না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বরং ফুল বা ফল আসতে শুরু করেছে কিংবা শীগ্রই ফল আসার নিশ্চয়তা দিবে এমন গাছ নিতে পারেন। যে চারাগাছটি কিনবেন তার উচ্চতা হওয়া চাই ২ থেকে ৩ ফুটের মধ্যে। এ উচ্চতার চারাগাছ সহজে মানিয়ে নিতে পারে। গাছ টবে থাকুক বা প্যাকেটে থাকুক, শিকড় বেরিয়ে গেলে কাটা যাবে না। আর মূল শিকড়কে অবশ্যই খুব যতœ করে রাখতে হবে। তাই গাছ তোলার সময় খেয়াল করুন পলিথিন বা প্যাকেট ভেদ করে মাটিতে শিকড় চলে গিয়েছে কি না! যদি গিয়ে থাকে তবে টেনে তোলার সময় শিকড় ছিঁড়ে যেতে পারে। তারপর বাড়িতে নিয়ে লাগালে গাছটি মরে যেতে পারে। আবার মূল শিকড় বাইরে বার হয়ে গিয়েছিল আর তা কেটে দেয়া হয়েছিলো এমন চারাগাছও কিন্তু চলবে না! তবে গাছ প্যাকেটে থাকলে বড় প্যাকেটের গাছ নেয়া উত্তম। চারাগাছ কেনার সময় খেয়াল করুন গাছের গোড়াটা একটু মোটা ও সবল কি না। যা মাটিতে আঁকড়ে থাকে শক্তভাবে। অনেকসময় বিক্রেতা নতুন লাগানো গাছকে পুরোনো বলে চালিয়ে দিতে চায়। তাই গাছের ডাল ধরে আলতো করে ঝাঁকি দিয়ে দেখুন গাছের গোড়ায় মাটি শক্ত করে ধরে আছে কি না! গোড়া শক্ত হলে কিছু হবে না, আর নতুন মাটিতে বসানো হলে সহজেই খুলে আসবে। ফলের চারা কেনার সময় চারা যেন বীজ থেকে তৈরি না হয় সেটিও নিশ্চিত হতে হবে। কারণ, বীজের চারা থেকে ভালো ফলন আশা করা বৃথা। তাই বীজের চারাকে যেন বিক্রেতা কলম বা গ্রাফটিং বলে চালিয়ে দিতে না পারেন সে ব্যাপারে থাকতে হবে সচেতন। বীজ থেকে উৎপাদিত চারাগাছের গোড়ায় থাকবে বীজের মরে যাওয়া অংশ। গাছটি গোড়া থেকে সমান্তরালে উপর দিকে ক্রমশ সরু হতে থাকবে। পাতা হবে সবুজ। অপরদিকে গ্রাফটিং করা বা কলমের চারায় দেখতে পাবেন গাছের গোড়া বা স্টক হবে সাধারণ গাছের আর উপরের দিক বা সায়ন হবে উন্নত গাছের।

গ্রাফটিং চারা চেনার সহজ উপায় হলো গাছের গোড়ায় লক্ষ্য করুন। দেখুন দুটো গাছকে কেটে জোরা দেওয়া হয়েছে। এবং জোরা দেওয়া স্থানে পলিথিন বা কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আবার গ্রাফটিংয়ের কিছুটা উপর থেকে যেন গাছের ডালপালা শুরু হয় সেটিও খেয়াল করতে হবে। গ্রাফটিং না হলে দেখুন চারাটি গুটিকলমের কি না। গুটিকলম হলেও জাত ভালো হবে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো ভালো করে দেখে নেওয়া কলমে শিকড় এসেছে কি না! আর যদি ফলফুল থাকে তবে ধরে নিন এটি গুটি কলম। কারণ, বীজের গাছ এতো মোটাও হবে না, বা এত তারাতাড়ি ফলও আসবে না। গুটিকলমে শিকড় দেখা না গেলে বিক্রেতাকে মাটি ভেঙে শিকড় দেখাতে বলতে পারেন। চারাগাছ কেনার সময় ভালো করে দেখে নিতে হবে গাছটি রোগাক্রান্ত কি না। যেমন পাতা শুকনো কিনা, কুঁকড়ানো কি না, পাতার উপর নিচে কোনো পোকামাকড় আছে কি না! কোনো দাগ আছে কি না তাও দেখে নেওয়া চাই। না হলে গাছের ক্ষতি তো হবেই এটি গিয়ে আপনার বাগানের অন্য গাছেও রোগ ছড়াবে। ফুল ফল গাছের চারা কেনার সময় গাছের পাতার উপরিভাগে ভালো করে দেখে নিন অগ্রমুকুল ঠিক আছে কি না। না হলে নতুন ডাল গজাতে বা পাতা আসতে সময় বেশি নিতে পারে। এখন প্রায় সব ধরনের ফুল ফলের উন্নত ভ্যারাইটি পাওয়া যায়। যাতে অল্প দিনে বেশি ফুল ফল হয়ে থাকে।

এ গাছগুলোই হতে পারে প্রথম পছন্দ। মৌসুমি ফুলের চারা কিনতে হলে অবশ্যই ফুলসহ গাছ কেনা থেকে বিরত থাকুন। সর্বোচ্চ কলিসহ চারাগাছ নিতে পারেন। যদি ফুলসহ গাছ পছন্দ করে থাকেন তবে দেখা যাবে ফুল সব নার্সারিতেই ফুটে গেছে আপনার কাছে আছে শুধুই গাছ আর পাতা। বীজতলা থেকেও তুলে আনা চারাগাছের শিকড় অক্ষত আর চারা যেন থাকে সবুজ ও তাজা সেদিকে খেয়াল রাখুন। আবার পাতার বৃদ্ধিও হতে হবে আশানুরূপ। মোটকথা, গাছের চারা কিনতে গেলে আপনাকে এ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা চাই। তাহলে সহজেই আপনি একটি উৎকৃষ্টমানের গাছের চারা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। এবং তা থেকে ফলনও হবে আশানরূপ।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

Barcode স্টিকার কিভাবে তৈরি করা হয় ?

Barcode স্টিকার তৈরি করার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ, তবে নির্ভর করে আপনি কিসের জন্য এটি বানাচ্ছেন—ব্যবসার…

3 days ago

দক্ষিণেশ্বরের পর কালীঘাট! নববর্ষের প্রাক্কালে স্কাইওয়াক উপহার, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা — “ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার”

কলকাতা, ১৪ এপ্রিল ২০২৫:নববর্ষের আগের দিনেই শহরবাসীকে বিশেষ উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণেশ্বরের পর…

6 days ago

নিজের রাজ্যেই উদ্বাস্তু! মুর্শিদাবাদের ভয়াবহ ঘটনায় নিঃস্ব একাধিক পরিবার

মুর্শিদাবাদ, ১৫ এপ্রিল ২০২৫:এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। ভাত বসিয়েই কেউ দৌড়েছেন প্রাণ বাঁচাতে। রাতারাতি…

6 days ago

নববর্ষের সকালে পথে শুভেন্দু, চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির থেকে বর্গভীমা মন্দির পর্যন্ত শোভাযাত্রা

নন্দীগ্রাম, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: বাংলা নববর্ষের সকালেই ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আবহে পথে নামলেন রাজ্যের বিরোধী…

6 days ago

“আইন কখনও নিজের হাতে তুলে নেবেন না” — কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: রাজ্যের একের পর এক অশান্ত ঘটনা— মুর্শিদাবাদ, ভাঙড় — সব মিলিয়ে…

6 days ago

মুর্শিদাবাদের পর ভাঙড়েও অশান্তির আগুন, গ্রেফতার ৮ জন

ভাঙড়: মুর্শিদাবাদে ঘটনার আঁচ না মিটতেই এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। এলাকায়…

6 days ago