ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: ঈদের পর থেকে আবারো বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। এজন্য ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচলকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে ভারত ফেরতদের মধ্যেও করোনা শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। এমন অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর নতুন করে আরও কয়েকটি জেলা লকডাউনের আওতায় আনার কথা ভাবছে সরকার। ভারত ভেরতদের করোনা শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি এদের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ার খবরও আছে। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তাই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতির দিকে কঠোর নজর রাখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংক্রমণের লাগাম টানতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও রাজশাহী জেলাও লকডাউনের আওতায় আনা হতে পারে বলে জানা গেছে। অধিদপ্তর এই তিন জেলা নিয়ে এমন পরিকল্পনা করছে। এদিকে অধিদপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, শুধু সীমান্তবর্তী জেলা নয়, শনাক্ত বাড়লে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে লকডাউন দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও তিনটি জেলা আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সংক্রমণ বাড়লেই সেগুলোতে লকডাউনের চিন্তাভাবনা রয়েছে।’ স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, ‘আমরা যখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণা করি, তখন ওই জেলায় সংক্রমণের হার ছিল ৪০ শতাংশের ওপরে। আর অন্য জেলাগুলোতে এখনো সংক্রমণ অনেক নিচে। তবে যদি বাড়তে থাকে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেয়া হবে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদে অনেক মানুষ ঢাকা থেকে নিজ নিজ গ্রামে গিয়েছিলেন। লোকসমাগমও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মার্কেটেও ভিড় ছিল। সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। তবে এর সঙ্গে করোনার ভারতীয় ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) কোনো যুক্ততা আছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে বাংলাদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের তুলনায় তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে ২২ জেলায় নতুন রোগী বৃদ্ধির হার শতভাগ বা তার বেশিও ছিল। এরমধ্যে ১৫টি জেলাই সীমান্তবর্তী। অন্যদিকে অধিদপ্তরের তথ্যও বলছে, ঈদের পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ভারত সফরের ইতিহাস আছে। বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় এক দিনেই ভারত থেকে আসা ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। নতুন করে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের বিষয়ে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ডার এলাকার বেশ কিছু জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। সরকার ইতিমধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এক সপ্তাহের জন্য বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছে। এখন অন্য জেলাগুলোতে দিন দিন শনাক্তের হার যেভাবে বাড়ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা ৩৭ জেলায় আবার লকডাউন ঘোষণা করা যেতে পারে।’ সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, ঈদে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে গিয়েছিল ঈদ করতে। ফলে গ্রামে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোকসমাগম হয়েছিল। এটা সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ। আবার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ সংক্রমণ নিয়ে দেশে ঢুকেছে।
সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হলেও সেটা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সার্বিক অবস্থায় করণীয় কী- এমন প্রশ্নে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে করণীয় একটাই, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যেখানে রোগী বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে, সেখানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে গত মার্চের মতো অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ করেই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে ১০১ থেকে ৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলা সাতটি। এগুলো হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেট। এছাড়া এই তালিকায় আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, নোয়াখালী ও গাজীপুর। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪০ শতাংশের ওপরে সংক্রমণ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনায়। ২০ থেকে ২৯ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে সিলেট, ঝালকাঠি, রাজশাহী, নাটোর ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও ফরিদপুরে। এছাড়া ১০ থেকে ১৯ শতাংশ সংক্রমণের হার রয়েছে দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, রংপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, গাজীপুর বগুড়া, গোপালগঞ্জ, যশোর, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, মাগুরা, নওগাঁ, কক্সবাজার, ভোলা, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা এবং টাঙ্গাইলে।