শীতলকুচির জোরপাটকির ১২৬ নম্বর বুথে গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার নির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় এলাকার চার যুবক হামিদুল, ছামিউল, মনিরুজ্জামান ও নুর আলমের। জোরপাটকি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় নির্বিচারে গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক এই হামলা বলে অভিযোগ তাদের। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের রিপোর্টে এই ঘটনার দায় গ্রামবাসীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সত্যিই ওই দিন কি ঘটেছিল শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে? সত্যিই কী গ্রামবাসীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করে রেখেছিল? তাদের অস্ত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল?
আমরা তুলে ধরব সেদিনের প্রকৃত সত্য ঘটনা।। ঠিক কী ঘটেছিল।।
সত্য অনুসন্ধানে “বাংলা এক্সপ্রেস” টিম পৌঁছে গিয়েছিল শীতলকুচির সেই প্রত্যন্ত জোরাপাটকি গ্রামে। ১২৬ নম্বর বুথে গত ১০এপ্রিলের তাজা রক্ত এখনো শুকায়নি। বুথের মধ্যে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেনা জওয়ানের জুতো, ভোট কর্মীদের ফেলে যাওয়া কাগজপত্র। ওইদিনের ঘটনার বীভৎসতা যেন সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বুথের সামনে ফাঁকা মাঠ। মাঠ টপকে যেখানে পৌঁছালাম সেখানে শায়িত রয়েছে চার যুবকের নিথর দেহ। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ওই চার যুবকের। গ্রামবাসীরা তাদেরকে আলাদা করেনি। পাশাপাশি চারটি কবরে তাদেরকে শায়িত রাখা হয়েছে।
ক্ষোভের আগুনে টগবগ করে ফুটছে জোড়া পাটকি। কেউ সত্যি বলছে না। কোন দোষ না করেও আজ তাদেরকেই অপরাধী সাজানো হচ্ছে।
বুথের সামনে একটা মনোহারী দোকান। তপ্ত দুপুরেও এলাকার দু-চারজনের ভিড় সেখানে। ১০ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে কথা বলতেই উত্তেজিত ওরা।
এক বছরও হয়নি বড় ছেলের অকাল মৃত্যু। ছোট ছেলেই ছিল জীবনের সব। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি এফোঁর ওফোঁর করে দিয়েছে শরীর। বৃদ্ধ বাবার চোখে আগুন। প্রশ্ন দেশের গনতন্ত্র নিয়ে…….
বুথের সামনে এখনও স্মৃতিস্তম্ভে চারটে ফুলের তোড়া, ফুল শুকিয়েছে, স্মৃতির সরণী থেকে হয়ত বা এককদিন ফিকে হয়ে যাবে হামিদুল, ছামিউল, মনিরুজ্জামান ও নুর আলমেরা। ওই ছোট্ট শিশু কোন ফিরে পাবে না তার বাবাকে। বৃদ্ধ হাতড়িয়ে বেড়াবে তাঁর একরত্তি সন্তানকে। সন্তানসম্ভবা বধূর কোলের ফুটফুটে শিশু জানবেই না তার বাবাকে; শীতলকুচির রগরগে ঘা ইতিহাস হয়ে থাকবে ১২৬ নম্বর বুথের দেওয়ালে, জোরাপাটকির আনাচেকানাচে, সরকারি রিপোর্টে হয়ত আসল অপরাধীরা অধরায় থেকে যাবে।।