হাওড়া: কর্মচঞ্চল ছেলেটি সবসময় চাইত সমাজের প্রান্তিক, অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে। আর সেই সুবাদেই তাপস, পৃথ্বীশ, অরুণ, শুভঙ্করদের সাথে রাজকুমারের পরিচিতি। তাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে শীতের গভীর রাত কিমবা করোনা, আম্ফান বা লকডাউন প্রত্যেকটা সময়েই লড়াই চালিয়ে গেছেন সকলের প্রিয় ‘রাজু’। কিন্তু, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাত্র ৩৭ বছরেই থেমে গেছে কর্মচঞ্চল ছেলেটির জীবনের রথচক্র। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ শে মার্চ চিরশান্তির দেশে পাড়ি দিয়েছেন আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’-এর অন্যতম লড়াকু সদস্য রাজকুমার মন্ডল। রাজকুমারকে শ্রদ্ধা জানাতে কোনো তথাকথিত স্মরণসভা নয়, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে নিজেদের সহযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানালেন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’-এর সদস্যরা। রবিবার সকালে গ্রামীণ হাওড়ার আমতা উদং তরুণ সংঘের মাঠে আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। রক্ত সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল হাওড়া জেলা হাসপাতাল। এদিনের রক্তদান শিবিরে রক্ত দেন ৭০ জন।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, প্রায় ২৫ জন পড়ুয়া এদিন জীবনে প্রথমবারের জন্য রক্তদান করেন। সংগঠনের কর্তা তাপস পাল জানান, আমরা আমাদের সাথীকে হারিয়েছি। তার হারানোর যন্ত্রণা এখনো আমাদের প্রতিমুহূর্তে বিঁধছে। সে কাজ ভালো বাসত। তাই কাজের মধ্য দিয়েই আমাদের প্রিয় রাজু দা’কে শ্রদ্ধা জানাতে এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন। তিনি আরও বলেন, একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে করোনা আবহ ও গ্রীষ্মের দাবদাহ এসবের জাঁতাকলে বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকগুলি কার্যত রক্তশূন্য। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মুমূর্ষু রোগী ও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভেবে সহযোদ্ধার স্মৃতিতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এদিনের রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা শীর্ষ আরোহণকারী বিখ্যাত বাঙালি পর্বতারোহী শেখ সাহাবুদ্দিন। এদিন জীবনে প্রথমবারের জন্য রক্ত দিলেন পড়ুয়া সুদেষ্ণা মল্লিকের কথায়, জীবনে প্রথমবারের জন্য রক্তদান করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। মুমূর্ষু রোগীদের স্বার্থে এভাবেই সকলে এগিয়ে আসুক। এই শিবিরে রক্তদান করেন রাজকুমারের স্ত্রী সোমা মন্ডল। একদিকে যখন উদংয়ে রক্তদান শিবির চলছে তখন অন্যদিকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে এক মুমূর্ষু রোগীকে রক্তদান করলেন আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পট্টনায়ক।