রুপসী কন্যা – পার্ট ১ : এন.কে.মণ্ডল


সোমবার,১৯/০৪/২০২১
4452

আজিজের বাবা আজিজকে ছোট্টবেলাতেই রেখে মারা গিয়েছে ৷ দুই বিঘা সম্পত্তি ছাড়া তেমন কিছুই একটা নেই ৷ সাবালক অবস্থায় মা হারা হয়ে যায় আজিজ ৷ সে একজন সাধারণ গ্রামীণ ছেলে ৷ গ্রামের বাইরে প্রায় মাঠের ধারে দু বিঘা জমি জমি আছে ৷ সেই জমির এক কোণে ছোট্ট একটি কুটির আছে ৷ হ্যাঁ অবশ্য এটা কুটির ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ বাঁশ খুঁটি কঞ্চি দিয়ে কুটির ৷ বাড়ির চারিপাশে নিজের জমিতে নানান শাক সব্জী ৷ বাড়ির জন্য ৷ আজিজকে শাক সব্জি কিনতে হয় না ৷ কুটির সহ কুটিরের চারিপাশে শাক সব্জীর জমি তিন কাঠা মত হবে হয়ত ৷ আর সতেরো কাঠা জমি নানান চাষ আবাদ করে ৷ ধান, গম, সরষে ইত্যাদি ৷ কুটিরের পাশেই দশ হাত জায়গায় পুকুর আছে ৷ মাছ চাষ হয় ৷ পুকুরের পাশে বিভিন্ন প্রজাতির নানান ফুলের চাষ ৷ গাঁদা, বেলি, গোলাপ, দোপাটি, চিনিফুল, ইত্যাদি ৷ বাড়ির উঠান দুর্বা ঘাসে পরিপুর্ণ ৷ বাড়ির প্রবেশ পথ একদম দুই ফিট হবে ৷ পথের দুই ধারে গাঁদা ফুলের গাছ ৷ বাড়ির টালিতে শিম ও পুঁই লতায় ছাওয়া ৷ দুই বিঘা জমি কচাগাছ দিয়ে বেড়া দেওয়া ৷ বাইরের ছাগল মুরগি গোরু প্রবেশের কোন সুজোগ নেই ৷ বাড়িটি ছবি তোলার মত ৷ মনে ধরার মত ৷ বিকেলের দিকে মনে হয় স্বর্গ ৷ কিন্তু এই স্বর্গতেই হঠাৎ নেমে এলো দু:খের ছাঁয়া ৷ হঠাৎ করে আজিজের মা স্টোক হয়ে মারা গেলেন ৷ এর আগে থেকে নানান রোগে পরিপূর্ণ ছিল ৷ রক্তচাপ বেশি হত মাঝে মাঝে ৷ তেমন একটা আয় হয় না ৷ গ্রামে তেমন একটা কাজ হয় না, তাই আজিজ রোজগার করবে ৷ পড়াশোনা তেমন একটা করতে পারেনি সে ৷ সেই গ্রামীন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই বাবা ঈশ্বরের দেশে পাড়ি জমায় ৷ বাবার অনুপস্থিতিতেই আর পড়াশোনার সুযোগ করতে পারে নি ৷ সংসারের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ে , সেই ছোট্টবেলা থেকেই ৷ আজ প্রায় কুড়ি বছর হবে ৷ মায়ের মৃত্যুতে আজিজ একদম ভেঙ্গে পড়েছে ৷ তাঁর প্রধান ভরসা আর কাকে করবে ৷ কে তাঁকে খোকা বলে ডাকবে ৷ কে তাঁকে পরামর্শ দেবে ৷ সে যে একদম একা হয়ে গেল ৷ ধীরে ধীরে সংসারে হাল সবে ধরছে ৷ মায়ের মৃত্যুর আজ দুইমাস হচ্ছে ৷ নিজেকেই সবকিছু জোগাতে হচ্ছে ৷ রান্না থেকে মাঠের কাজ ৷ কিন্তু সে কি করবে ৷ তাঁর কিছুই করার নেই ৷ গরীব মানুষ ৷ দিন এনে দিন খাঁয় ৷

একদিন মাঠ থেকে এসে দুপুর গড়িয়ে রান্না করতে বসেছে ৷ চুলায় রান্না করছে ৷ দুইমাস থেকে তাঁকেই রান্না ও যাবতীয় সংসারের কাজ করতে হয় ৷ তাঁকে দুমুঠো ভাত রান্না করে দেবার কেউ নেই ৷ তাতে মাঠের এক প্রান্তে বাড়ি ৷ সেখানে তেমন একটা কেউ যায় না, মাঠের কৃষক ছাড়া ৷ আজিজ রান্না বসিয়ে, সব্জী কাটছে, এমন সময় বক্সিগঞ্জের নামকরা ঘটক রহিম সেখ গলা খ্যাকারি দিতে দিতে প্রবেশ করছে ৷
রহিম : কইরে শালা আছিস নাকি ৷ আসলে আজিজ সম্পর্কে রহিমের চেনাশোনা দাদু হচ্ছে ৷ আর ঘটকদের রসিকতা করতে হয় ৷ তাঁদের মুখে রস না থাকলে বিয়ে টিয়ে ভালো লাগাতে পারবে কি করে ৷ গোমড়া মুখ নিয়ে কি আর ঘটকতালী হয় ৷ ঘটকতালী করে রহিম সেখ কিছু টাকা কড়ি নেই অবশ্য ৷ আর তাছাড়া বুড়ো বয়সে এই কাজ ছাড়া কি আর করবে ৷ ধর্মের কাজ করে ৷ নানান মানুষের সঙ্গে উঠাবসা করতে করতেই চলে যাচ্ছে আর কি ৷
আজিজ : আরে দাদো যে, তা কি খবর ৷
রহিম : এই আসলুম, তোর কাছে ৷
আজিজ : এই নাও মাদুরখানিতেই বসো ৷ রহিম সেখ মাদুরেই ধপাস করে বসে পড়েই, ডানদিকে গাঁদা ফুলের গাছের গোড়াতেই পানের পিক ফেলল ৷ গাছের গোঁড়াটি পানের পিকে লাল হয়ে গেল ৷
রহিম : তা বলছিলুম কি যে, আর কতদিন এই হাত পুড়ে রান্না করবি ৷ বিয়ে থা কর ৷
আজিজ : দাদু তুমি কি বলো, আমার মত চাষা ছেলেকে কে বিয়ে করবে শুনি ৷ আর তাছাড়া আমার চাল চুলো কিছুই নেই, আমাকে কোন মেয়ের বাপ বিয়ে দেবে শুনি ৷
রহিম : কে দেবেনা, কে করবে না ওসব আমার উপর ছেড়ে দে ৷ আমাকে পাড়ার আকবর মোল্লা বলল, যে তোর একটা গতিবিধি করে দিই ৷
আজিজ : ওহ আকবর চাচা বলেছে ৷
রহিম : হ্যাঁ, ওর সঙ্গে গতকাল হাটে দেখা হতেই বলেছিল ৷ তা তুই বিয়ে করবি কি বল না ৷ একবার হ্যাঁ বলে দ্যাখ না ৷
আজিজ : দেখো দাদো, আমার সবকিছু দেখে শুনে কেউ যদি বিয়ে করতে চায় তবে করব, তা নাহলে করব না ৷ আর আমি তোমাকে কোন টাকা পয়সা দিতে পারব না ৷ তুমি তো আমার অবস্থা ভালোই জানো ৷
রহিম : সে তোকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না ৷ তোর বিয়ে বিনা পয়সাতেই লাগাব ৷
আজিজ : তাহলে দ্যাখো, আমার মতো মেয়ে চাই কিন্তু ৷ সাংসারিক ৷ আমি যেমন পরাণ চাষি ৷ আমার দু:খে দু:খি হতে পারে ৷ এখনকার মতো ফ্যাশন নেব না ৷
রহিম : ঠিক আছে, তোর মতোই এনে দেব ৷ ইনশাআল্লাহ ৷ তাহলে আমি উঠলুম রে ৷
আজিজ : আচ্ছা, আসো ৷

আজিজ ছেলে হিসাবে খুবই ভালো ৷ গ্রামে ভালো রিপোর্ট আছে ৷ সৎ ছেলে ৷ কোন ধরণের মিথ্যাচার, চুরি, ধান্দাবাঁজ এসব একদম পছন্দ করে না ৷ কোন স্ট্যাইল নেই ৷ ফ্যাশন নেই ৷ বর্তমানের ছেলে মেয়েদের মতো ছেঁড়া ফাটা কাটা পোষাক পরে না ৷ মোটেই গর্ব নেই ৷ কোন মেয়েদের পিছনে ঘোরে না ৷ আর এমনিতেই কোন মেয়ে তাঁর দিকে তাঁকায় না ৷ তাঁকিয়েই বা কি করবে ৷ কোন স্ট্যাইল নেই, ফ্যাশন নেই , পোষাক পরিচ্ছদ ভালো পরে না ৷ চুলে রঙ অথবা কোন স্ট্যাইলের মর্ডাণ কার্ট নেই ৷ সেই আগেকার গ্রামীন গেঁওদের মতো ঢোলা ঢোলা জামা লুঙ্গি প্যাণ্ট পরে ৷ চুল আঁচড়ানোর কোন ক্যাপাসিটি নেই ৷ একদম আনকালচার্ড পারশন ৷ বর্তমান কোন ছেলেরা এই রকম হলে, কেউ কি বিয়ে থা করবে ৷ কখনোই করতে চাইবে ৷ দরকার হলে জলে ঝাপ দিয়ে মরবে তবুও ভালো ৷ তবে মেয়েরা একদিক থেকে শ্রদ্ধা করে তাঁর ভালো মানুষকতা থেকে ৷ আজিজকে ছোট বড়ো বুড়ো সবাইকে ভালোবাসে , সবার কথা শোনে ৷ উপকার করার চেষ্টা করে ৷ কোন প্রকারের কোন অহংকার নেই তাঁর ৷ সে নিজেকে ছোট আর একা মনে করে ৷ আবার অনেক গ্রামের মানুষ আছে তাঁরা নানান উপহাস করে ৷ কয়েকজন গ্রামের অবস্থাশালী লোক আছে , তিনারা উপহাস করে ৷ দেখতে তেমন একটা পারে না ৷ বদনামও করে ৷ গ্রামের সামাজিক কর্তা ও গন্যমান্য ব্যাক্তি রফিক মল্লিক ৷ এরা পাক্কা শয়তান ৷ শয়তান জেনেও তাঁকে গ্রামের লোকেরা সন্মান করে ৷ গ্রামের যেকোন বড় পদে তাঁকেই দেয় ৷ গ্রামের রাজনৈতিক নেতাও বটে ৷ আজিজের বাবা মরার পিছনে রফিক মল্লিকেরই হাত ছিল বলে মনে করে আজিজের মা ৷ কারণ আজিজের মা জানত যে, গ্রামের ভালো মন্দ নিয়ে নানান সময় কথা কাটাকাটি হত ৷ রফিক লোকটা তেমন একটা ভালো নয় ৷ সে নিজের স্বার্থের জন্য কি না করতে পারে ৷ আজিজের বাবা আসাদুল মাঝ মাঠে খুণ হয়ে পড়েছিল ৷ কেউ তাঁকে খুণ করতে না দেখায় খুণের রহস্য খুঁজে পায় নি ৷ কয়েকবার থানায় তদন্তের জন্য ছুটে গিয়েছিল আজিজের মা, তবুও কোন কিনারা করে নি স্থানীয় পুলিশ ৷ আর কার সঙ্গেই বা লড়বে ৷ লড়েই কি পারবে ৷ টাকা পয়সার সঙ্গে পেরে উঠবে ৷ সেজন্যই জোর দেয় নি ৷ আসাদুল লোকটা ন্যায় পরায়ণ ছিল ৷ নিস্বার্থভাবে মানুষের জন্য লড়াই করতে চাইত ৷ আর তাঁরই ছেলে ছেলে আজিজ ৷

কয়েকদিন পরে বিকেলের দিকে মাঠের ধারে আজিজদের বাড়ির কাছে বল খেলার মাঠ আছে ৷ সেখানে ছেলেরা বিকেলে আড্ডা দেয় ৷ গ্রামের প্রধান পথের মধ্যে একটি ৷ মেয়েরা আসে ৷ খেলে ৷ যুবতী মেয়েরা বেড়াতে আসে ৷ ঘোরাফেরা করে ৷ ছেলেরা তাঁকায় ৷ মেয়েরা তাঁকায় ৷ কথা হয় ৷ গল্পও করে ৷ এখন যুগের হাওয়া আলাদা ৷ গ্রামও শহরের মতো ফ্যাশন মর্ডান হয়ে গেছে ৷ অলিতে গলিতে শোনা যায় মাঝে মধ্যে , এর বৌ ধরা পড়েছে ৷ ওর মেয়ে কোন ছড়ার সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে ৷ সন্ধ্যাবেলা হলেই চায়ের দোকানে নানান আড্ডা হয় ৷ পরচর্চা পরনিন্দা ৷ রাজনৈতিক গল্প ৷ চাষ আবাদের গল্প ৷ এক কাপ চা খায়, পাঁচ ঘন্টা গুলতানি মারে ৷ সেসবদিক থেলে সম্পুর্ন আলাদা আজিজ ছেলেটা ৷ বসে আছে বল খেলা ফিল্ডে, এমন সময় রহিম ঘটক ডাক দেয় ৷ রহিমের ডাকে আজিজ উঠে আসে ৷ রাস্তাতেই সাইকেলে দাঁড়িয়েছিল রহিম সেখ ৷ আজিজ রহিমের কাছে এসেই বলল,
আজিজ : বলো দাদো ৷
রহিম : তাহলে আগামীকাল মেয়ে দেখতে চল ৷
আজিজ : কোথায় ৷
রহিম : ভবানীপুরে ৷
আজিজ : ওহ ৷ তো দাদো আমি বলছিলাম কি ন, আমাকে আগে দেখে যাক ৷ আমার বাড়ি ঘর কেমন ৷ আমার সঙ্গে বিয়ে দেবে কি না ৷
রহিম : ওসব কিছু দেখবে না ওরা ৷ দেখার মত কেউ নেই ওদের ৷ আমাকেই ওরা বিশ্বাস করে ৷ আমি যা করব তাই হবে ৷ আর মেয়ে একদ্ম রাজপরি ৷ খুব ভালো ৷
আজিজ : অন্তত মেয়ের বাবা দেখে গেলে ভালো হত না ৷
রহিম : মেয়ের কেউ নেই, একমাত্র দাদি ছাড়া ৷
আজিজ : মা বাপ মরা মেয়ে তোর দু:খ বুঝবে বুঝলি ৷ মেয়ে খুব ভালো ৷ কবে যাবি বল, আমাকে দিন দিতে তো হবে ৷
আজিজ : তোমার দিনেই দিন ৷ আমি আর কি বলব ৷
রহিম : তাহলে আগামীকালকেই কথা দি, কি বলিস ৷ কিছু টাকা পয়সা নিবি নাকি ৷
আজিজ : আমি খেতে পায় না, টাকা পয়সা চাইব ৷ মেয়েটা দেবে কি সন্দেহ ৷ আর আমি কিছুই নেব ৷ আমার মা এসব একদম বিরোধী ছিলেন ৷ আর আল্লাহ পণ নেওয়াকে হারাম করেছেন ৷ ওসব কিছু নেব না ৷ কিছুই চাই না ৷
রহিম : ঠিক আছে, আমি রাত্রে ফোন করে বলে দিব ৷ তুই বিকেলের দিকে রেডি হয়ে থাকিস কিন্তু ৷ রহিম চলে যেতেই, পাশ দিয়ে একদল মেয়েরা যাচ্ছিলো ৷ ওদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, কি ভাইয়া বিয়ে লাগছে নাকি ৷ হ্যাঁ ৷ তাহলে তো খাওয়াতে হবে কিন্তু ৷ সে হবে, যদি উপরওয়ালা করাই হবে ৷ মেয়েরা আজিজকে ছড়ে চলে যেতে যেতে একজন সুন্দরী মেয়ে বলে উঠলো, উহু ওই গেঁয়ো কে কোন মেয়ে এখনকার বিয়ে করবে শুনি ৷ কোন শক আল্লাদ নেই ৷ ছেলে বলেই মনে হয় না ৷ ভেড়ুয়া ৷ অহংকার করেই বলল ৷ কয়েকজন হাসিতে ফেটে পড়লো৷ দুজন হাসলো না ৷ আজিজ কথাগুলি শুনতে পেয়েও কোন জবাব দিলো না ৷ দু:খ হল ৷ বুকের ভিতরে চিনচিন করে ব্যাথা উঠতে লাগলো ৷ চোখে জল আসা আর কি ৷ মনে মনে বলল, হায় আল্লাহ গরীব হওয়া কি দোষ ৷ আমি লেখাপড়া করতে পারি নি ৷ আমার জামা কাপড় ভালো কিনতে পারি না৷ আমি কোন স্ট্যাইল করতে জানি না বলে আমায় কত লোকে কত কথা বলে ৷ মনে মনে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে ৷ যেতে যেতে রাস্তার ধারে চরম হপঁচট খেলো ৷ ব্যাপক যন্ত্রনা হতে শুরু করলো সঙ্গে সঙ্গে ৷ কে দুপুরে গোরু বেঁধে চড়িয়েছিল ৷ খুঁটি পোতাই ছিল ৷ পায়ে হাত দিয়ে চেপে বসে পড়লো ৷ আল্লাহকে বলতে লাগলো, হে আল্লাহ তুমিও আমার সহায় নও ৷ যারা অসৎ পথে চলে ৷ তাঁদের কোন ক্ষতি হয় না, দুর্নাম হয় না শুধু আমারই হয় ৷ তুমিই পারবে আমাকে কষ্ট দিতে ৷ দাও যত পারো, তোমার যত কষ্ট আছে আমাকেই দাও, আমি সহ্য করব ৷ তবুও মুখ ফুটে কাউকে বলব না ৷

  ||  দ্বিতীয় পরিচ্ছদ   ||

বিকেলবেলায় আজিজ জামা প্যাণ্ট পরে বাড়ির উঠোনে দুর্বা ঘাসের উওরে ছোট্ট মাচায় বসে আছে ৷ পাশে রেডিও চলছে ৷ গান হচ্ছে ৷ আজিজের পল্লীগিতী গান পছন্দ ৷ সেটাই শুনছে ৷ মিডিয়াম ভলিয়মে সাউণ্ড দেওয়া আছে ৷ আজ আজিজকে একদম সুপার লাগছে ৷ শরিরের রঙ কালো হলেও বেশ মানাচ্ছে আজ ৷ শ্যামাবর্ণা ৷ মিডিয়াম পাতলা মোটা ৷ লেডিজ সাইকেলে পাশেই আছে ৷ সকালে সাইকেলটি তেল জল দিয়ে চকচকে করে রেখেছে ৷ প্যাণ্ট শার্ট দুটি গত দু বছর আগে ঈদে কিনেছিল ৷ সেটাই পরে যাচ্ছে ৷ রহিম এসে ডাক দিতেই রেডিওতি ঘরে রেখে ঘরে তালা বন্ধ করে চলল শ্রীপুরের উদ্দেশ্যে ৷ হ্যাঁ শ্রীপুরেই মেয়ে দেখতে যাচ্ছে ৷ রহিম সেখ আগে আগে যাচ্ছে ৷ আজিজ পিছনে পিছনে যাচ্ছে ৷ দুইখানা গ্রাম ছেরে অবশেষে পৌঁছালো শ্রীপুরে মেয়েপক্ষের বাড়িতে ৷ বারিতে তেমন একটা কেউ নেই ৷ দুজন বয়স্ক ব্যক্তি ও একজন মধ্যবয়স্ক লোক ৷ সবই পাড়ার ৷ আগে থেকেই থাকতে বলেছিল মেয়ের দিদিমা ৷ ওরাও গরীব, তবে কিছু দেওয়ার মত সামার্থ্য আছে ৷ রহিম সেখ ও আজিজ টিউবয়েলে হাত মুখ ধুয়ে খাটের উপর উঠে বসলো ৷ কিছুক্ষন পরে এক এক করে চা জল আসলো ৷ কিছুক্ষন পরে মিষ্টি, পরোটা, সব্জী, মাংস ইত্যাদি আসলো ৷ এসব খাওয়ার পরে ফল আসলো ৷ খাওয়া হল ৷ লোকজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে মাঝে মধ্যে ৷ অবশ্য ঘটক মশাই বলছে ৷ আজিজ বসেই আছে ৷ ঘটক মশাই বলল, তাহলে মেয়েকে নিয়ে আসুন ৷ দেখা যাক নাকি, কি বলছেন ৷ মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিটি আরেকটি ঘরে চলে গেল মেয়েকে নিয়ে আসতে ৷ কয়েক মিনিট পরে মেয়েটি এসে চেয়ারে বলসো ৷ খাটের সামনে ৷ ঘটক ও আজিজের সামনে ৷ মেয়েটি আজিজকে দেখে নি, মুখ ছাপড়িয়ে আছে ৷ আজিজ দেখতে ভালো পাচ্ছে না মুখটা ৷ ঘটক মুখটা উঁচু করতে বলাতে মুখটা উঁচু করতেই আজিজ চিনতে পারলো ৷ মেয়েটিও দেখতে পেলো আজিজকে ৷ আজিজের চেনা আছে, একদিন দেখা হয়েছিল ৷

        প্রায় আজ থেকে তিন চার মাস আগের ঘটনা ৷ আজিজ মাঠ থেকে দুপুর বেলাতে বাড়ির দিকে ফিরছে ৷ মেয়েটি ( আলো) স্কুল থেকে বাড়ি যাচ্ছিলো ৷ মাঠের রাস্তা ৷ কেউ নেই ৷ সাইকেল নিয়ে যেতে অসুবিধে হচ্ছিলো ৷ মাঠির রাস্তা ,  এখন না হয় লাল মাটির রাস্তা হল ৷ মেয়েটি স্কুল থেকে বাড়ি যাচ্ছিল ৷ তখন মাঝ রাস্তা ৷ বৃষ্টি হচ্ছিল হঠাৎ করে ৷ ব্যাপক রাস্তা ৷ সাইকেল গড়ছিল না ৷ কাদায় সাইকেল লেপ্টে গিয়েছিল ৷ বইখাতা ভিজে জব্জবে হয়ে গিয়েছিল ৷ সাইকেল নিয়ে কাঁদছিলো এক প্রকার ৷ আজিজ ব্যাপারটি বুঝতে পেরে মেয়েটিকে বলেছিল ৷ আমি তোমায় সাহায্য করছি বোন তুমি বই খাতা সামলাও ৷ মেয়েটি ( আলো)  গাছের তলায় দাঁড়ালো ৷ আজিজ বসে বসে সাইকেলের সমস্ত কাঁদা ছাড়িয়ে মাথায় করে নিয়ে যাবে বলে সিন্ধান্ত নিয়েছে ৷ আফ কিলোমিটার পরেই আবার লাল রাস্তা পাবে ৷ ওখানে সাইকেলে যাওয়া যাবে ৷ আজিজের পাশাপাশি আলো যাচ্ছিলো ৷ তখন আজিজের মাথায় সাইকেল ছিল ৷ ওই সময় আজিজ বলে উঠলো, 

আজিজ : বোন একটা কথা বলতে চাই কিছু মনে করবে না তো ৷
মেয়েটি ( আলো) : না বলেন ৷ কোন সমস্যা নেই ৷ আলো মনে মনে ভাবছে, কি বলবে কে জানে ৷ তাঁর কোন ক্ষতি করবে নাতো সে ৷ হঠাঠ করেই আলোর ভঁঁয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো ৷ বৃষ্টির মধ্যে সমস্ত শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো ৷
আজিজ : বোন যদি দয়া করে আমার সামনে এবং পাশে হাটবেন না, আমার পিছনে হাটলে ভালো হয় ৷ আমি খুব উপকৃত হয় ৷
আলো : কারণ জানতে পারি, যদি কিছু না মনে করেন ৷
আজিজ : না মানে, দেখুন, আমি তো পুরুষ মানুষ ৷ আপনি পাশে বা সামনে থাকেন তাহলে অনেক কিছু মনে আসতে পারে ৷ ফাঁকা মাঠ ৷ আমি চাই না যে, আমার মনে কোন শয়তান বসবাস করুক ৷
আলো : ঠিক আছে ৷

আলো আজিজের পিছন পিছন হাটতে লাগলো ৷ মনে মনে ভাবলো পৃথিবীতে এখনো সৎ যুবক আছে ৷ নির্লোভ যুবক আছে ৷ মনে মনে হাসলো ৷ আফ কিলোমিটার মাথায় করে সাইকেল নিয়ে গিয়ে লাল রাস্তায় রেখে বলল,

আজিজ : যাও বোন ৷ এবার যেতে পারবে তো ৷
আলো : হ্যাঁ ৷
আজিজ : যাও তাহলে, কেমন ৷
আজিজ চলে আসছিলো ৷ এমন সময় আলো পিছন থেকে ডাকলো ৷
আলো : এই যে শুনুন ৷
আজিজ আলোর দিকে মুখ ফিরেই বলল, বলুন ৷ আপনাকে ধন্যবাদ ৷ আপনার মত মানুষ পাওয়া খুব মুস্কিল এখনকার দিনে ৷ এমন নির্জন রাস্তায় আমার যেকোন কিছু হতে পারত ৷ বা অনেকে করতে পারত এমন অবস্থায় পেলে ৷ দয়াকরে আপনার নামটি যদি বলতেন ৷
আমার নাম, হতভাগা ৷ কথাটি দু:খের সঙ্গেই বলেছিল বলে মনে হয়েছিল আলোর ৷ এরপর দুজনে দুজনের রাস্তায় চলে গেল ৷ যেতে যেতে অনেকবার আলো তাঁকিয়েছিল ছেলেটার দিকে, কিন্তু আজিজ ভুলেও একবারও তাঁকায় নি আলোর দিকে ৷

ঘটক নাম ধাম কিছু প্রশ্ন করল ৷ কিছু কিছু উত্তর দিলো ৷ ঘটক মশাই আজিজকে কিছু বলতে বলল, কিন্তু সে কিছুই বলল না ৷ মেয়ে তো তাঁর পছন্দ ৷ আর কেনই বা পছন্দ হবে না ৷ দেখতে তো মন্দ না ৷ পাতলা শরীর ৷ মিডিয়ম উচ্চতা ৷ শরীরের রঙ হলদে ফর্সা ৷ হলদে ফর্সা রঙ কখনো নষ্ট হয় না ৷ পাতলা ফাইন চেহারা ৷ দেখতে রাজকন্যার মত ৷ অপরুপ দেখতে ৷ টিকালো নাক ৷ মুখ চোখ কতই না সুন্দর ৷ দশ গ্রাম খুঁজলেও এমন রুপসী মেয়ে পাওয়া যাবে না ৷ মেয়ে দেখার পর মেয়ে নিজের কক্ষে চলে যায় ৷ কিছুক্ষন পরে ঘটক একলা গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করে, যে ছেলে পছন্দ করে ৷ মেয়ে এক বাক্যের মতো ঘার নাড়িয়ে জবাব দেয় তাঁর পছন্দ ৷ ঘটক আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ৷ সেদিনই রাত্রে মৌলভি দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে নিয়ে আসে ৷ একটা টাটাসুমো ভাড়াও করে দেয় ঘটক নিজের পয়সা দিয়ে ৷ কোন দাবি দাওয়া নেয় নি আজিজ, এমন কি একটা হাতের সুতাও নেয় নি ৷

আজিজ বেশিদিন শশুর বাড়িতে তেমন একটা কাটায় নি ৷ গরিব মানুষ ৷ সে একবেলা না খাটলে খেতে পাবে না ৷ তাঁর জীবন যাত্রা একদমই খারাপ ৷ অন্য মানুষের মতো কোন অসৎ কাজকে প্রশ্রয় দেয় না ৷ ঘরে নতুন বৌ ৷ বড় টেনশন ৷ এর আগে মা ছিল, কোনকিছু আবদার অথবা দাবি করেনি তাঁকে ৷ কিন্তু গিন্নী তো এসব শুনবে না ৷ তাতে রুপে একদম রাজকন্যা ৷ কথাও বেশ জানে মনে হয় ৷ চালাক চতুর মেয়ে ৷ প্রতিদিন এখন এপাড়ার ওপারার মানুষ আসছেই, নতুন বৌ দেখতে ৷ বিয়ের পরেরদিন তো সারা গ্রাম থেকে আলোকে দেখতে এসেছিল ৷ পাড়ার ছেলে মেয়েরা এসেছিল ৷ অনেকে দেখে আশ্চর্য্য ৷ এইরকম কালো পিচের মতো ছেলের এমন রাজ চেহারা বৌ হয় ৷ অনেকের হিংসে হিংসে কথাও বলছিল , অবশ্য আজিজের বুঝতে অসুবিধে হয় না ৷ দু:খ বুঝতে বুঝতে তাঁর জীবন ৷ এসব কথা ভাবছে আজিজ ৷ পুকুরের ধারে আরেকটি মাচায় বসে বসে ৷ আবার অন্যদিকে চিন্তা করছে ৷ চিন্তা করছে সে সংসার কিভাবে চালাবে ৷ হাতে একদম কোন টাকা পয়সা নেই যা কয়েকটা হাজার ছিল, তাও বিয়ের ঝক্কিতে ফুরিয়ে গেছে ৷ বিছানার তলায়, চৌকির বাপাশে তিনশোটা টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই ৷ গিন্নী কিছু চাইলে বা সংসারে কিছু লাগলে কি করবে ৷ মা থাকলে এসব কিছুই লাগত না ৷ গতকাল রহিম ঘটক এসেছিল, তাঁর সন্মাননা করতে গিয়ে পঁচিশতাকা ফুরিয়ে গেছে ৷ অবশ্য সে টাকাটা আলাদা ছিল ৷ ঘরে চাউল, ডাল, সব্জীর অভাব নেই ৷ কোনরকমে চলে যাবে হয়ত ৷ সে বড় টেনশনে পড়ে গেল ৷ তখন রেডিওতে পল্লিগীতি গান চলছে ৷ স্ত্রীর সঙ্গে তেমন একটা কথা হয়নি ৷ আজিজের লজ্জা করে ৷ তাঁর সামনে কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে ৷ অভাব না হয় আজ আছে, গতকাল ভালো হয়ে যেতে পারে ৷ কিন্তু প্যাঁচার মতো মুখ আর কালো কুচকুচে চেহারা নিয়ে দাঁড়ানো যায় না ৷ জানি না সে আমাকে পছন্দ করেছে কি না ৷ মেনে নিতে পেরেছে কি না ৷ এসব নিয়েই গভীরভাবে আজিজ ভাবছে ৷ কিন্তু ভাবনার কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না ৷ আবার ভাবছে, শালা বিয়ে করেই ভুল করেছি ৷ এখন নানান সমস্যায় ভুগছি ৷ এসবই ভাবছে, এমন সময় আলো গলা খ্যাকারি দিতে দিতে আজিজের কাছে পৌঁছালো ৷ আজিজ নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে বাস্তবে আসলো, আলোর গলার আওয়াজ দিয়ে ৷ আলো হাসি মুখেই বলে উঠলো,

আলো : কি ব্যাপার বাবু, একা একা কি চিন্তা হচ্ছে ৷
আজিজ : না মানে, এই গান শুনছি আর কি ৷
আলো : আপনি গতানও শুনেন নাকি ৷
আজিজ : না মানে, একটু আধটু এই আর কি ৷
আলো : তা বেশ ভালো ৷

এই বলেই আজিজের পাশে বসলো ৷ রেডিওটি হাতে নিয়ে রোমান্টিক গান দিলো ৷ সাউণ্ড কমিয়ে দিয়ে পাশে রেখে দিয়ে বলল, তা কি চিন্তা হচ্ছিলো শুনি, একা একা বসে ৷
না তেমন কিছু না ৷ দম নিয়ে কথাটি বলল আজিজ ৷ ঠিক আছে বেশি কিছু ভাবতে হবে না, তা নাহলে দার্শনিক হয়ে যাবে ৷ চলুন তো , উঠুন উঠুন ৷ কোথায় যাব ৷ চলুন তো, তারপর বলছি ৷ আজিজ রেডিওটি হাতে নিয়ে আসতেছিল , এমন সময় আলো বলল থাক৷ অখানেই রাখুন ৷ আলো নিজে নিয়ে রেডিওটি নিয়ে সাউণ্ড বাড়িয়ে দিল ৷ আজিজ অবাক চোখে দেখছে গীন্নির কাণ্ড কারখানা ৷ আজিজের একহাত ধরে ঘাড়ে মাথা রেখে হাটছে আলো ৷ আজিজের মুখে কোন কথা নেই ৷ বারির পিছন দিকে পেঁপে গাছে অনেক পেঁপে ঝুলছে ৷ তা প্রায় পাঁচ সাতটা গাছ হবে ৷ আলো নিজে হাতে মই বা সিঁড়ি নিয়ে এসে বলল, নিন উঠে পড়ুন কুটিরে টালিতে ৷ পুঁই কাটুন, শিম পাড়ুন ৷ পুঁই শাক ও শিম প্রচুর আছে ৷ আজিজের মুখে কোন কথা নেই ৷ পাঁচ কেজি মত করে পুঁই শাক, শিম, পেঁপে কেটে নিয়ে নামলো ৷ তখনো আজিজের মাথায় কোন কিছু আসছে না ৷ এতো সব্জী নিয়ে কি করবে ৷ সে নির্বাকের মতো দায়িত্ব পালন করছে ৷ বাড়ির উঠানে লাউ, কুমড়ো, গোটা দশেক শশা , কেজি দুয়েক মতো ঢেঁড়স , কেজি দুয়েক মতো বেগুন , আফ কাঁদি মত কাঁচকলা, দুই তিন কেজি মতো পটল, এক দেড় কেজি কাকরুল ৷ পালং শাক নিয়ে এক জায়গায় পালা দিলো ৷ এসব আজিজের বাড়িতেই হয় ৷ অল্প অল্প করে ৷ আলাদা আলাদা ব্যাগ বস্তা পুরে সাইকেলে পাঠিয়ে দিলো হাটে বিক্রয় করতে ৷ গ্রাম ছাড়িয়ে একটু আধা শহরের হাটে ৷

আলো জামাই ( বর) কে হাটে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে লাউ কাটতে বসলো। কচি লাউয়ের মুড়ো ঘন্ট। মাছের মাথা দিয়ে কচি লাউ দিয়ে রান্না বেশ সুস্বাদু সব্জী। জীবে জল আসার মত সব্জী। পাশে রেডিওতে রোমান্টিক গান বাঁজছে । এমন সময় দুই তিনজন যুবতী মেয়ে এসে বসলো। বসে বসেই একজন মেয়ে বলে উঠলো, ও কালু ভাইয়ের বৌ তোমার নাম কি গো। আলো নিজের নাম বলল। মেয়েটি ভাবি বলে কথা বলতে পারত। বড় ভাবি বলতে পারত। কিন্তু সে বলেনি। খোঁচা দিয়েই কথা বলেছে । আজিজের নাম কালু নয়। কেউ কালু বলেও ডাকে না। মেয়েটির নাম সাবিনা। মেয়েটি আবার জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ভাবি তুমি কালু ভাইকে কি দেখে বিয়ে করলে। ভাই তো কালো কুচকুচে । কোন স্ট্যাইল নেই ফ্যাশন নেই। আলো এবার ছোট্ট জবাবে বলল, আমার কালো সাদা কোন ঘ্যাম নেই ননদিনী। আজ আমার রুপ আছে কাল না থাকতেও পারে, তাই আমি বেশি ভাবি না। আর তাছাড়া আমার বর কালো হলেও সে ছাগল নয় মানুষ । মানুষ মানুষ। মানুষের আবার ছোট বড় সাদা কালো কি। মনের মিল হলেই হল। তোমরা মোটামুটি আমায় তো চেনো, স্কুলে পড়েছি। আমার পিছনে কি কম ছেলে লেগেছে। সাহেব সাহেব ছেলে আমার পিছনে লাইন দিয়েছে। তাঁদের কারণ ছিল, আমার রুপের উপর। যৌবনের উপর । আমার সেক্সের উপর, কিন্তু আমি তাদের পাত্তা দিই নি। আর কে কতটা ভালো আমি চিনি। এখনকার ছেলেদের স্ট্যাইল ফ্যাশন থাকতে পারে। অনেক ছেলেরা রুপের জন্য ঘুরতে পারে। কিন্তু আমার বর সেদিক থেকে জিরো বটে। কিন্তু কোন ছেলের মত ধোকাবাঁজ নয়। একটা বড় মন আছে। সাবিনা বুঝতে পেরেছে যে, ছ্যাঁকাটা তাকেই দিচ্ছে। তাই তেমন কিছু বলল না। সকলে মিলে নানান গল্প গুজব করে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরলো। আলোর রান্না শেষ হয়ে গেছে ৷ ঘরের ভিতরে ছোট্ট আয়নায় সামনে নিজেকে সাঁজাচ্ছে ৷ হালকা হলুদে শাড়ি ৷ হলুদ ব্লাউজ ৷ হলুদে চুড়ি ৷ হলুদে লিপ্সটিক ৷ একেবারে হলুদে হলুদ ৷ খোঁপায় বাড়ির হলুদ গাঁদা ফুল ৷ কানের নীচে হলুদ ছোট্ট গাঁদা ফুল দিয়েছে ৷ এখন দেখতে রুপনগরের রুপের দেবী বললেও হয়ত ভুল হবে ৷ এতই রুপ যে বর্ণনা দেওয়া খুবই মুস্কিল জনক ৷ ছেলেরা এমনিতেই পাগল আলোর জন্য ৷ স্কুলে আলোর জন্য কত ছেলে নির্জনে বসে খেলা করেছে একা একা ৷ কত ছেলে আলোর রুপে পাগল হয়ে গেছে ৷ কত প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেপুলে অপেক্ষায় আছে পাওয়ার আশায় ৷ আর সেই রমণী কিনা এক দরিদ্র কালো কুচকুচে এক ধরণের যুগ চাষা ছেলেরই বৌ , এটা মানতে অনেকেরই অসুবিধে হচ্ছে ৷ আলো নিজেকে বারবার আয়নার দিকে দেখছে, কেমন হয়েছে ৷ কোথাও কি ভুল হচ্ছে না তো ৷ না হচ্ছে না ৷ আলো নিজেকে সাঁজানোর পরে, ঘরের প্রবেশের মুখে দেওয়ালের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে মনের সুখে রেডিওতে রোমান্টিক গান শুনছে ৷ মনে মনে গুন গুন করেও গান করছে ৷ এখন তাঁর মনে আনন্দের ফোঁয়ারা ছুটছে ৷ কিন্তু কেন ৷ কিসের জন্য , এটি একটি প্রশ্ন বটে ৷ পাঠক গন নিশ্চয় জানেন ৷ এমন সময় আজিজ বাড়িতে প্রবেশ করছে ৷ আলো আনন্দের সঙ্গে ছুটে গিয়ে সাইকেন ধরলো ৷ আজিজ এক এক করে ব্যাগ বস্তা নামিয়ে নিয়ে পাশের মাচায় রাখলো ৷ সাইকেলটা নিয়ে গিয়ে রান্না ঘরে রেখে আসলো ৷ আলো তাড়াতাড়ি করে সরবত করে রেডি করে দিল ৷ হাতে সরবতের গ্লাস ধরিয়ে দিতেই আজিজের চোখ থেকেই একবিন্দু একবিন্দু করে জল ঝরছে ৷ আজিজের হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে চখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে আলোর হলুদ সুন্দর শাড়ির আঁচল দিয়ে ৷ আজিজের সমস্ত শরীরে ধুলা বালি লেগে আছে তা জেনেও আজিজের ঘারে মাথা রেখে বলল, তোমার দু:খ কিসের শুনি ৷ তোমার কথাটি আজ প্রথম বলল ৷ তোমার দু:খ মানেই আমার দু:খ ৷ আমি অনেক কিছুই বুঝতে পারি ৷ সব মেয়ে সমান নয় ৷ একটু বাদেই আজিজের শরীরের জামার বোতাম একটা একটা খুলে দিয়ে আলগা করে দিলো ৷ আলো দেখলো শ্যামাবর্ণা শরীর ৷ বুকে প্রচুর মাঝারি লোমে পরিপূর্ণ ৷ হঠাৎ করেই একটা কিস করে ফেলল আলো আজিজের বুকে ৷ কিস করেই ঘরে এক দৌড়ে চলে গেল ৷ কিছুক্ষন বাইরে বসে থাকার পর ঘরে গিয়ে টাকাগুলি ও একটি সুন্দর হালকা গুলাবি শাড়ি হাতে দিলো ৷

          ||  তৃতীয় পরিচ্ছদ  ||

আলো সেই দুপুরে খেয়েছে ৷ একসঙ্গে খাবে ৷ লাউয়ের মুড়োঘণ্টো, পুকুরের চারা মাছ ভাজা , ডাল ও ভাত ৷ রুটিও করেছে কখানা ৷ আজিজ স্নান করে পোশাক পরিচ্ছদ পরে বসলো খাওয়ার জায়গায় ৷ একটি থালায় খাবার তুলেছে ৷ আলো আজিজের থালাতেই একসঙ্গে খাবে বলে ৷ আজিজ খেতে বসলো ৷ আলোও বসলো ৷ আজিজ ভাত মুখে তুলে একবার খেয়ে আর একবার খেতে যাবে এমন সময় বলল, কই আমাকে খাইয়ে দাও ৷ আজিজ মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইলো ৷ আধ মিনিট বিরতির মতো ভাব আজিজের ৷ আবার হঠাৎ আলোর ডাকে ধ্যান আসলো, কই দাও ৷ দেবে না ৷ আজিজ নিজে হাতে ভাত মেখে আলোকে খাইয়ে দিলো ৷ দুজনেই খাওয়ার কাজ শেষ করলো ৷ কিন্তু আলো একবারটিও নিজে তুলে খাই নি ৷ আজিজ খাওয়ার পর পুকুরের ধারের মাচায় গিয়ে বসলো ৷ ওদিকে আলো টাকাগুলি গুনে গুনে দুই জায়গায় রাখলো ৷ একটি স্থায়ী কোষাগার ৷ একটি অস্থায়ী কোষাগার ৷ হ্যাঁ কোষাগারই বটে ৷ এইভাবে প্রতিদিনই চলতে থাকলো আজিজের সব্জীর ব্যাবসা ৷ সব্জীচাষ আরো বাড়ালো ৷ আলো কিছু টাকা দিয়ে একটা পাঠি ছাগল কিনেছে ৷ দু তিনটে বাধাঁয় মুরগি কিনেছে ৷ খাঁচার মধ্যেই থাকে তারা ৷ আলো বিড়ি বাঁধতে জানত, তাই আজিজকে দিয়ে শহর থেকে বিড়ির পাতা মশলা আনিয়েছে ৷ নিজে কিনে এনে হাটে বিক্রয় করবে ৷ তেমন একটা কারো সঙ্গে আড্ডা দেয় না ৷ নিজের কাজ নিয়েই পড়ে থাকে ৷

এন.কে.মণ্ডল

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট